Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus in India

বছর জুড়েই সঙ্কোচনের আশঙ্কা অর্থনীতিতে

কারখানা হোক বা নির্মাণ শিল্প, হোটেল হোক বা পরিবহণ, যেখানে বেশি মানুষের রোজগার হয়, সেখানেই অর্থনীতির সঙ্কোচন সব থেকে বেশি।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৩৫
Share: Save:

মোদী সরকার যতই বলুক, দ্রুত অর্থনীতির পুনরুত্থান হবে, প্রায় কেউই তা মানতে নারাজ।

অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসেই জিডিপি-র প্রায় ২৪ শতাংশ সঙ্কোচন হয়েছে। আজ স্টেট ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস, গোটা অর্থ বছরে জিডিপি-র ১০ শতাংশের বেশি সঙ্কোচন হবে। নোমুরা, কোটাক-এর মতো মূল্যায়নকারী সংস্থারও একই মত। অধিকাংশ আর্থিক সংস্থাই আগে যতখানি খারাপ ছবি আশঙ্কা করেছিল, প্রথম তিন মাসের হাল দেখে এখন আরও বেশি খারাপ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছে।

আরও চিন্তার কারণ হল, কারখানা হোক বা নির্মাণ শিল্প, হোটেল হোক বা পরিবহণ, যেখানে বেশি মানুষের রোজগার হয়, সেখানেই অর্থনীতির সঙ্কোচন সব থেকে বেশি। এমনিতেই বেকারত্ব ও যথেষ্ট সংখ্যায় নতুন চাকরির অভাব নিয়ে মোদী সরকার বিরোধীদের নিশানার মুখে। এখন দেখা যাচ্ছে, গত বছরের এপ্রিল-জুনের তুলনায় এ বছরের এপ্রিল-জুনে উৎপাদন শিল্পের বহর প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। নির্মাণ, হোটেল-পরিবহণ ক্ষেত্রের প্রায় অর্ধেকটাই উবে গিয়েছে। খনিতেও সঙ্কোচন প্রায় ২৫ শতাংশ। অথচ এই ক্ষেত্রগুলিতেই সব থেকে বেশি মানুষের চাকরি হয়। পরিসংখ্যান বলছে, সরকারি খরচ ও কৃষি বাদ দিলে জিডিপি-র সঙ্কোচন প্রায় ৩৫ শতাংশ।

শিল্পমহল থেকে অর্থনীতিবিদ, সকলেরই দাবি, কেন্দ্র আরও অর্থ ঢালুক। কারণ, সাধারণ মানুষ রুটিরুজি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে শিল্পমহল নতুন লগ্নিও করছে না। এখন উপায় একটাই। সরকারি খরচ বাড়ানো। সরকার আরও বেশি সড়ক-সেতু তৈরি করলে বা সরাসরি আমজনতার হাতে নগদ টাকা তুলে দিলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

সঙ্কোচনের পূর্বাভাস*

স্টেট ব্যাঙ্ক ১০.৯%

নোমুরা ১০.৮%

ক্রেডিট সুইস ৮%

কোটাক ইনস্টিটিউশনাল ইক্যুইটিজ ১১.৫%

ডয়েশে ব্যাঙ্ক ৮%

এইচএসবিসি ৭.২%

বার্কলে’জ ৬%

*প্রথম ত্রৈমাসিকের নিরিখে গোটা অর্থবর্ষের জন্য

দেশের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কে ভি সুব্রহ্মণ্যম আজ মেনে নিয়েছেন, কেনাকাটা ও লগ্নির অভাব সরকারি খরচই পূরণ করতে পারে। এর আগে এশিয়ার আর্থিক সঙ্কটের সময়ে পরিকাঠামোয় খরচ বাড়িয়েই আর্থিক বৃদ্ধিতে গতি এনেছিল অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকার।

কিন্তু প্রশ্ন হল, রাজস্ব আয় কমে যাওয়ায় যখন সরকারের রাজকোষেই টান, তখন সরকার খরচ বাড়াবে কী ভাবে?

সুব্রহ্মণ্যম আজ ফের দাবি করেছেন, অর্থনীতির খারাপ সময় এখন অতীত। অর্থনীতি যে ভাবে দ্রুত গতিতে খাদে নেমেছে, তেমনই দ্রুতবেগে উঠে আসবে। উদাহরণ হিসেবে আজই প্রকাশিত অগস্ট মাসের উৎপাদন শিল্পের সূচক তুলে ধরছে অর্থ মন্ত্রক। গত মাসে উৎপাদন শিল্পে ফের বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রথীন রায় এই দাবি মানতে নারাজ। তাঁর মতে, অর্থনীতি খাদের কতটা গভীরে নেমেছে, সেটাই আসল। ফলে অর্থনীতি ধীরে ধীরে, অনেক যন্ত্রণা দিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে। রথীনের দাবি, সরকারি খরচ বাড়ানোর অর্থ জোগাড় করা কঠিন কাজ নয়। দরকার পরিকল্পনা। তাঁর মতে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কেন্দ্র বা রাজ্যগুলিকে নগদের অভাব মেটানোর জন্য যে অগ্রিম দেয়, সেই তহবিল থেকে কেন্দ্র টাকা নিতে পারে। দুই, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ব্যাঙ্কের জমা রাখা অর্থ কেন্দ্র ঋণ নিতে পারে। তাতে ব্যাঙ্ক সুদ পাবে। কিন্তু ধার শোধ করার কোনও সময়সীমা থাকবে না।

বণিকসভা সিআইআই-এর ডিজি চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, অর্থ বছরের প্রথমার্ধে নড়বড়ে অবস্থা থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে সরকারি খরচ ও সুদ নীতির সাহায্যে অর্থনীতির আরোগ্য আশা করা যায়। কিন্তু স্থানীয় স্তরে লকডাউন এড়ানো গেলে ভাল। যাতে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথে বাধা না আসে।

কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা আজ ফের অভিযোগ করেছে, নোট বাতিলের সময় থেকেই অর্থনীতির দুর্দশা শুরু হয়েছে। রাহুল গাঁধী বলেন, ‘‘নোট বাতিল থেকে অর্থনীতির ধ্বংসের কাজ শুরু হয়েছিল। তার পর থেকে সরকার একের পর এক ভুল নীতি নিয়ে চলেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in India Coronavirus Lockdown GDP Indian Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy