Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Muslim Women Alimony

খোরপোশ নিয়ে নানির দাবিই তো চার দশক পর মেনে নিল সুপ্রিম কোর্ট! বলছেন শাহ বানোর নাতি

শাহ বানোর লড়াই যখন শুরু হয়েছিল, তখন তাঁর বয়স বাষট্টি বছর। তিন পুত্র, দুই কন্যার মা শাহ বানোকে তালাক দেন তাঁর স্বামী মহম্মদ আহমেদ খান। কিন্তু স্ত্রীকে কোনও খোরপোশ দিতে রাজি হননি।

Representative Image

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ ০৮:০৭
Share: Save:

চার দশক পরে সুপ্রিম কোর্ট ফের ‘নানি’র দাবিই মেনে নিল। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর থেকে ফোনে এই কথাটাই বারবার বলছিলেন জ়ুবের আহমেদ। শাহ বানোর নাতি।

চার দিন আগে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, বিবাহবিচ্ছিন্ন মুসলিম মহিলারা ফৌজদারি কার্যবিধিতে খোরপোশের দাবি জানাতে পারবেন। আজ মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড তাদের কার্যকরী কমিটির বৈঠকের পরে দিল্লিতে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে যাবে। কিন্তু শাহ বানোর নাতি জ়ুবের বলছেন, ‘‘নানির মামলার সময় থেকেই সুপ্রিম কোর্ট মুসলিম মহিলাদের খোরপোশের পক্ষে রায় দিচ্ছে। কিন্তু বিবাদ মিটছে না।’’

শাহ বানোর লড়াই যখন শুরু হয়েছিল, তখন তাঁর বয়স বাষট্টি বছর। তিন পুত্র, দুই কন্যার মা শাহ বানোকে তালাক দেন তাঁর স্বামী মহম্মদ আহমেদ খান। কিন্তু স্ত্রীকে কোনও খোরপোশ দিতে রাজি হননি। শাহ বানো আদালতের দ্বারস্থ হন। প্রথমে নিম্ন আদালত, তার পরে মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট আহমেদকে খোরপোশ দিতে বললেও তিনি রাজি হননি। উল্টে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন। যুক্তি ছিল, মুসলিম পার্সোনাল আইন মোতাবেক তাঁর কোনও খোরপোশ দেওয়ার কথা নয়। ১৯৮৫ সালে ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট শাহ বানোর পক্ষে মত দিয়েছিল। কিন্তু মুসলিম সংগঠনগুলির চাপে রাজীব গান্ধীর সরকার নতুন আইন এনে সেই রায় খারিজ করে দেয়। চার দশক পরে ফের সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ ধারায় মুসলিম মহিলারা খোরপোশের দাবি জানাতে পারেন। এই রায়ের পরেই বিজেপি ফের মনে করিয়ে দিয়েছে, কংগ্রেস শাহ বানোর মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় মানেনি।

শাহ বানোকে যখন তাঁর স্বামী তালাক দেন, তখন তাঁর বড় মেয়ে সিদ্দিকিয়ার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সেই সিদ্দিকিয়ারই ছেলে জ়ুবের। তিনিও তাঁর নানি বা দিদার মতো সুপ্রিম কোর্টের রায়েরই পক্ষে। তাঁর যুক্তি, ‘‘শুধু শাহ বানো মামলায় নয়। সুপ্রিম কোর্ট এর আগেও মুসলিম মহিলাদের পক্ষে কথা বলেছে।’’ কিন্তু আজ মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের মুখপাত্র সৈয়দ কাসিম রসুল দিল্লিতে যুক্তি দিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় ইসলামের শরিয়ত আইনের বিরুদ্ধে। তাই বোর্ডের কার্যকরী কমিটি এর বিরুদ্ধে আদালতে যাবে।

কেন? রসুলের যুক্তি, ইসলাম বিয়ের পবিত্র বন্ধন রক্ষার পক্ষে। কোনও ভাবেই স্বামী, স্ত্রীর একসঙ্গে থাকা সম্ভব না হলে তবেই তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদের কথা বলা হয়েছে। যদি খোরপোশ দিতে হয়, তা হলে কোনও স্বামী তালাক দিতে চাইবেন না। ফলে তিক্ততা নিয়ে মহিলাকে সংসার করতে হবে। তাতে মহিলাদেরই সমস্যা বাড়বে।

মুসলিম পার্সোনাল বোর্ড যে মহিলাদের বিরুদ্ধে নয়, তা বোঝাতে আজ বোর্ডের মহিলা সদস্য মুনেসা বুশরা আবদিকে সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির করা হয়। মুম্বইয়ের কলেজশিক্ষিকা আবদি বলেন, ‘‘স্বামীকে সন্তানের জন্য খোরপোশ দিতেই হয়। এখানে শুধু স্ত্রীকে খোরপোশ দেওয়ার প্রশ্ন। কোনও স্বামী যদি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন, তা হলে কি তাঁর থেকে খোরপোশ নেওয়াটা মহিলার জন্য সম্মানের? সেটা তো ভিক্ষার মতো।’’ আবদির যুক্তি, অনেক মহিলা তালাকের পরে অন্য পুরুষকে বিয়ে করলেও আগের স্বামীর থেকে খোরপোশ নিয়ে চলেন। ফলে খোরপোশ ব্যবস্থার অপব্যবহারও হয়।

খোরপোশের মামলা ছাড়াও মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড আজ উত্তরাখণ্ডের অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিরুদ্ধেও মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বোর্ডের নেতাদের মতে, এই বিধি দেশের বৈচিত্রে আঘাত করছে। অযোধ্যার পরে বারাণসী, মথুরায় ফের মসজিদ-মন্দির বিতর্ক তৈরির সমালোচনা করে বোর্ড বলেছে, রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিবাদের পরে ১৯৯১ সালে তৈরি উপাসনাস্থল আইনে বলা ছিল, আর কোনও ধর্মস্থানের চরিত্র বদল করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্টকে সেই আইন কার্যকর করতে হবে। ভিড় জুটিয়ে মারধর বা ‘মব লিঞ্চিং’ নিয়ে বোর্ডের মুখপাত্র রসুল বলেন, “এই লোকসভা ভোটে ভোটাররা বিদ্বেষ, হিংসার মনোভাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। তার পরেও মব লিঞ্চিং-এর মামলা কমছে না।”

অন্য বিষয়গুলি:

Muslim Personal Law Supreme Court of India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE