নরেন্দ্র মোদী জমানায় সংখ্যালঘুদের উপরে একের পর এক আক্রমণের প্রসঙ্গ তুলে নেটমাধ্যমে সরব হয়েছেন অনেকে। প্রতীকী ছবি।
ধর্মান্তরণের অভিযোগ তুলে বড়দিনের প্রাক্কালে খ্রিস্টানদের উপরে একাধিক হামলার অভিযোগ উঠল। উত্তরাখণ্ডের পাশাপাশি গুজরাতেও ধর্মীয় বিদ্বেষের ঘটনা সামনে এসেছে। ছত্তীসগঢ়ে আদিবাসী খ্রিস্টানদের ভিটেছাড়া করার অভিযোগও সামনে এসেছে। এই ঘটনায় ফের বিতর্কের আঁচ দেশে। নরেন্দ্র মোদী জমানায় সংখ্যালঘুদের উপরে একের পর এক আক্রমণের প্রসঙ্গ তুলে নেটমাধ্যমে সরব হয়েছেন অনেকে।
ধর্মান্তরণের প্রক্রিয়া চলছে, এই অভিযোগ তুলে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর পুরোলা গ্রামে বড়দিনের অনুষ্ঠানে হামলা চালায় অন্তত ৩০ জনের একটি দল। হামলাকারীদের হাতে ছিল লাঠি। বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হতে ছ’জনকে আটক করেছে পুলিশ। ওই ছ’জনের মধ্যে রয়েছেন হামলাকারীদের তাণ্ডবে আক্রান্ত লাজ়ারাস কর্নেলিয়াস নামে এক যাজক এবং তাঁর স্ত্রী সুষমা। আক্রান্ত যাজক মুসৌরির ইউনিয়ন চার্চের সদস্য। তাঁরা বড়দিনের প্রার্থনায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন।
হামলাকারীদের দাবি, তারা একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্য। ওই সংগঠনের যাদের আটক করা হয়েছিল, পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশের দাবি, যাবতীয় ঝামেলার শান্তিপূর্ণ মীমাংসা হয়েছে।
বিজেপি শাসিত ওই রাজ্যে সম্প্রতি ধর্মান্তরণ-বিরোধী বিল বিধানসভায় আনে শাসক দল। সেই বিল পাশ হওয়ার পরে রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, এই প্রথম নয়, এর আগেও ওই রাজ্যে সংখ্যালঘু খ্রিস্টান ও মুসলিমদের উপরে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
অন্য দিকে গুজরাতের বরোদায় আক্রমণের মুখে পড়লেন সান্তাক্লজ় রূপী এক ব্যক্তি। আক্রান্ত ব্যক্তি মকরপুরার একটি কলোনিতে কয়েক জনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি চকলেট বিলি করছিলেন। কলোনির কয়েক জন আবাসিক ওই ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয় তুলে ধরে চকলেট বিলি নিয়ে আপত্তি জানান। এর পরেই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বচসার সূত্রপাত। তার জেরেই ওই ব্যক্তিকে আক্রমণ করা হয় বলে অভিযোগ।
স্থানীয় থানার ইনস্পেক্টর সোলাঙ্কি জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের ওই ঘটনার পরে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী কয়েক জন সেই রাতেই পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে নিরাপত্তার আর্জি জানান। সমস্ত রকম সাহায্যের আশ্বাস ওই ব্যক্তিদের দেওয়া হয়েছে বলে দাবি সোলাঙ্কির। এর পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, গন্ডগোলের ঘটনার কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।
বড়দিনের প্রাক্কালে ছত্তীসগঢ়ে খ্রিস্টান সম্প্রদাভুক্তদের উপরে হামলার ঘটনা বাড়ছে বলে এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহে নারায়ণপুর জেলায় শতাধিক আদিবাসী খ্রিস্টান ভিটে ছেড়েছেন বলে উল্লেখ রিপোর্টে। ছত্তীসগঢ় খ্রিস্টান ফোরাম জানিয়েছে,
নারায়ণপুরে মহিলা-সহ শতাধিক মানুষ স্টেডিয়ামে আশ্রয় নিয়েছেন। আরও বেশ কিছু জন গির্জা-সহ নানা জায়গায় থাকছেন। গত বুধবার ছত্তীসগঢ় খ্রিস্টান ফোরাম রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে খ্রিস্টানদের উপরে হামলার হিংসা রুখতে পদক্ষেপের আর্জি জানিয়েছে। আক্রান্ত আদিবাসী খ্রিস্টানেরা নারায়ণপুরের জেলাশাসকের অফিসের বাইরে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। ১৪টি গ্রামের প্রতিবাদীদের দাবি, ধর্মান্তরণের জন্য তাঁদের মারধর এবং ভিটেছাড়া করা হচ্ছে।
ধর্মের নামে রাজনীতির বিরুদ্ধে আজ সরব হয়েছেন বিএসপি প্রধান মায়াবতী। তিনি জানিয়েছেন, ধর্মান্তরণের জন্য যে ঝামেলা তৈরি করা হচ্ছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগের। বড়দিনে শুভেচ্ছার পাশাপাশি মায়াবতীর আশা, সমস্ত ধর্মের মানুষের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় থাকবে।
প্রসঙ্গত সংখ্যালঘুদের উপরে হামলার ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগে বিজেপি সাংসদ তেজস্বী সূর্য খ্রিস্টান ও মুসলিমদের ‘ঘর ওয়াপসি’র ডাক দিয়েছিলেন। তবে এই নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে নিজের বিবৃতি প্রত্যাহার করেছিলেন সূর্য।
সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ধর্ম সংসদে ঘৃণাভাষণ নিয়েও উদ্বেগ বেড়েছিল বিভিন্ন মহলে। হরিদ্বারের পাশাপাশি গাজ়িয়াবাদ এমনকি খাস রাজধানীর বুকেও সংখ্যালঘু বিদ্বেষী মন্তব্যের পরেও যতি নরসিংহানন্দদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে অনেকেই নরেন্দ্র মোদী জমানায় বুলডোজ়ার নীতি, গোমাংস ভক্ষণের প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিয়েছেন।
দেশে ঘৃণা-ভাষণের প্রবণতা বৃদ্ধি নিয়ে এর আগে সরব হয়েছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস। প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টও। কিন্তু পরিস্থিতির যে আদৌ বদল ঘটেনি উত্তরাখণ্ড-গুজরাত-ছত্তীসগঢ়ের ঘটনা তারই ইঙ্গিতবাহী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy