ডোলান্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
শুরুতেই ছন্দপতনের ইঙ্গিত। আর সেই সূত্রে প্রশ্নচিহ্ন পড়ে গেল বহু প্রতীক্ষিত ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তির উপরেও।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতের মাটিতে পা রাখতে আর দশ দিনও দেরি নেই। কথা ছিল, তার আগে দু’দেশের মধ্যে প্রস্তাবিত বাণিজ্য চুক্তির মূল সুরটি বাঁধতে ট্রাম্পের সফরের আগেই ভারতে আসবেন আমেরিকার বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইথিজ়ার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে তাঁর ওই প্রস্তাবিত সফর অনিশ্চিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, গত এক সপ্তাহে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে ফোনে একাধিক বার কথা হয়েছে রবার্টের। কিন্তু তাতে দু’দেশের মধ্যে কাঁটা হয়ে থাকা সমস্যাগুলির সমাধানসূত্র বেরোয়নি। তার উপরে শোনা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্টের সফর শুরুর আগে এ দেশে না-ও আসতে পারেন তিনি। সেই কারণেই ধোঁয়াশা বাড়ছে দু’দেশের বাণিজ্য চুক্তি ঘিরে।
কারণ, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের যে সমস্ত বিষয় নিয়ে ভারত এবং আমেরিকার মতানৈক্য রয়েছে, আগেভাগে সেগুলি না-মিটলে ট্রাম্প এ দেশে থাকাকালীন বাণিজ্য চুক্তি সই হওয়া শক্ত। তাই অনেকে মনে করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের সময়ে যদি কোনও ছোট মাপের বাণিজ্য চুক্তিও করতে হয়, তা হলে আগেভাগে তার খসড়া চূড়ান্ত করতে রবার্টের ভারত সফর জরুরি ছিল। এখন রবার্টের সফর ঘিরে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা তাই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনাকেও।
কে কী চায়
দিল্লির প্রত্যাশা
ভারতীয় ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের উপরে শুল্ক প্রত্যাহার মার্কিন মুলুকে ভারতীয় বহু পণ্যের বিনা শুল্কে ঢোকার সুবিধা বহাল গাড়ি, গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইঞ্জিনিয়ারিং ও কৃষিজাত পণ্যের খোলা বাজার
মার্কিন চাহিদা
কৃষিজাত পণ্য, ডেয়ারি, চিকিৎসা যন্ত্রের খোলা বাজার চিকিৎসা যন্ত্র ও ডিজিটাল পণ্যে বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহার
বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, জট কাটলে ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতে আসতে পারেন রবার্ট। নিদেনপক্ষে, ছোট মাপের কোনও বাণিজ্য চুক্তিও না-হলে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বড় ধাক্কা খেতে পারে বলে ওয়াশিংটনে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প প্রশাসনের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া সংক্রান্ত সহ-সচিব অ্যালিস ওয়েলসও। কিন্তু তাতেও জট কাটছে না। ২০১৮-১৯ সালে ভারত থেকে আমেরিকায় রফতানির অঙ্ক ৫,২৪০ কোটি ডলার। কিন্তু এ দেশে মার্কিন রফতানি ৩,৫৫০ কোটি ডলারের। দু’য়ের ফারাক (ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি) আগের তুলনায় কমলেও তা আরও কমাতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু দু’পক্ষের মধ্যে চুক্তি না হলে তা বাস্তবায়িত হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এর মধ্যেই এই সপ্তাহের গোড়ায় ভারতের নাম নিজেদের উন্নয়নশীল দেশের তালিকা থেকে সরিয়ে চিনের সঙ্গে তাকে উন্নত দেশের তকমা দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুনতে ভাল লাগলেও এতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকে। কারণ, উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় আমেরিকা, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মতো অনেক জায়গায় কৃষিতে ভর্তুকির মতো কিছু ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা মেলে। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরেই ট্রাম্প অভিযোগ তুলছিলেন যে, ভারত এখন বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম শক্তি। জি-২০ গোষ্ঠীর সদস্য। তা হলে এখনও উন্নয়নশীল দেশের তকমা এখনও গায়ে সেঁটে থাকার সুবাদে বাড়তি সুবিধা তারা ভোগ করবে কেন? এখন ওই তালিকা থেকে আমেরিকা ভারতকে ছেঁটে ফেলায় অসুবিধার আশঙ্কা করছে শিবসেনা। এতে ভারতীয় ব্যবসায়ী ও চাষিদের সমস্যা হবে বলে দলীয় মুখপত্রে তাদের দাবি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে ঐকমত্যে পৌঁছনো আরও কঠিন হচ্ছে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করায়। ভোট মাত্র ন’মাস দূরে হওয়ায় মার্কিন শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মন জয়ে মরিয়া ট্রাম্প। ভারতকে কিছু দেওয়ার পরিবর্তে তাই নিজের দেশের জন্য সফর থেকে কিছু নিয়ে যাওয়ার বাড়তি তাগিদ রয়েছে তাঁর। উল্টো দিকে, ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতির জেরে রাজস্বে ভাটা আর স্বদেশি লবির চাপে ভারতের বাজারের দরজা এখন হাট করা কঠিন দিল্লির পক্ষে।
ট্রাম্প-মোদী সাক্ষাতের প্রেক্ষাপটকে তাই খুব একটা মসৃণ দেখাচ্ছে না এখনও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy