—প্রতীকী ছবি।
অজানা সংস্থা এবং ব্যক্তিদের মাধ্যমে নির্বাচনী বন্ড কিনে কোটি কোটি টাকা দান করেছে ভারতের একাধিক নামী সংস্থা। এমনটাই দাবি করছে স্বাধীন সাংবাদিকদের দ্বারা পরিচালিত ওয়েবসাইট ‘দ্য রিপোর্টার্স কালেক্টিভ’। নির্বাচনী বন্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করে ‘দ্য রিপোর্টার্স কালেক্টিভ’ দাবি করেছে, বিভিন্ন সংস্থা বা ব্যক্তি কোন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান দিয়েছে, তা-ও বিস্তারিত ভাবে খতিয়ে দেখার অবকাশ রাখে।
ওই ওয়েবসাইটের মতে, অন্ধ্রপ্রদেশের শাসকদল ওয়াইআরএস কংগ্রেসের সাংসদ আল্লা অযোধ্যা রামি রেড্ডির সঙ্গে ‘যুক্ত’ একটি সংস্থা নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকার বেশি অনুদান দিয়েছে। রেড্ডি রিয়েল এস্টেট এবং নির্মাণ সংস্থা ‘রামকি’ গোষ্ঠীর মালিক। ওই সংস্থার যেখানে অফিস, সেখানেই অফিস রয়েছে নির্মাণ সংস্থা ‘চেন্নাই গ্রিন উডস প্রাইভেট লিমিটেডের’। সেই নির্মাণ সংস্থাটি নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ১০৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। ২০২১ সালের জুলাই মাসে, আয়কর বিভাগ কর ফাঁকির অভিযোগে রামকি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল এবং ওই একই বছর থেকে ‘চেন্নাই গ্রিন উডস প্রাইভেট লিমিটেড’ও নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলে অনুদান দেওয়া শুরু করেছিল বলে ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
অম্বানীদের রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলে লিঙ্কডিনে দাবি করেছেন, এমন এক ব্যক্তি অনুদান
দাতাদের শীর্ষ তালিকায় রয়েছেন। ওই ব্যক্তির নাম লক্ষ্মীদাস বল্লভদাস বণিক। লক্ষ্মীদাসের লিঙ্কডিন প্রোফাইলে লেখা, তিনি রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর কর সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় দেখাশোনা করেন। নির্বাচনী বন্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে তিনি ২০২৩ সালের নভেম্বরে ২৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিলেন৷
তালিকা খতিয়ে দেখা যায়, বন্ড কেনায় শীর্ষে রয়েছে বিতর্কিত লটারি ব্যবসায়ী মার্টিন সান্তিয়াগোর সংস্থা ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’। তারা কিনেছে মোট ১,৩৬৮ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড। ২০১৯ সাল থেকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি অর্থ তছরুপ প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ) আইন ভাঙার অভিযোগে সান্তিয়াগোর সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। সংস্থাটির কোয়েম্বাত্তূর এবং চেন্নাই দফতরে তল্লাশিও চালানো হয়।
বন্ড কেনায় টাকার অঙ্কের নিরিখে তার পরেই রয়েছে বিখ্যাত তেলুগু ব্যবসায়ী কৃষ্ণা রেড্ডির সংস্থা ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’। তারা ৯৬৬ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড রাজনৈতিক দলকে অনুদান দিয়েছে। মূলত হায়দরাবাদ কেন্দ্রিক এই সংস্থা একাধিক সরকারি প্রকল্পের বরাত পেয়েছে।
মহারাষ্ট্রের ‘কুইক সাপ্লাই চেন প্রাইভেট লিমিটেড’ ৪১০ কোটি টাকার বন্ড কিনেছে। এই সংস্থার তিন অধিকর্তার এক জন রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর একাধিক সংস্থার অধিকর্তা পদে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। যদিও রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর এক মুখপাত্রের দাবি, ওই সংস্থার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই রিলায়্যান্সের।
‘দ্য রিপোর্টার্স কালেক্টিভ’-এর একটি প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯ সালের এপ্রিলে সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে আগে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে অস্বচ্ছ নির্বাচনী বন্ড নিয়ে প্রশ্ন করেছিল কোটাক সংস্থা। এর সাত মাস পরে কোটাক গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত সংস্থা ‘ইনফিনা ফাইন্যান্স প্রাইভেট লিমিটেড’ ৬০ কোটি টাকা দিয়ে নির্বাচনী বন্ড কিনেছিল।
নরেন্দ্র মোদীর জমানায় পরিচয় এবং অর্থের অঙ্ক গোপন রেখে রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দেওয়ার সুবিধা দেওয়া হয়েছিল নির্বাচনী বন্ডে। সেই ব্যবস্থার দায়িত্বে ছিল এসবিআই। কথা ছিল, কোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দিতে চাইলে, স্টেট ব্যাঙ্কের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অর্থের অঙ্কের বন্ড কিনে সংশ্লিষ্ট দলকে দেবেন। সেই অর্থ ভাঙিয়ে নেবে রাজনৈতিক দলগুলি। মূলত কালো টাকার লেনদেন রুখতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিল মোদী সরকার।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থাকে ‘অসাংবিধানিক’ এবং ‘ক্ষতিকারক’ আখ্যা দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকে (এসবিআই) নির্দেশ দেয় অবিলম্বে নির্বাচনী বন্ড বিক্রি বন্ধ করার জন্য। পাশাপাশি, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কতগুলি নির্বাচনী বন্ড বিক্রি হয়েছে, কোন কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনী বন্ড থেকে টাকা পেয়েছে— সেই সংক্রান্ত সব তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। ৬ মার্চের মধ্যে সেই তথ্য তুলে দেওয়ার কথা এসবিআইকে বলেছিল শীর্ষ আদালত।
তবে এই নির্দেশ কার্যকর করতে এসবিআই সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন জানায়। সোমবার সেই মামলায় এসবিআইয়ের আবেদন খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানায়, কোনও ভাবে আর অতিরিক্ত সময় দেওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ আরও জানিয়েছিল, নির্বাচন কমিশনকে ১৫ মার্চ বিকেল ৫টার মধ্যে তাদের সরকারি ওয়েবসাইটে বন্ড-তথ্য প্রকাশ করতে হবে। কত তারিখে কোন সংস্থা, কোন দল কত টাকার বন্ড কিনেছিল, তার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। যাতে দেশের অগ্রগণ্য বহু শিল্পগোষ্ঠীর নাম রয়েছে। প্রাপকদলের তালিকায় বিজেপি, কংগ্রেস, ডিএমকে, ওয়াইএসআর কংগ্রেস, তৃণমূল, শিরোমণি আকালি দল, বিআরএসের মতো দল রয়েছে। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (এসবিআই) তথ্য অনুযায়ী ২২ হাজার ২১৭টি বন্ড কেনা হয়েছিল। তার মধ্যে সব দল মিলিয়ে বন্ড ভাঙিয়েছে ২২ হাজার ৩০টি। কমিশন যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দাতা সংস্থার তালিকা ৩৩৭ পাতার। আর প্রাপক দলগুলির নামের তথ্য ৪২৬ পাতার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy