Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
TMC

হিমঘরেই পুঞ্চি কমিশন রিপোর্ট, তোপ তৃণমূলের

তৃণমূল নেতার বক্তব্য, পুঞ্চি কমিশনের প্রস্তাবগুলিকে পাকাপাকি ভাবে বিশ বাঁও জলে পাঠানো কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দিষ্ট কৌশল প্রসূত। প্রস্তাবগুলি খেয়াল করলেও তা বোঝা যাবে।

picture of Sukhendu Sekhar Roy.

তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। ফাইল চিত্র।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:২৮
Share: Save:

কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরই সরব হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিভিন্ন সময়ে তাঁর মুখে শোনা গিয়েছিল, ‘সহযোগিতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা’-র কথা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের অভিযোগ, সে ছিল শুধু কথার কথা। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, রাজ্যপালের নিয়োগ, ক্ষমতা বেঁধে দেওয়া এবং অপসারণ, রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো, রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার মতো বিভিন্ন বিষয়ে পুঞ্চি কমিশনের (সারকারিয়ার পরে কেন্দ্র দ্বারা নিযুক্ত কমিশন) প্রস্তাবগুলি ফেলে রেখেছে কেন্দ্র।

গত ১০ বছরে ৮ বার এ নিয়ে সংসদে লিখিত প্রশ্ন করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। শেষ প্রশ্নটি করা হয়েছে সদ্যসমাপ্ত সংসদের বাজেট অধিবেশনে। তৃণমূলের বক্তব্য, এই কমিশনের রিপোর্ট হিমঘর থেকে বার করতে চাইছে না নরেন্দ্র মোদী সরকার।

অবশ্য শুধু মোদী সরকারই নয়, ২০১০ সালের মার্চ (কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়ে) থেকে ২০১৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত চার বছর ইউপিএ সরকারের দ্বিতীয় দফার মেয়াদেও এই কমিশনের প্রস্তাবগুলি নিয়ে জল গড়ায়নি। সে সময়ে মনমোহন সরকার টু-জি, কমনওয়েলথের মতো নানা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে নাজেহাল ছিল।

তৃণমূলের দাবি, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক খতিয়ে দেখতে ২০০৭ সালে গঠিত হওয়া পুঞ্চি কমিশনের প্রস্তাবগুলি বিস্ফোরক। গত তেরো বছর (কমিশন রিপোর্ট পেশ করে ২০১০-এ) ধরে প্রস্তাবগুলি নিয়ে উচ্চবাচ্য করছে না কেন্দ্র। গত দশ বছরে বিভিন্ন সময়ে বিষয়টি নিয়ে সংসদে ৮ বার প্রশ্ন করে ইতিবাচক উত্তর না-পাওয়ার পরে, তৃণমূলের সর্বোচ্চ স্তরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য। প্রয়োজনে অন্য বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরও এই নিয়ে একজোট করার চিন্তা রয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। সব মিলিয়ে পুঞ্চির রিপোর্টকে অদূর ভবিষ্যতে কেন্দ্র-বিরোধী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।

২০০৭ সালের এপ্রিলে ইউপিএ-র প্রথম দফার সরকার সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মদনমোহন পুঞ্চির নেতৃত্বে এই কমিশন তৈরি করে। কমিশন খুব দ্রুতই (২০১০ সালের মার্চ) ২৭২টি প্রস্তাব-সহ সাত খণ্ডে তার রিপোর্ট জমা দেয়। ঘটনা হল ২০১০ সালের মে থেকে ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুখেন্দুশেখর রায় এই কমিশনের প্রস্তাবগুলির ভবিষ্যৎ জানতে চেয়ে মোট আটটি লিখিত প্রশ্ন করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে। উত্তরে কেন্দ্র প্রথমে জানায় তারা এই কমিশনের রিপোর্ট সম্পর্কে প্রত্যেকটি রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের মতামত চেয়ে পাঠিয়েছে। তার পরে বলা হয়, এই মতামতগুলি আন্তঃরাজ্য পরিষদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সুখেন্দুর বক্তব্য, “শুধুমাত্র রাজ্যগুলির মতামত চেয়ে সেটি আন্তঃরাজ্য পরিষদের সচিবালয়ে পাঠাতেই ২০১০ থেকে ২০১৬ কেটে যায়! তার পরে বলা হয় এই পরিষদের স্থায়ী কমিটি বিষয়টিকে চূড়ান্ত করে পরিষদকে দেবে। ২০১৮ সালে জানানো হয় এই স্থায়ী কমিটি সুপারিশগুলি খতিয়ে দেখছে। আন্তঃরাজ্য পরিষদের পরবর্তী বৈঠকে তা পেশ করা হবে। ২০২১-এ ফের প্রশ্ন করায় বলা হয় তারা ফের রাজ্যগুলির নতুন মতামত জানতে চাইছে, কারণ মাঝে সময় অনেকটা পেরিয়ে গিয়েছে। আবারও ২০২৩–এ একই প্রশ্ন করি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা জানান! ব্যাপার স্পষ্ট। কেন্দ্র বিশেষ কারণে পুঞ্চি কমিশনের রিপোর্টকে হিমঘর থেকে বার করে আনতে চান না।”

তৃণমূল নেতার বক্তব্য, পুঞ্চি কমিশনের প্রস্তাবগুলিকে পাকাপাকি ভাবে বিশ বাঁও জলে পাঠানো কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দিষ্ট কৌশল প্রসূত। প্রস্তাবগুলি খেয়াল করলেও তা বোঝা যাবে। কমিশন বলছে, রাজ্যে রাজ্যপালের ভূমিকাকে সীমিত করতে হবে। কোনও ব্যক্তিকে রাজ্যপাল পদে নিয়োগের আগে তাঁকে দু’বছর যে কোনও স্তরের রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে। তৃণমূলের বক্তব্য, কমিশনের রিপোর্ট কার্যকরী হলে তথাগত রায় ত্রিপুরার রাজ্যপাল হতে পারতেন না। কমিশনের আরও প্রস্তাব, রাজ্যপাল নিয়োগে সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে মান্যতা দিতে হবে। রাজ্যপালের নিয়োগের জন্য একটি কমিটি গঠন করতে হবে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও থাকবেন। রাজ্যপালকে সরাতে হলে রাজ্যের বিধানসভার প্রস্তাব পাশই যথেষ্ট। পাশাপাশি রাজ্যে নির্দেশিকা পাঠানো, আধাসেনা পাঠানো, কথায় কথায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারির মতো সাংবিধানিক ধারার যাতে কেন্দ্র অপব্যবহার করতে না পারে সে সব বিষয়েও প্রয়োজনীয় সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। কমিশনের প্রস্তাব, যুগ্ম তালিকায় থাকা কোনও বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি হলে, রাজ্য সরকারকে চুক্তির প্রক্রিয়ায় সঙ্গে রাখতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Central Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy