উল্টে গিয়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কামরা। ছবি: সংগৃহীত।
চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে দুর্ঘটনা ঘটেছে। অন্তত ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। ১৭৯ জনকে বালেশ্বরের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। দুপুর ৩টে ১৫ মিনিট নাগাদ শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে ১২৮৪১ আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর স্টেশন ছাড়ে বিকেল সওয়া ৫টায়। সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিট নাগাদ ট্রেনটি পৌঁছয় বালেশ্বরে। কাছেই বাহানগা বাজারের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ২৩ কামরার ট্রেনটি।
১৯৭৭ সালের ৬ মার্চ পথচলা শুরু হয়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেসের। ৪৬ বছরের যাত্রাপথে বহু বার বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে এই সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসকে।
২০০২ সালের ১৫ মার্চ, দুপুর ২টো ৪০ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর জেলায় হাওড়া-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ৭টি কামরা বেলাইন হয়েছিল। সে বার ১০০ জন যাত্রী জখম হয়েছিলেন।
২০০৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি, ওড়িশার জাজপুর কেওনঝড় রোডের কাছে বেলাইন হয় এই ট্রেন। কমপক্ষে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। দুর্ঘটনার সময় ট্রেনটির গতি ছিল ১১৫ কিমি প্রতি ঘণ্টা।
২০১২ সালের ১৪ জানুয়ারি, লিঙ্গরাজ স্টেশনের কাছে চেন্নাই-হাওড়া করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সাধারণ কামরায় আগুন লেগেছিল।
২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ওড়িশার গঞ্জাম জেলায় করমণ্ডলের ধাক্কায় ৬টি হাতির মৃত্যু হয়েছিল।
২০১৫ সালে ১৮ এপ্রিল, অন্ধ্রপ্রদেশের নিদাদাভলু স্টেশনে আগুন ধরে যায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। ট্রেনটির দু’টি বগি ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।
তবে, শুক্রবার যে ভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে করমণ্ডল, তা এই এক্সপ্রেসের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু করমণ্ডল এক্সপ্রেসই নয়, অতীতে দেশের বুকে একাধিক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাগুলি এক বার ফিরে দেখা হল—
বিহারে ট্রেন বিপর্যয়
১৯৮১ সালের কথা। সে বছর বিহারের সহরসার কাছে লাইনচ্যুত হয়েছিল একটি যাত্রিবাহী ট্রেন। সেতু পারাপারের সময় বেলাইন হয়ে বাগমতী নদীতে পড়ে গিয়েছিল ট্রেনটি। প্রায় ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তবে সরকারি ভাবে মৃতের সংখ্যা ২৩৫ বলা হয়েছিল। কী কারণে দুর্ঘটনা, তা জানা যায়নি। তবে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দুর্ঘটনা বলে দাবি করেছিলেন কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ দাবি করেছিলেন প্লাবনের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
ফিরোজাবাদে ট্রেন দুর্ঘটনা
১৯৯৫ সালে উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদের কাছে দিল্লিগামী পুরুষোত্তম এক্সপ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল কালিন্দী এক্সপ্রেসের। কমপক্ষে ৩৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গরুর সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর ব্রেক ফেল করেছিল কালিন্দী এক্সপ্রেসের। ওই রেলপথেই আসছিল পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস। তার জেরেই সংঘর্ষ ঘটে। খন্না ট্রেন বিপর্যয় ১৯৯৮ সালে পঞ্জাবের খন্নার কাছে কলকাতাগামী জম্মু তাওয়াই শিয়ালদহ এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ হয়েছিল ফ্রন্টিয়ার গোল্ডেন টেম্পল মেলের। দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
খন্না ট্রেন বিপর্যয়
১৯৯৮ সালে কলকাতাগামী জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেস লুধিয়ানার খন্নার কাছে লাইনচ্যুত হওয়া গোল্ডেন টেম্পল মেলের লাইনচ্যুত হওয়া বগিতে ধাক্কা মারে। এই দুর্ঘটনায় ২১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
গাইসল ট্রেন বিপর্যয়
১৯৯৯ সালে অসমে গাইসলের কাছে ২টি ট্রেনের সংঘর্ষ হয়েছিল। এর জেরে কমপক্ষে ২৯০ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। ২টি ট্রেনেরই গতি বেশি ছিল।
রাজধানী এক্সপ্রেস বিপর্যয়
হাওড়া-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস বেলাইন হয়েছিল ২০০২ সালে। গয়া এবং ডেহরি অন শোন স্টেশনের মধ্যে রফিগঞ্জ স্টেশনের কাছে বেলাইন হয়েছিল ট্রেনটি। মৃত্যু হয়েছিল ১৪০ জনেরও বেশি যাত্রীর।
ভালিগন্ডা ট্রেন বিপর্যয়
২০০৫ সালের ২৯ অক্টোবর, অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দরাবাদের দক্ষিণে ভালিগন্ডা শহরে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে ‘ডেল্টা ফাস্ট প্যাসেঞ্জার’ ট্রেন। এই দুর্ঘটনায় ১১৪ জন যাত্রীর মৃত্যু হয় আহত হন প্রায় ২০০ জন।
দুর্ঘটনায় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস
২০১০ সালের ২৮মে ঝাড়গ্রামের সর্ডিহার রাজাবাঁধ এলাকায় লাইনচ্যুত হয় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। সেই সময়ে ডাউন লাইনে উল্টো দিক থেকে আসা একটি মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের। এই রেল দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন মারা গিয়েছিলেন বলে খবর। দুর্ঘটনার নেপথ্যে যড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছিল।
সাইঁথিয়ায় ২ ট্রেনের সংঘর্ষ
২০১০ সালের ১৯ জুলাই বীরভূমের সাঁইথিয়ায় উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধেছিল বনাঞ্চল এক্সপ্রেসের। প্রায় ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
দুর্ঘটনায় হাম্পি এক্সপ্রেস
২০১২ সালের ২২ মে, অন্ধপ্রদেশের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হুবলি-বেঙ্গালুরু হাম্পি এক্সপ্রেস। ট্রেনটির চারটি বগি লাইনচ্যুত হয় এবং একটি বগিতে আগুন ধরে যায়। এই ঘটনায় ২৫ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন প্রায় ৪৩ জন।
ইনদওর-পটনা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা
২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর কানপুরের কাছে লাইনচ্যুত হয়েছিল ইনদওর-পটনা এক্সপ্রেস। কমপক্ষে ১৫০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
বেলাইন বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস
২০২২ সালের ১৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের ময়নাগুড়িতে লাইনচ্যুত হয়েছিল বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস। ৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy