সংসদের বাজেট অধিবেশনের বাকি দিনগুলিতে এপিক কার্ডের পাশাপাশি আধার কার্ড জাল করা নিয়েও সরব হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, গোটা বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস যথেষ্টই পিছনের পায়ে। এই অধিবেশনে গোড়া থেকেই বিরোধী রাজনীতির রাশ নিজেদের হাতে রেখেছে বলেই আজ দাবি করেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
তৃণমূল তথা বিরোধীদের তোলা একই এপিক নম্বরে একাধিক ভোটার কার্ডের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আগামী মঙ্গলবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার বৈঠক ডেকেছেন। বৈঠকে থাকবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব, আধার কমিশনের সিইও, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রকের সচিব এবং কেন্দ্রীয় আইনসচিব। তার আগে, অর্থাৎ সোমবারের বাজেট অধিবেশনে এপিক কার্ড নিয়ে মুখর থাকবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। আজ দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও'ব্রায়েন জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে অনেক নোটিস জমা পড়েছে সংসদের দুই কক্ষে। তবে সংসদের সব কাজ মুলতুবি করে না হলেও তাঁরা চাইছেন, যে কোনও ধারায় (স্বল্পমেয়াদি আলোচনা) বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার অনুমতি দিক সরকার। শুধু এপিক কার্ড নয়, তার সঙ্গে আধার কার্ড নকলের প্রসঙ্গটিও নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া স্মারকলিপিতে লিখেছিল তৃণমূল। এ বিষয়ে তাদের কথাও হয়েছিল জ্ঞানেশ কুমারের সঙ্গে।
২৭ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইনডোরে তৃণমূলের সভায় মমতা একাধিক উদাহরণ দিয়ে ওই অভিযোগ তোলেন। তার পরে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে যায়। কমিশনকে দেওয়া স্মারকলিপিতে তৃণমূল লিখেছিল, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি না উত্থাপন করা পর্যন্ত কেন বছরের পর বছর ধরে বিষয়টি চেপে রাখা হয়েছিল?’ তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব সূত্রে আজ দাবি, এই বিষয়ে তৃণমূল অন্য সব বিরোধী দলের সঙ্গে গোড়া থেকেই সমন্বয় তৈরি করে এগিয়েছে। কংগ্রেসও পরে তৃণমূলের দেখানো রাস্তাতেই চলতে বাধ্য হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, বিরোধী জোটের নেতৃত্বের প্রশ্নে ক্রমশ পিছনের দিকে হাঁটছে কংগ্রেস।
এর আগে শীতকালীন অধিবেশনে বিরোধীদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই অম্বানীর বিষয়টি তুলে রীতিমতো মুখ পুড়েছিল রাহুল গান্ধী এবং তাঁর দলের, এমনটাই আজ ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এ বার তৃণমূল গোড়া থেকেই কৌশলগত ভাবে এপিক কার্ডের বিষয়ে সঙ্গে নিয়েছে এসপি, উদ্ধবপন্থী শিবসেনা, আপ, এনসিপি-র মতো দলগুলিকে। একমাত্র ডিএমকে আসন পুনর্বিন্যাসের বিষয়টিকে নিয়ে নিজেরা আলাদা করে প্রতিবাদ জানিয়েছে সংসদের ভিতরে।
রাজনৈতিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, সরকার পক্ষের কিছু নেতা ও সাংসদ ‘ব্যাক চ্যানেল’ আলোচনায় বিরোধী নেতাদের কাছে স্বীকার করেছেন, বিষয়টির গুরুত্ব রয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। কিন্তু সরকারি নেতৃত্ব এই নিয়ে স্বল্পমেয়াদি আলোচনার সুযোগ সংসদে দেবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)