জোটের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন উদ্ধবই। ছবি: পিটিআই।
বিরোধটা ছিল মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি নিয়ে। শিবসেনা চেয়েছিল ৫০:৫০ সমীকরণ। জোটসঙ্গী বিজেপি তাতে রাজি হয়নি। ফলে তিন দশকের জোটশরিক বিজেপির হাত ছেড়ে দিয়েছিল সেনা। মহা-নাটক শেষে শিবসেনা কিন্তু সেই মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতেই। এবং ৫০-৫০ সমীকরণে নয়, নয়া জোটসঙ্গী এনসিপি-কংগ্রেস তাদের পূর্ণ সময়ের জন্যই ওই কুর্সি ছেড়ে দিল। এই সমীকরণে ভর করে মঙ্গলবার রাজ্যপালের কাছে সরকার গড়ার আবেদন করেছে কংগ্রেস, এনসিপি এবং শিবসেনার জোট।
সরকার গড়ার দাবি নিয়ে রাজভবনে যাওয়ার আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুম্বইয়ের ট্রাইডেন্ট হোটেলে যৌথ বৈঠকে বসেন শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেসের নেতারা। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে ‘মহা বিকাশ আঘাডি’ জোটের নেতা এবং আগামী পাঁচ বছরের জন্য মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে উদ্ধব ঠাকরের নাম পাশ হয়। বৈঠক শেষে এ দিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শরদ পওয়ার বলেন, ‘‘মহা বিকাশ আঘাডির তিন প্রতিনিধি আজ রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করবেন।’’ এর পরই গতি পায় মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া। কিছু ক্ষণের মধ্যেই রাজভবনে পৌঁছে যান কংগ্রেস, এনসিপি এবং শিবসেনার সম্মিলিত শক্তি ‘মহা বিকাশ আঘাডি’ জোটের নেতারা। উদ্ধব ঠাকরেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ঘোষণা করে রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়াড়ির হাতে সরকার গড়ার আবেদনপত্র তুলে দেন তাঁরা। আগামী ২৮ নভেম্বর অর্থাৎ বৃহস্পতিবার শিবাজি পার্কে অনুষ্ঠিত হবে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। সেখানেই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন উদ্ধব ঠাকরে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও আমন্ত্রণ জানাতে চলেছে শিবসেনা।
Mumbai: Congress-NCP-Shiv Sena leaders arrive at the Raj Bhavan. Shiv Sena chief Uddhav Thackeray has been elected as the CM candidate of 'Maha Vikas Aghadi'. #Maharashtra pic.twitter.com/E6DLrviVP6
— ANI (@ANI) November 26, 2019
রাজ্যপালের কাছে সরকার গঠনের আবেদনপত্র জোট নেতাদের
এ দিন বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ‘মহা বিকাশ আঘাডি’ জোটের ছবিটা যেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, তেমনই একটু একটু করে যেন আলোক বৃত্তের বাইরে সরে যেতে হয়েছে মহারাষ্ট্রের বিজেপি শিবিরকে। দ্বিতীয় দফায় আশি ঘণ্টার মুখ্যমন্ত্রিত্ব। সরকার গঠনে ধাক্কা খাওয়ার পর, এ দিন সন্ধেয় দলীয় বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করেন দেবেন্দ্র ফডণবীস।
Mumbai: Meeting of BJP MLAs underway at the party's office. #Maharashtra pic.twitter.com/u4lgVYv5Zi
— ANI (@ANI) November 26, 2019
১৯৬৬ সালে শিবসেনার প্রতিষ্ঠা করেন বাল ঠাকরে। তার পর থেকে এই প্রথম ঠাকরে পরিবারের কেউ মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন। কংগ্রেস এবং এনসিপি-র সঙ্গে হাত মেলানোর সিদ্ধান্তও এই প্রথম। যৌথ বৈঠকে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করার প্রস্তাব পাশ হলে উদ্ধব বলেন, ‘‘রাজ্যের নেতৃত্বে বসতে পারব বলে কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি। সনিয়া গাঁধী-সহ বাকিদের ধন্যবাদ জানাই। একে অপরের উপর ভরসা রেখে গোটা দেশকে নতুন দিশা দেখাতে পেরেছি আমরা। ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ যে মহারাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা-ই গড়ে তুলব আমরা।’’
শরদ পওয়ার-সহ তিন দলের নেতাদের সঙ্গে উদ্ধব ঠাকরে। ছবি: পিটিআই।
আরও পড়ুন: খোঁচালেই বিপদ, বুঝিয়ে দিলেন স্ট্রংম্যান থেকে কামব্যাক ম্যান হয়ে ওঠা শরদ পওয়ার
মহারাষ্ট্রে শেষমেশ গণতন্ত্রের জয় হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন উদ্ধব। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা যে দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন, তা গ্রহণ করলাম আমি। কিন্তু আমি একা নই, আমার সঙ্গে আপনারা সকলেই মুখ্যমন্ত্রী। আজ যা ঘটল, এটাই আসল গণতন্ত্র। এক জোট হয়ে রাজ্যের কৃষকদের চোখের জল মোছার চেষ্টা করব আমরা।’’ ১৯৬৬ সাল থেকে অপেক্ষা। ২০১৯-এ মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রিত্বের পদে ঠাকরে পরিবারের কোনও সদস্য। এ দিন আবেগ চেপে রাখতে পারেননি পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ উদ্ধব। বৈঠক থেকে ‘মাতুশ্রী’তে ফিরেই বাল ঠাকরের ছবিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তিনি।
‘মাতুশ্রী’তে বাল ঠাকরের ছবিতে শ্রদ্ধা নিবেদন উদ্ধবের।
মুখ্যমন্ত্রী পদে উদ্ধবের নাম ঠিক হয়ে গেলেও, তাঁর ডেপুটি কে বা কারা হবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি এখনও পর্যন্ত। তবে এনসিপি এবং কংগ্রেস থেকে মোট দু’জনকে উপ মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে বলে জল্পনা রাজনৈতিক মহলে। সেই দৌড়ে এখনও পর্যন্ত কংগ্রেসের বালাসাহেব থোরাট এবং এনসিপি-র জিতেন্দ্র কোলাম্বাকর এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। আবার শরদ ঘনিষ্ঠ জিতেন্দ্র অওহদকেও উপ মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন: মহা-নাটকের যবনিকা পতন, রাজ্যপালের কাছে ইস্তফা দিয়ে এলেন দেবেন্দ্র ফডণবীস
অন্য দিকে, দিন চারেক আগে বিদ্রোহী বিধায়কদের নিয়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে উপ মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেছিলেন যে অজিত পওয়ার, কাকা শরদ পওয়ারের অনুরোধে এ দিনই ইস্তফা দেন তিনি। তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিবসেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ দিন এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের বাড়ি ‘সিলভার ওকস’-এ চলে যান অজিত। তাঁকে অভ্যর্থনা জানান সুপ্রিয়া। বিদ্রোহের রং এখন বদলে গিয়েছে। তবে জোট সরকারে অজিতের কী ভূমিকা হবে, তা এখনও স্পষ্ট ভাবে জানা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy