লখনউয়ে বিজেপির পরিবর্তন যাত্রার সমাবেশে। সোমবার।ছবি: পিটিআই
প্রত্যাশা ছিল, লখনউ থেকে উত্তরপ্রদেশকে নতুন বছরের উপহার দেবেন তিনি। তেমন কিছুই মিলল না। লখনউয়ে রমাবাই অম্বেডকর গ্রাউন্ডের কানায় কানায় ভরা সভা থেকে দেশবাসীর উদ্দেশে শুধু একটি প্রশ্ন আজ ছুড়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী! বললেন, ‘‘ওরা বলছে মোদী হটাও। আমি বলছি কালো ধন হটাও। ওরা বলছে মোদী হটাও। আমি বলছি দুর্নীতি হটাও। ...দেশবাসীকেই ঠিক করতে হবে কোনটি তাঁরা চান।’’
নোট-বাতিলের জেরে বিরোধীদের মিলিত আক্রমণের নিশানা এখন মোদী। উত্তরপ্রদেশের ভোটে মোদী তাই যাবতীয় দুর্নীতি ও কালো টাকার কারবারকে এক পাল্লায় চাপিয়ে তার উল্টো দিকে রাখলেন নিজেকে। ৪৬ বছর আগে অনেকটা এ ভাবেই কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের ‘সিন্ডিকেট’-এর আক্রমণের মুখে একক লডা়ইয়ে নেমে ইন্দিরা গাঁধী বলেছিলেন, ‘‘ওঁরা বলছেন ইন্দিরা হটাও। আমি বলছি গরিবি হটাও।’’ ইন্দিরার সেই গিরিবি হটানোর ডাকে ধুয়ে গিয়েছিলেন তাঁর বিরোধীরা। মোদীর সামনে অবশ্য দীর্ঘ লড়াই।
দেশবাসীর উদ্দেশে টিভি বার্তায় পরশু মোদী মানুষকে সুরাহা দেওয়ার বেশ কিছু প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। প্রত্যাশা ছিল, লখনউয়ের মহা-সভাতেও হয়তো মোদী উত্তরপ্রদেশের জন্যও একগুচ্ছ প্রকল্প বা মস্ত প্যাকেজ ঘোষণা করবেন। সে প্রত্যাশা পূরণ হল না। উত্তরপ্রদেশের ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার ঠিক আগে, মানুষের মন জিততে আজ কোনও রকম আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণার পথেই হাঁটলেন না মোদী। বাজি রাখলেন নিজেকে।
প্রত্যাশার পারদটা চড়িয়েছিল দলই। গোটা রাজ্য থেকে দলের কর্মী-সমর্থকদের লখনউয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। বারাণসীর সাংসদ মোদীকে ‘ইউপি-রই লোক’ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন অমিত শাহ। মোদী এসেছেন বেলা দু’টোয়। বেলা ১১টা থেকেই মাঠের উপরে বিমান দেখলেই রব উঠেছে মোদী-মোদী। দিনের শেষে গেরুয়া-বাহিনী ফিরেছে মোদীর ওই প্রশ্নটি সম্বল করে।
প্রশ্ন উঠছে, ভোট ঘোষণার আগে শেষ বলে ছক্কা হাঁকানোর সুযোগটা মোদী ছাড়লেন কেন? বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, কারণ দু’টি। • বিহার থেকে শিক্ষা। • মোদীর বর্ষশেষের বক্তৃতা নিয়ে সমালোচনা। ভোটের আগে বিহারে গিয়ে ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন মোদী। নীতীশ কুমার বলেছিলেন, ‘‘মোদী বিহারকে নিলামে তুলছেন।’’ এই অভিযোগও ওঠে, মোদীর প্যাকেজের সিংহভাগ অর্থ এমনিতেই রাজ্যের প্রাপ্য। সেই ভোটে বিহারে মুখ খুবড়ে পড়েন মোদী। বর্ষশেষের রাতে প্রসূতিদের জন্য ৬ হাজার টাকা ভাতার মতো বেশ কিছু ঘোষণা করেছেন মোদী। সেগুলিও পুরনো প্রকল্পের অংশ বলে অভিযোগ উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ চলছে, আমজনতার কাছে কল্পতরু সাজতে গিয়ে মোদী তাঁর অর্থমন্ত্রীর বাজেটটাই চুরি করেছেন। তাই আজ কৌশল বদলেছেন মোদী। আর একটি বিষয়ও আজ এড়িয়ে গিয়েছেন মোদী— সমাজবাদী পার্টির পারিবারিক কলহ। গত ক’দিন বিজেপি নেতারা অখিলেশ যাদবকে আক্রমণ করে মুলায়মের সমর্থন করছিলেন। অখিলেশ-শিবিরের নেতারা বলতে শুরু করেন, মুলায়ম, অমর সিংহরা বিজেপির কথায় চলছেন। এর পরেই বিজেপি নেতৃত্বের নির্দেশ যায়, কোনও পক্ষ না নিতে। আজ মোদী নিজেও ওই প্রসঙ্গে বিস্তারিত কিছু বলেননি। কংগ্রেস, বসপা, সপা-কে একই সঙ্গে বিঁধে বলেছেন, “উত্তরপ্রদেশে এক দলের নামগন্ধই নেই। গত ১৫ বছর ধরে তারা নিজের ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যস্ত। এখনও তা হয়ে ওঠেনি। আর এক দল নিজেদের টাকাপয়সা কী ভাবে বাঁচাবে, তা নিয়ে ব্যস্ত। আর এক দল ব্যস্ত শুধু পরিবার নিয়ে।”
মোদী ভোট চেয়েছেন উন্নয়নের নামে। যা তাঁর পুরনো ও ভরসার অস্ত্র। বলেছেন, বিজেপি ক্ষমতায় নেই বলে গত ১৪ বছর উত্তরপ্রদেশের উন্নয়নও বনবাসে রয়েছে। মায়াবতীর দলিত ভোটকে নিশানায় রেখে ভীমরাও অম্বেডকরের জয়গানও গেয়েছেন। দাবি করেছেন, কেন্দ্র আড়াই বছরে অতিরিক্ত আড়াই লক্ষ কোটি টাকা দিলেও অখিলেশ সরকার কৃষকদের ফসলের দাম দেয় না। নোট বাতিলের জেরে জনতার, বিশেষ করে কৃষকদের ভোগান্তি নিয়েই বিরোধীরা এককাট্টা এখন মোদীর বিরুদ্ধে। ভোটে এর মাসুল দিতে হতে পারে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বিজেপিতে। সেই আশঙ্কা দূর করতেই মোদী বাজি রেখেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর লড়াইকে।
বিজেপি অন্তত একটা বিষয়ে খুশি। আজকের সভায় মাঠ ওপচানো ভিড়। যা দেখে বিজেপি রাজ্য সভাপতি কেশবপ্রসাদ মৌর্য দাবি করেন, “এই ভিড়েই স্পষ্ট, দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসছি।” একই কথা মোদীরও, “জীবনে এত বড় জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ হয়নি। ...হলফ করে বলতে পারি, এই ভিড় টিভিতে দেখলে অটলজির খুব আনন্দ হবে।’’ যদিও ভোটে এই ভিড় প্রতিফলিত হবে কি না নিশ্চিত নন কেশবপ্রসাদ, অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহরা। যে কারণে বার বার তাঁরা কাতর আবেদন জানিয়েছেন, একক গরিষ্ঠতা দেওয়ার জন্য। মরিয়া মোদীও। উত্তরপ্রদেশে ‘পরিবর্তন’ না এলে যে ২০১৯-এ তাঁর ‘প্রত্যাবর্তন’ আটকে যাবে, তা মোদীর থেকে ভাল আর কে জানেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy