২০১৯ সালের বাঘ শুমারির ফল দেখাচ্ছে, মানসে বাঘের সংখ্যা এখন ৫২।
সংরক্ষণের কাজে গ্রামবাসীদের যুক্ত করা, অরণ্য-নির্ভর মানুষদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা, সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো, প্রাণীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া— মূলত এই পাঁচটি পদক্ষেপের সফল রূপায়ণেই মানসে বাঘের সংখ্যা বেড়ে পাঁচ গুণ হয়েছে। মাত্র ন’বছরের মধ্যে! বন দফতর, বিটিসি প্রশাসন ও পশুপ্রেমী সংগঠন হাত মিলিয়ে কাজ করার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
‘ক্যামেরা ট্র্যাপিং’ নিয়ে কাজ করা বাঘ বিশেষজ্ঞ ফিরোজ আহমেদ জানান, বড়ো আন্দোলনের জেরে যেমন মানস গন্ডারহীন হয়ে পড়েছিল, তেমনই শেষ হয়ে গিয়েছিল অন্যান্য মূল্যবান বন্যপ্রাণ। পরে মানস ধীরে ধীরে সংরক্ষণের আওতায় ফিরে এলে ২০১০ সালে যে শুমারি হয়, তাতে মানস ও আশপাশের জঙ্গল মিলিয়ে বড় জোড় ১০-১৫টি বাঘের সন্ধান মিলেছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের বাঘ শুমারির ফল দেখাচ্ছে, মানসে বাঘের সংখ্যা এখন ৫২।
বড়োভূমির অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল অনিন্দ্য স্বরগয়ারি জানান, সকলের মিলিত প্রয়াসেই এত অল্প সময়ে এই অসাধ্য সাধন করা গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সম্প্রতি মানস ব্যাঘ্র প্রকল্প ও জাতীয় উদ্যানের সঙ্গে যে ৩৬০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা সংযোজিত হয়েছে, সেখানেও দু’টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মিলেছে। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল এ এম সিংহের কথায়, “সরকার, গ্রামের মানুষ ও পশুপ্রেমীদের যৌথ উদ্যোগে মানস তার পূর্বের গরিমা ফিরে পেয়েছে। একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়া অরণ্য এত দ্রুত এমন সমৃদ্ধ হয়ে ওঠার ঘটনা দেশেও বিরল।”
বড়োভূমিতে থাকা মানস ১৯৭২ সালে ব্যাঘ্র প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত হয়। ১৯৮০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সন্ত্রাসে বিধ্বস্ত হয়েছে এই অরণ্য। জাতীয় উদ্যান ছিল রক্ষীহীন। জঙ্গলে গন্ডার, বাঘ, হরিণ সবই শেষ হয়ে গিয়েছিল। মানসের ঐতিহ্যক্ষেত্রের তকমাও বিপন্ন তালিকাভুক্ত করে দেয় ইউনেসকো।
বড়ো চুক্তির পরে স্থিতাবস্থা ফেরে বড়োভূমিতে। ২০১০ থেকে আরণ্যক, ডব্লুডব্লুএফ, ডব্লুটিআই উদ্যানে প্রাণী সংরক্ষণের কাজে হাত লাগায়। এক সময়ের জঙ্গিদেরই প্রশিক্ষণ দিয়ে বনরক্ষী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। আশপাশের গ্রামের মানুষের জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি বিভিন্ন বিকল্প রোজগারের ব্যবস্থা করে দেয়, যাতে তাঁরা শিকার বা অরণ্য ধ্বংস না-করেন। বনকর্মীদের পাশাপাশি এসএসবিও নজরদারি চালায় অরণ্যের আশপাশের এলাকায়। ২০১১ সালে মানস তার ঐতিহ্যক্ষেত্রের সম্মান ফিরে পায়।
অনিন্দ্যবাবু জানান, জঙ্গলে নিরাপত্তা বাড়া, দৌরাত্ম্য কমা ও সর্বোপরি খাদ্য প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ভুঁইয়াপাড়া, বাঁশবাড়ি, পানবাড়ি রেঞ্জ মিলিয়ে এক দশক আগের তুলনায় এখন মানসে রয়্যাল বেঙ্গলের সংখ্যা পাঁচ গুণ হয়েছে। ফিরোজের নেতৃত্বে মানসে নিয়ম করে ক্যামেরা পাতার কাজ হয়। ফলে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে বাঘেদের চিহ্নিত করা ও গণনা করার কাজ সম্ভব হয়েছে। মানসের অনেক বাঘ নিয়মিত ভুটানের জঙ্গলেও যাওয়া-আসা করে।
বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পাহাড় ও নদী, মানসের জঙ্গলের অর্ধেক অংশ ভুটানে। প্রয়োজনের তুলনায় রক্ষী ও পরিকাঠামো এখনও অনেক কম। প্রচার, পর্যটন ও সংরক্ষণের সিংহভাগ আলো ও রসদই কাজিরাঙা কেড়ে নেয়। কিন্তু তার মধ্যেও মানসে ফিরেছে গন্ডার। সংরক্ষণ হয়েছে পিগমি হগ, হিসপিড হেয়ার, বেঙ্গল ফ্লোরিক্যানের মতো বিপন্ন পশু-পাখি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy