রাজ্যে বিপুল জয়লাভের পর এ বার সর্বভারতীয় রাজনীতিতে নিঃশব্দে সক্রিয় হয়ে উঠছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আপাতত এক দ্বিমুখী রণকৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন ‘দ্বিতীয় অধ্যায়ের’ মমতা। এক দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তার সরকারের সঙ্গে রাজ্যের উন্নয়ন ও অন্যান্য প্রশাসনিক বিষয়ে সম্মুখসমরে না গিয়ে বরং একটা সমন্বয় তৈরি করা এবং ব্যক্তিগত স্তরে, এমনকী সংসদীয় কার্যকলাপেও সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছে তৃণমূল। আবার অন্য দিকে ক্রমবর্ধমান মোদী-বিরোধিতার রাজনৈতিক তাসটিকে সুনিপুণ ভাবে ব্যবহার করতেও চান মমতা। তাই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ সিংহ যাদব, এমনকী কংগ্রেসত্যাগী অজিত যোগীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি।
লোকসভা ভোট এখনও তিন বছর বাকি। কিন্তু দিল্লির রাজনীতিকদের বক্তব্য, আগামী বছরের গোড়ায় উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের পর জাতীয় রাজনীতি নতুন মোড় নিতে পারে। অখিলেশ যাদব বলেন, ‘‘বিহারের নির্বাচনী বিপর্যয় বিজেপি-কে হতাশ করেছিল। এর পর কংগ্রেসের হাত থেকে অসম ছিনিয়ে নিয়ে বিজেপি মনোবল কিছুটা ফিরে পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু উত্তরপ্রদেশে তাদের ব্যর্থতা অনিবার্য।’’ তাঁর দাবি, উত্তরপ্রদেশ বহু বার জাতীয় রাজনীতির অভিমুখ ঠিক করেছে। মোদী বিরোধী রাজনীতির নতুন অধ্যায় রচিত হবে বিধানসভা ভোটের পর। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের বক্তব্য, ‘‘রাজনীতি হল সম্ভাব্যতার শিল্পকলা (আর্ট অব পসিবিলিটি)। এই মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতি দোদুল্যমান অবস্থায়। ফলে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলকে নিয়ে কংগ্রেস জোট রাজনীতিতে সক্রিয় হবে, এটাই তো স্বাভাবিক।’’
রাজ্যে কংগ্রেস এবং সিপিএমের যে জোট হয়েছে সেটা যে লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত থাকবে সেটা দু’দলের শীর্ষ নেতৃত্বই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। ফলে মমতা এখন কোনও ভাবেই কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাবেন না। আবার জোটের বিরোধিতা করতে গিয়ে তিনি যে এনডিএ-তে সামিল হবেন না, সেটাও নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ভালই জানেন। কারণ, জোট প্রবল ভাবে চেষ্টা করা সত্ত্বেও রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটের অধিকাংশই মমতার সঙ্গে থেকে গিয়েছে। তার পর হিন্দুত্ববাদী একটা দলের সঙ্গে ওঠাবসা করার মতো হারাকিরি মমতা করতে পারেন না।
তাই একলা চলার নীতি নিয়েই আপাতত এগোবেন মমতা। পাশাপাশি জোটকে দুর্বল করতে সংসদের ভিতরে-বাইরে তীব্রতর করতে পারেন কংগ্রেস বিরোধিতা। তাঁর নির্দেশেই অগুস্তা-ওয়েস্টল্যান্ড কেলেঙ্কারিতে গাঁধী পরিবারের জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে সরব হয়ে রাজ্যসভা থেকে এক দিনের জন্য বহিষ্কৃত পর্যন্ত হয়েছিলেন সুখেন্দুশেখর রায়। সৌগত রায় এই প্রশ্নে কংগ্রেসকে সমর্থন করতে গেলে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তাঁর বক্তব্য ব্যক্তিগত।
সর্বভারতীয় রাজনীতির জল মাপতে খুব শীঘ্রই দিল্লি আসবেন মমতা। জুলাই মাসে সংসদের বাদল অধিবেশন। তখন বা তার আগেই দিল্লি আসতে পারেন তিনি। তখন কেজরীবাল তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেন। কথা হতে পারে অন্য আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গেও। কিন্তু তাই বলে বিজেপি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগের দরজা পুরোপুরি বন্ধ করে দেবেন না তৃণমূল নেত্রী। দিল্লির রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করাচ্ছেন, বিধানসভা ভোটে মোদী মমতার প্রতি যতটা আক্রমণাত্মক ছিলেন, মমতা কিন্তু পাল্টা ততটা ছিলেন না। ভোটে জেতার পরেই মমতা জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপির সঙ্গে তাঁর আদর্শগত মতপার্থক্য থাকবে। কিন্তু কেন্দ্রের সঙ্গে প্রশাসনিক স্তরে রাজ্য যথাসম্ভব সহযোগিতা করবে। জিএসটি বিলে মমতার সমর্থন এই সমন্বয়ের সবচেয়ে বড় নজির।
আবার বামেদের সঙ্গে জোটের প্রতি সনিয়া গাঁধী পূর্ণ সমর্থন দিলেও তাঁর সঙ্গে রাজনৈতিক বোঝাপড়ার রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ করার পক্ষপাতী নন মমতা। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, জোট নিয়ে কংগ্রেসের সর্বস্তরে যে সহমত আছে এমন তো নয়। ফলে অদূর ভবিষ্যতে না হলেও পরে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্কের পুর্নমূল্যায়ন হতে পারে। সে কথা স্বীকার করে কেরলের কংগ্রেস নেতা পি সি চাকোর মন্তব্য, ‘‘এই সম্ভাবনাটা তৃণমূলই বা কেন তড়িঘড়ি খারিজ করে দেবে!’’
কলকাতায় বসেই একদা জাতীয় রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন জ্যোতি বসু। দ্বিতীয় ইনিংসে দ্বিমুখী রণকৌশলে সেই স্থানটিই দখল করতে চাইছেন মমতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy