শুধু বেসরকারি শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সরল করা নয়, সরকারি প্রকল্পের অধিগ্রহণ বাবদ খরচের বোঝা কমাতেও সক্রিয় হল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্র চাইছে রেল, সড়ক, প্রতিরক্ষা, এসইজেড, খনি-সহ ১৩টি ক্ষেত্রে সরকারি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি নতুন জমি আইনের বাইরে রাখতে। পাশাপাশি, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে জাতীয় স্তরে একটি নতুন পর্ষদ গঠন করার কথাও ভাবছে কেন্দ্র।
বিদায়ের ঠিক আগে জমি অধিগ্রহণ এবং সেই বাবদ পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত নতুন আইনটি পাশ করেছিল মনমোহন সিংহ সরকার। রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ে সংশ্লিষ্ট আইনে ক্ষতিপূরণের এমন সব শর্ত চাপানো হয়েছিল যে, তখন শিল্পমহল এবং সরকারের মধ্যে থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল। মূল আশঙ্কা ছিল, এর ফলে অধিগ্রহণ বাবদ খরচ এত বেড়ে যাবে যে, সরকারের পক্ষেই পরিকাঠামো উন্নয়ন মুশকিল হয়ে পড়বে।
কারণ ওই আইনে বলা হয়েছে, রেল, সড়ক, খনি, এসইজেড-সহ ১৩টি ক্ষেত্রে সরকারি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত পৃথক পৃথক আইনগুলি এক বছরের মধ্যে লোপ পাবে। তার পরে নতুন জমি আইনটিই সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। এই অবস্থায় ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি নতুন আইন পুরোপুরি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই সরকারি প্রকল্পে অধিগ্রহণ বাবদ খরচ একলাফে অনেকটা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিষয়টা কী রকম?
যেমন, বর্তমানে জাতীয় সড়ক বা রেল প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে জমির বাজার মূল্য ও তিরিশ শতাংশ অর্থ সোলাসিয়াম হিসেবে দেয় সরকার। কিন্তু নতুন জমি আইন সব ক্ষেত্রে কার্যকর হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে শহরে বাজার দরের দ্বিগুণ দর দিতে হবে, গ্রামে দিতে হবে চার গুণ। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এক কর্তা আজ বলেন, “এমনিতেই পরিকাঠামো প্রকল্পে টাকার টানাটানি। তার ওপর অধিগ্রহণ খরচ হঠাৎ বেড়ে গেলে বড় ধরনের সমস্যা হবে।”
এর পাশাপাশি, জমির মূল্য নির্ধারণের একটি নতুন সূত্রও কার্যকর করতে চাইছে মোদী সরকার। নতুন আইনে বলা হয়েছে, অধিগ্রহণের আগের তিন বছরে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সর্বোচ্চ যে দরে জমি বিক্রি হয়েছে, সেই হারকেই বাজার দর হিসেবে ধরতে হবে। এইখানেই একটি সংশোধন করতে চায় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। তাদের প্রস্তাব, প্রকল্প এলাকার সব চাষি যদি জমির একটি নির্দিষ্ট দাম নিতে সম্মত হন, তা হলে সেটাকেই বাজার দর হিসেবে ধরা যেতে পারে।
বস্তুত, জমি আইন সংশোধনের এক প্রস্ত প্রস্তাব ইতিমধ্যেই দিয়েছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ পাঠিয়ে বলা হয়েছে, শিল্পের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বর্তমান আইনে প্রস্তাবিত ৮০ শতাংশ চাষির সম্মতির পরিবর্তে ৫০ শতাংশ চাষির মত নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হোক। সেই সঙ্গে, সরকারি-বেসরকারি যৌথ প্রকল্পে চাষিদের কাছ থেকে সম্মতি নেওয়ার শর্তটাই তুলে দেওয়া হোক। ঠিক ছিল, মূলত এই দুই সংশোধন প্রস্তাব নিয়ে বাজেট অধিবেশনে একটি বিল আনবে সরকার।
মুশকিল হল, এর পরেও সরকারের বিভিন্ন দফতর ও শিল্প মহলের থেকে চাপ রয়েছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের ওপর। সকলেরই দাবি, জমি আইন আরও সরল করা হোক। শিল্প মহলের একাংশ চায়, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের টাকা পুরোপুরি দেওয়ার আগেই জমি অধিগ্রহণের এক্তিয়ার দেওয়া হোক, যাতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলার পাশাপাশিই প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেওয়া যেতে পারে। জমি অধিগ্রহণের আগে সামাজিক প্রভাব সংক্রান্ত সমীক্ষাও বাধ্যতামূলক ভাবে বন্ধের দাবি উঠেছে।
গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, জমি আইনে রাতারাতি এই সব বদল করতে গেলেই রাজনৈতিক বাধা আসবে। বিরোধীরা তো দূর, এ নিয়ে আরএসএসের অনুগামী কৃষক সংগঠনই সুর চড়িয়ে বসে আছে। তাই ঠিক হয়েছে বর্তমান আইনে যে হারে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার শর্ত রয়েছে, তাতে কোনও পরিবর্তন হবে না। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে প্রকল্পের কাজ শুরুর অনুমতিও দেওয়া হবে না। তবে সরকার একটি পুনর্বাসন পর্ষদ তৈরি করবে। ওই বোর্ড দ্রুত পুনর্বাসন দেওয়ার ব্যবস্থা ছাড়াও ঠিক করবে কোনও প্রকল্পে সামাজিক নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে কি না।
স্বভাবতই এই সব সংশোধন কৃষক স্বার্থের পরিপন্থী বলেই মনে করছে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। সংসদের ভিতরে-বাইরে তাদের বিরোধিতা সামলে মোদী সরকার কতটা মসৃণ ভাবে লক্ষ্যে এগোতে পারে, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy