রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
তাঁর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার সময় থেকেই তাঁর অনুগামীরা তাঁকেই ‘মুখ’ হিসাবে তুলে ধরতে চাইছিলেন। কিন্তু সেই সময়ে রাহুল গান্ধী বার বার বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইটা মতাদর্শগত। সেখানে ‘মুখ’ হিসাবে তিনি একা নন। এটা সমগ্র দেশের লড়াই। সংবিধান বাঁচানোর লড়াই। কিন্তু লোকসভা ভোটের সলতে পাকানো যখন শুরু হয়ে গিয়েছে, পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটকে যখন অনেকেই দেশের ভোটের ‘সেমিফাইনাল’ হিসাবে দেখছেন, তখন রাহুলের একটি বক্তব্য নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। যে বক্তব্য শুনলে মনে হওয়ার অবকাশ থাকে যে, বিজেপির বিরোধী লড়াইয়ে নিজেকেই ‘মুখ’ হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন রাহুল।
তেলঙ্গানার ভোট প্রচারে গিয়ে রাহুল বলেছেন, ‘‘গোটা দেশ জানে, বিজেপির বিরুদ্ধে যদি কেউ লড়াই করে, ওদের মোকাবিলা করতে পারে, তা হলে তার নাম রাহুল গান্ধী।’’ ওয়েনাড়ের কংগ্রেস সাংসদ এ-ও বলেন, ‘‘বিজেপির বিরুদ্ধে এই লড়াই শুধু রাজনৈতিক লড়াই নয়। এটা আমার রক্ত আর ডিএনএ-র লড়াই।’’
पूरा देश जानता है कि अगर एक आदमी BJP के सामने खड़ा होता है, उनसे लड़ता है तो उसका नाम राहुल गांधी है @RahulGandhi
— Supriya Shrinate (@SupriyaShrinate) October 20, 2023
pic.twitter.com/4zJiZKJQDE
প্রসঙ্গত, চার মাস আগে কর্নাটক বিধানসভার ভোটেও রাহুল বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইকে ‘ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালবাসার দোকান খোলার লড়াই’ হিসাবে দেখাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দক্ষিণের আর এক রাজ্যের ভোটে যেন লোকসভা ভোটের লড়াইয়ের সমীকরণ দেখাতে চাইলেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি। রাহুলের কথায়, ‘‘আমি বিজেপির বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই করছি বলেই আমার বিরুদ্ধে ওরা ২৫টা মামলা দিয়ে রেখেছে। আমার সাংসদ পদ খারিজ করে দিয়েছিল। কারণ ওরা (পড়ুন বিজেপি) জানে, রাহুল গান্ধী মাথা নোয়াবে না।’’
তেলঙ্গানার শাসকদল ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস)। মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও দলের প্রধান। তিনি দাবি করেন, তাঁর দল বিজেপি-বিরোধী। কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’য় সামিল হয়নি বিআরএস। কারণ, সেখানে কংগ্রেস রয়েছে। আবার কংগ্রেসের দাবি, কেসিআরদের বিজেপি বিরোধিতা আসলে ‘মুখোশ’। তারা তলায় তলায় বিজেপিকেই সাহায্য করতে চায়। রাহুল বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে ২৫টা মামলা। কিন্তু তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীকে ইডি, সিবিআই ডাকে না!’’ যদিও কেসিআরের মেয়ে কবিতা রাওকে দিল্লির মদ কেলেঙ্কারির তদন্ত সূত্রে দিল্লিতে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। তবে ওই এক বারই।
অনেকের মতে, রাহুলের এই ‘আমিই মুখ’ বার্তা যতটা না বিজেপিকে, তার চেয়েও বেশি বিজেপি-বিরোধী দলগুলি জোট ‘ইন্ডিয়া’কে। সন্দেহ নেই, ‘ইন্ডিয়া’ভুক্ত দলগুলির মধ্যে কংগ্রেসই একমাত্র আক্ষরিক অর্থে সর্বভারতীয় দল। বাকি দলগুলি একটি, দু’টি বা তিনটি রাজ্যে সীমাবদ্ধ। তবে লোকসভা ভোটের আগে অনেক দলই কাউকে ‘মুখ’ করার বিরুদ্ধে। একটা সময়ে তৃণমূলের তরফেও এই বিরোধিতা ছিল। কিন্তু তা এখন অনেকটাই স্তিমিত। ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে রাহুলকে সম্বোধন করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন ‘আওয়ার ফেভারিট রাহুলজি’ (আমাদের প্রিয় রাহুলজি)। আবার কাকভোরে রাহুলের দিল্লির বাড়িতে বৈঠক করে এসেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সেই অবস্থান থেকে সরলেও অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টি এখনও কংগ্রেস-বিরোধিতা ছাড়তে পারেনি। এমনকি, মিজোরামের বিধানসভা ভোটেও সে রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতি ও সহ-সভাপতির আসনে প্রার্থী দিয়েছে আপ। অনেকের মতে, এই অংশকেই বার্তা দিতে চেয়েছেন রাহুল।
আবার অনেকের এ-ও বক্তব্য, কর্নাটকে যেমন কংগ্রেসের ‘মুখ’ ছিল, তেলঙ্গানায় তেমন শক্তপোক্ত কেউ নেই। একেবারে নেই তা নয়। কিন্তু তাঁরা কেউ সিদ্দারামাইয়া বা ডিকে শিবকুমারের মতো কার্যকরী নন। হতে পারে সে কারণেই রাহুল বিজেপি এবং কেসিআরের বিরুদ্ধে নিজেকেই তুলে ধরলেন। তবে কারণ যা-ই হোক, রাহুলের এ হেন ‘আত্মবিজ্ঞাপন’ সাম্প্রতিক সময়ে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মত অনেকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy