অভিনেতা এন টি রাম রাও জুনিয়রের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রবিবার হায়দরাবাদে। ছবি পিটিআই।
‘‘দু’হাত তুলে গলা ছেড়ে বলুন— ‘ভারত মাতা কি জয়!’’ তেলঙ্গানার মুনুগোড়ে বিধানসভা উপনির্বাচনের জনসভায় এ ভাবেই বক্তৃতা শুরু করলেন অমিত শাহ। বক্তৃতার শুরুতে টেনে-টেনে এই স্লোগান। বক্তৃতার শেষেও। মাঝখানের সময়টায় বার বার কে চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর)-এর সরকার ফেলার ডাক দিলেন শাহ। সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে আসা তেলঙ্গানার বিধায়ক কে রাজাগোপাল রেড্ডি তাঁর এই সভাতেই বিজেপিতে যোগ দিলেন। উপনির্বাচনে তিনিই প্রার্থী। দু’আঙুলে তুড়ি বাজানোর ভঙ্গি করে শাহ বললেন, ‘‘এই উপনির্বাচনে রাজাগোপাল রেড্ডিকে জেতান। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, কেসিআরের দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার বিদায় নেবে!’’
স্থানীয় বিধায়ক রেড্ডির দলত্যাগ ও ইস্তফার জন্যই উপনির্বাচন হচ্ছে হায়দরাবাদ থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার দূরে নালগোন্ডা জেলার এই মুনুগোড়ে। বিজেপি-বিরোধী বিকল্প জোট গড়তে কেসিআর অতীতে সক্রিয় হলেও তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বিরোধী শিবিরে প্রশ্ন ছিল। কিন্তু এ বার কেসিআরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে বিধানসভা ভোটে জিতে আসার। গত কাল কেসিআর অভিযোগ তুলেছিলেন যে, কৃষকদের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়া বন্ধ করে দেবে বিজেপি। আর শাহের ছেলে জয়ের দিকে ইঙ্গিত করে কেসিআর-পুত্র কে টি রাম রাও টুইটারে খোঁচা দিয়েছিলেন, ‘নিজের প্রতিভায় বিসিসিআই সচিব হওয়া প্রথম সারির এক ক্রিকেটারের বাবা তেলঙ্গানায় আসছেন। তিনি পরিবারবাদ নিয়ে বক্তৃতা দেবেন।’ বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রাম রাও।
আজ শাহের দাবি, রাজাগোপাল রেড্ডির বিজেপিতে যোগদানের মধ্য দিয়েই কেসিআর জমানার শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা থেকে রাজ্যের কৃষকদের বঞ্চিত রেখে ‘পাপ’ করেছে টিআরএস সরকার। কেন্দ্রের দু’লক্ষ কোটি টাকা সাহায্য সত্ত্বেও তেলঙ্গানা ঋণে ডুবে গিয়েছে। কোনও দলিতকে মুখ্যমন্ত্রী করার আশ্বাসের পাশাপাশি দলিত, বেকার ও জনজাতিদের দেওয়া বহু প্রতিশ্রুতিই রাখেননি কেসিআর। জ্বালানি তেলে ভ্যাট কমাননি। এমআইএম-এর ভয়ে তেলঙ্গানার মুক্তি দিবসও পালন করেননি। শাহের আশ্বাস, আগামী নির্বাচনে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পাবে তেলঙ্গানা, যিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কাজ করবেন। রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে কৃষকদের প্রতিটি ধানের দানা কেনা হবে।
সঙ্গে দোভাষী থাকলেও হিন্দি বক্তৃতার ফাঁকে মাঝেমধ্যেই জনতার ‘জবাব’ আদায় করেছেন শাহ। কখনও বলেছেন, ‘‘বাজাও তালি!’’ কখনও আবার, ‘‘শুনতে পেলাম না ভাই, আরও জোরে বলুন।’’ মোদী জমানার গোড়ার দিককার সেই ‘মিত্রোঁ’ সম্বোধনও শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। রাতে ‘আরআরআর’ খ্যাত অভিনেতা এন টি রাম রাও (এনটিআর) জুনিয়রের সঙ্গে হায়দরাবাদে নৈশভোজ সেরেছেন শাহ। তাঁকে ‘তেলুগু ছবির রত্ন’ বলে দু’জনের ছবি টুইট করেছেন। শাহকে ধন্যবাদ দিয়েছেন জুনিয়রও।
তবে এই সাক্ষাতে নিছক সৌজন্য দেখছেন না অনেকেই। কারণ, এনটিআর জুনিয়র তেলুগু দেশম (টিডিপি)-এর প্রতিষ্ঠাতা এন টি রাম রাওয়ের নাতি। এ দিন মিডিয়া ব্যারন রামোজি রাওয়ের আমন্ত্রণে রামোজি ফিল্ম সিটিতে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন শাহ। শোনা যাচ্ছে, টিডিপি নেতা চন্দ্রবাবু নায়ডুর সঙ্গেও সাক্ষাৎ হতে পারে শাহের। সেই চন্দ্রবাবু, যিনি ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি-বিরোধী জোট গড়ায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। তখন কেসিআর বিকল্প জোটের কথা তুললেও তাঁকে বিজেপির ‘বি-টিম’ হিসেবে দেখেছিলেন প্রধান বিরোধীরা। কিন্তু এখন বিধানসভায় সেই কেসিআরের বিরুদ্ধে লড়তে কি এনডিএ-তে ফিরে আসবেন চন্দ্রবাবু? রামোজি-শাহ বৈঠকে সেই সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হয়ে থাকতে পারে বলেই কেউ কেউ মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy