মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে ছুটি নিয়ে বিদেশ থেকে উত্তরপ্রদেশের মেরঠে ভাড়াবাড়িতে ফিরেছিলেন মার্চেন্ট নেভি অফিসার সৌরভ রাজপুত। ৬ বছরের মেয়ে পিহু এবং স্ত্রী মুস্কান রস্তোগীকে নিয়ে একটি রেস্তরাঁয় গিয়েছিলেন সৌরভ। রেস্তরাঁয় খাওয়াদাওয়ার আগে স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে নাচানাচি করেন সৌরভ। খোলাচোখে সুখী সংসারের ছবি। যে কেউ মনে করবেন, দাম্পত্যজীবনে ভীষণ ভাল আছেন সৌরভ-মুস্কান। কিন্তু তখনও সৌরভ জানতেন না, তাঁকে খুন করতে আগেই নীলনকশা করে ফেলেছেন স্ত্রী এবং তাঁর প্রেমিক সাহিল শুক্ল! অন্য দিকে, ছোট থেকে অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখা মুস্কানকে দেখেও বোঝার উপায় ছিল না, কী ঘটাতে চলেছেন তিনি।
সৌরভ মেরঠে ফেরেন গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। মেয়ের জন্মদিন ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি। বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রকাশ, যে দিনের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে, (ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম) সেটি ২৮ ফেব্রুয়ারির। সে দিন রাতে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে একটি রেস্তরাঁয় যান সৌরভ। তিন জন নাচগান করেন। হাসিখুশি মুস্কানকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, তিনি এত বড় ষড়যন্ত্র করে ফেলেছেন। তদন্তে উঠে এসেছে, মুস্কান এবং সাহিল গত ৪ মার্চ গলা কেটে খুন করেন সৌরভকে। তার আগে সৌরভের খাবারে মেশানো হয়েছিল ঘুমের ওষুধ, যা নিজের ওষুধ হিসাবে কিনে এনেছিলেন মুস্কান। সৌরভকে খুনের পরে স্নানঘরে নিয়ে গিয়ে পনেরো টুকরো করেন সাহিল ও মুস্কান। তার পরে কিনে আনা নীল রঙের ড্রামে ১৫ টুকরো মাংস ভরে উপরে সিমেন্ট ঢেলে দেন।
গত বুধবার দু’জনকে আদালতে হাজির করানো হলে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। আদালতে আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন স্বামীকে খুনে অভিযুক্ত স্ত্রী ও তাঁর প্রেমিক। মৃত সৌরভের ভাই রাহুল রাজপুতের দাবি, বৌদির অভিনেত্রী হওয়ার শখ ছিল। নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মুস্কান। সে জন্য বাড়িও ছেড়েছিলেন। এ নিয়ে দাদা-বৌদির অশান্তি হত। তার পর থেকে বাড়ি ছেড়ে ভাড়াবাড়িতে চলে যান সৌরভ-মুস্কান।
আরও পড়ুন:
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, ২০২১ সালে স্ত্রীর পরকীয়ার কথা জানতে পেরে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেছিলেন সৌরভ। জেরায় মুস্কান জানিয়েছেন, সাহিলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তার অনেক আগে থেকে— ২০১৯ সালে। পরে মেয়ের কথা ভেবে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পথে হাঁটেননি সৌরভ। কিন্তু ২০২৩ সালে সৌরভকে এক বার খুনের চেষ্টা করেন মুস্কান ও সাহিল। সে বার ব্যর্থ হয়ে এ বার আগেভাগে ‘প্রস্তুতি’ নিয়ে রেখেছিলেন দু’জন। অন্য দিকে, সৌরভের মা রেণু দেবীর অভিযোগ, তাঁর ছেলেকে হত্যার কথা আগেই জানতেন মুস্কানের সৎমা। পরে ভেবেচিন্তে পুলিশি ঝামেলার কথা ভেবে মেয়েকে নিয়ে থানায় যান।