পরিস্থিতি যদি প্রতিকূল হয়, তা হলে সুদূর সমুদ্রগর্ভ থেকেও যেন ভারত পরমাণু হামলা চালাতে পারে প্রতিপক্ষের ভূখণ্ডে। সেই লক্ষ্যেই প্রস্তুত থাকতে চায় নৌসেনা। ছবি: সংগৃহীত।
অত্যন্ত দ্রুত নৌসেনার শক্তি বাড়াতে উদ্যোগী হল ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। জোর দেওয়া হল সাবমেরিন বহরের আকার বৃদ্ধিতে। জার্মানি, রাশিয়া, স্পেন, সুইডেন, ফ্রান্স, জাপান— এই ছ’টি দেশের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে দ্রুত সাবমেরিনের সংখ্যা বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ডিজেল-ইলেকট্রিক অ্যাটাক সাবমেরিনের সংখ্যা বাড়ানো তো হবেই, পাশাপাশি নিউক্লিয়ার সাবমেরিনের সংখ্যাও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। পরিস্থিতি যে প্রতিকূল হতেই পারে, সে কথা ধরে নিয়েই চিন এবং পাকিস্তানে একসঙ্গে পরমাণু হামলা চালানোর সক্ষমতা রাখতে চায় ভৌরতীয় নৌসেনা। নিউক্লিয়ার সাবমেরিনের সংখ্যাবৃদ্ধিতে জোর সেই কারণেই।
মোট ২৮টি সাবমেরিন হাতে রাখতে চাইছে ভারতীয় নৌসেনা। তার মধ্যে ১৮টি ডিজেল-ইলেকট্রিক অ্যাটাক সাবমেরিন, ৬টি নিউক্লিয়ার পাওয়ার্ড অ্যাটাক সাবমেরিন এবং ৪টি নিউক্লিয়ার পাওয়ার্ড সাবমেরিন। কিন্তু সব মিলিয়ে ভারতীয় নৌসেনার হাতে সাবমেরিনের সংখ্যা এই মুহূর্তে ১৫টি— ১৩টি ডিজেল ইলেকট্রিক অ্যাটাক সাবমেরিন, ২টি নিউক্লিয়ার পাওয়ার্ড সাবমেরিন।
ভারতের হাতে এখন যে ডিজেল-ইলেকট্রিক অ্যাটাক সাবমেরিনগুলি রয়েছে, সেগুলির মধ্যে ৯টি কেনা হয়েছিল রাশিয়ার কাছ থেকে। ৪টি কেনা হয়েছিল জার্মানির কাছ থেকে। এই সাবমেরিনগুলির বয়স অনেকটাই। মাঝে এই সব ডুবোজাহাজের কিছু আধুনিকীকরণ এবং মেরামতি হয়েছে। কিন্তু কয়েক বছর পর থেকে ধাপে ধাপে সেগুলিকে অবসরে পাঠিয়ে দিতে হবে।
রাশিয়া এবং জার্মানির কাছ থেকে যে ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিনগুলি কিনেছিল ভারত, কয়েক বছর পর থেকে সেগুলি একে একে অবসরের দিকে যাবে। তাই আবার নতুন সাবমেরিন তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
যে ২টি নিউক্লিয়ার সাবমেরিন ভারতের রয়েছে, তার মধ্যে প্রথমটি হল আইএনএস চক্র— ২০১২ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে ১০ বছরের লিজে এই নিউক্লিয়ার সাবমেরিনটি এনেছে ভারত। অর্থাৎ ২০২২ সাল পর্যন্ত এই সাবমেরিন ভারতীয় নৌসেনার হাতেই থাকবে। দ্বিতীয়টি হল আইএনএস অরিহন্ত— ভারতের নিজের তৈরি নিউক্লিয়ার সাবমেরিন। আইএনএস চক্রের চেয়েও শক্তিশালী, প্রতিপক্ষের রেডারকে ফাঁকি দেওয়ার সক্ষমতাও বেশি।
এর বাইরে ভারত-ফ্রান্স যৌথ উদ্যোগে তৈরি স্করপেন ক্লাসের ২টি সাবমেরিন ইতিমধ্যেই প্রস্তুত। আইএনএস কলবরী এবং আইএনএস খান্ডেরি নামে ওই দুই স্করপেন সাবমেরিন পরীক্ষামূলক ভাবে সমুদ্রে ঘোরাফেরাও শুরু করেছে। এ বছরই সে দু’টিকে নৌসেনার অন্তর্ভুক্ত করার কথা। স্করপেন ক্লাসের আরও ৪টি সাবমেরিন তৈরি হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে ভারতের নিজের দ্বিতীয় নিউক্লিয়ার সাবমেরিন আইএনএস অরিদমনও।
কয়েক বছর পর থেকে যেমন একে একে পুরনো সাবমেরিনগুলো অবসর নিতে শুরু করবে, তেমন নতুন সাবমেরিনগুলোও একে একে নৌসেনায় কমিশনড হবে। অর্থাৎ ভারতের সাবমেরিন বহর আচমকা আকারে ছোট হয়ে যাবে এমন নয়। কিন্তু চিন এবং পাকিস্তানকে একসঙ্গে টক্কর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে সাবমেরিন বহরের আকার দ্রুত বাড়িয়ে নিতে চাইছে ভারত। সেই কারণেই অত্যন্ত দ্রুত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সাবমেরিন তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
ফ্রান্সের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে মোট ৬টি স্করপেন ক্লাস ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন ভারত তৈরি করছে। ওই শ্রেণির ২টি সাবমেরিন ইতিমধ্যেই সি ট্রায়াল শুরু করেছে। ছবি: সংগৃহীত।
নেভাল গ্রুপ-ডিসিএনএস (ফ্রান্স), থাইজেনক্রুপ মেরিন সিস্টেমস (জার্মানি), রসোবোরোনেক্সপোর্ট রুবিন ডিজাইন ব্যুরো (রাশিয়া), নাভানিতা (স্পেন), সাব (সুইডেন), মিৎসুবিশি-কাওয়াসাকি হেভি ইনডাস্ট্রিজ কমবাইন (জাপান)— এই ছ’টি সংস্থার কাছে ইতিমধ্যেই ‘রিকোয়েস্ট ফর ইনফরমেশন’ (আরএফআই) পাঠিয়েছে ভারত। গত সপ্তাহেই এই আরএফআই পাঠানো হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংস্থাগুলির তরফে জবাব আসবে। তার ভিত্তিতে ভারত আবার ‘রিকোয়েস্ট ফর প্রোপোজাল’ (আরএফপি) পাঠাবে। সেই চিঠি পাওয়ার পর সংস্থাগুলির কাছ থেকে ভারতের কাছে প্রস্তাব আসবে এবং তার ভিত্তিতে সাবমেরিন তৈরির প্রক্রিয়া এগোবে।
আরও পড়ুন: পর্বত নাড়ানো যায়, লাল ফৌজকে না: দিল্লিকে ফের হুমকি বেজিঙের
নৌসেনা সূত্রের খবর, সমুদ্রগর্ভে লুকিয়ে প্রতিপক্ষের ভূখণ্ডে আচমকা আঘাত হানার ক্ষমতা বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিনগুলি থেকে যাতে ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল ছোড়া যায় এবং সাবমেরিনগুলি যাতে ভারতে তৈরি বিভিন্ন অস্ত্র অনায়াসে ব্যবহার করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে বলা হবে বিদেশি সাবমেরিন নির্মাতা সংস্থাগুলিকে। নিউক্লিয়ার সাবমেরিনগুলি থেকে দূরপাল্লার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ব্যবস্থা রাখতে বলা হবে, যাতে প্রয়োজন পড়লেই চিন ও পাকিস্তানকে অনেক দূর থেকে অনায়াসেই নিশানা বানানো যায়। সমুদ্রগর্ভে লুকিয়ে প্রতিপক্ষের ভূখণ্ডে পরমাণু হামলা চালানোর সক্ষমতা ভারতের রয়েছে। আইএনএস অরিহন্ত সে কাজে অত্যন্ত দক্ষ। কিন্তু ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সেই সক্ষমতা ভারত আরও অনেক বাড়িয়ে নিতে চাইছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy