নরেন্দ্র মোদী।
মুখে মাস্ক, মাথায় টুপি, গায়ে পিপিই, পায়ে শু’কভার— গোটা শরীর জীবাণুনাশক পোশাকে মুড়িয়ে আজ বিমানযোগে দেশের তিনটি প্রতিষেধক গবেষণাকেন্দ্র ঘুরে দেখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রথমে গেলেন আমদাবাদের জ়াইডাস ক্যাডিলা সংস্থায়। সেখান থেকে হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেক ও সবশেষে পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট।
প্রথম দু’টি সংস্থা দেশীয় ভাবে করোনার প্রতিষেধক তৈরির কাজে নিযুক্ত। আর সিরাম মূলত ভারতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা সংস্থার তৈরি কোভিশিল্ড প্রতিষেধকের উৎপাদনের দায়িত্বে রয়েছে। আজ ওই সফরের মাধ্যমে এক দিকে সাধারণ মানুষকে প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, করোনা বিরুদ্ধে দেশের গবেষকদের লড়াইয়ের দিকে সম্পূর্ণ নজর রয়েছে তাঁর। অন্য দিকে মন্দায় যাওয়া দেশের শিল্প-বাণিজ্য মহলকেও আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন যে, খুব দ্রুত প্রতিষেধক আসতে চলেছে।
আজ সকাল সাড়ে ন’টায় নিজের রাজ্য গুজরাতের আমদাবাদ থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে চানগোধরে জ়াইডাস ক্যাডিলার প্রতিষেধক তৈরি কেন্দ্রে পৌঁছে যান মোদী। বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে ঘুরে প্রতিষেধক তৈরির বিভিন্ন ধাপগুলি প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে দেন গবেষকরা। সংস্থা জানিয়েছে, ডিএনএ নির্ভর ওই প্রতিষেধকটি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। আজ প্রতিষেধক সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির কর্তা বিনোদ কুমার পলের কথায়, আগামী মাসেই তৃতীয় পর্বের প্রয়োগ শুরু করবে ওই সংস্থা। ছয় মাসের মধ্যে ওই প্রতিষেধক বাজারে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মোদীর সফরের দ্বিতীয় কেন্দ্রটি ছিল হায়দরাবাদ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে ভারত বায়োটেক সংস্থা। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এর সাহায্যে ওই সংস্থাও সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধক তৈরি করেছে। বর্তমানে মানবদেহে তৃতীয় পর্যায়ের প্রয়োগ-পরীক্ষা চলছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানান কর্তৃপক্ষ। আগামী বছরের মার্চ-মে মাসের মধ্যে কোভ্যাক্সিন বাজারে চলে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। সংস্থার দাবি, তাদের প্রতিষেধকের দাম সবথেকে কম হবে।
ভারত বায়োটেকে প্রায় এক ঘণ্টা কাটিয়ে মোদী যান পুণের সিরাম ইনস্টিটিউটে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা যে কোভিশিল্ড প্রতিষেধক তৈরি করেছে, তা ভারতের বাজারে ছাড়তে সিরামের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তারা। প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, বর্তমানে কোভিশিল্ডও প্রয়োগের তৃতীয় পর্যায়ে আছে। পরে সাংবাদিক সম্মেলনে সিরাম সংস্থার সিইও আদার পুনাওয়ালা বলেন, ‘‘সংস্থা তাদের ক্ষমতা বাড়িয়ে ১০০ কোটি ডোজ় উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’ তিনি দাবি করেন, তাঁদের সংস্থা দু’সপ্তাহের মধ্যে কোভিশিল্ডের জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চাইতে চলেছে। যার ভিত্তিতে আগামী জানুয়ারির মধ্যে পুণের কেন্দ্রে প্রায় ১০ কোটি কোভিশিল্ড তৈরি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন তাঁরা। পুনাওয়ালার কথায়, ‘‘পুণেতে যে কোভিশিল্ড উৎপাদন হবে তা মূলত ভারতেই ব্যবহার করা হবে। জুলাই মাসের মধ্যে ৩০-৪০ কোটি ডোজ় আমরা সরকারকে সরবরাহ করব বলে আমাদের ধারণা।’’
আরও পড়ুন: করোনায় দৈনিক মৃতের সংখ্যা ফের বাড়ল রাজ্যে, ঊর্ধ্বমুখী সুস্থতার হার
আজ প্রধানমন্ত্রী এই সফরের মাধ্যমে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন যে, করোনার বিরুদ্ধে প্রতিষেধক আসা এখন সময়ের অপেক্ষা। সেই কাজ যাতে দ্রুত হয় এবং প্রতিষেধক যাতে প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছে পৌঁছয় সে দিকে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে নজর রাখছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টুইট, ‘‘এই মুহূর্তে ভারত করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের নির্ণায়ক পর্যায়ে রয়েছে। দেশবাসীর কাছে প্রতিষেধক পৌঁছে দেওয়ার প্রশ্নে আমাদের গবেষকদের প্রস্তুতি কেমন, কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি তাঁরা হচ্ছেন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী তা সরাসরি জানতে ওই তিন কেন্দ্র ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।’’ মোদী নিজেও তিনটি কেন্দ্র ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা টুইট করেন, গবেষকদের অভিনন্দন জানান।
আরও পড়ুন: নয়া পালক রাজ্যের মুকুটে, পুরস্কৃত তন্তুজ
আজ শিল্প-বাণিজ্যমহলকেও মোদী বার্তা দিতে চেয়েছেন বলে মনে করছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, প্রতিষেধকের আশায় ভারত-সহ বিশ্বের বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। শেয়ার সূচক ঊর্ধ্বমুখী। আজ প্রধানমন্ত্রী নিজে গিয়ে বোঝাতে চাইলেন যে, প্রতিষেধক আর বেশি দিন অধরা নয়। কারণ অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকার যতই আর্থিক ত্রাণ দিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করুন কেন, আসল জিয়নকাঠি হতে চলেছে প্রতিষেধকই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy