উন্নাও। ফাইল চিত্র।
খুব খতরনাক জায়গা ম্যাডাম, সাধ করে কেউ যেতে চায় না ওখানে! আমি বাড়ি থেকে বেরনোর আগে হনুমান পুজো করে বেরিয়েছি।
স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখেই কথাগুলো বলে চলেছেন চালক। ন’মাস আগের কথা এ সব। লোকসভা ভোটের হাওয়া সবে গরম হতে শুরু করেছে। উন্নাও ধর্ষণ মামলা বলতে তখন কুলদীপ সেঙ্গারের মামলাকেই বোঝাত। কয়েক মাসের মধ্যে উন্নাও যে ধর্ষণ-রাজধানীর তকমা পেতে চলেছে, সেটা তখনও জানা ছিল না।
আগুনে পুড়ে মারা গেলেন যে মেয়েটি, তাঁর বাড়ি সিন্দুপুর। তার আগের ঘটনাটি ঘটেছিল মাখি গ্রামে। যা নাকি কুলদীপের খাসতালুক। সে বার মাখিই ছিল গন্তব্য। চালক নিজেও চেনেন না গ্রামটা। আগের দিন ফোনে বলেছিলেন, ‘পতা’ লাগিয়ে নেবেন। ‘পতা’ মিলল কি? চালক জানালেন, তাঁর এক আত্মীয় ওই গ্রামের পাশে থাকেন। তিনি জানেন সব। কিন্তু সবিস্তার জানাতে চাইছেন না। নির্যাতিতার বাড়ির খোঁজও দিতে চাইছেন না। খালি বলছেন, কুলদীপকে নিয়ে বেশি চর্চা করার দরকার নেই।
কুলদীপ সেঙ্গার তো জেলে! তা-ও এত ভয়? চালককে প্রশ্ন করি, উন্নাও খতরনাক কেন? নিজের ভাষায় বুঝিয়ে দেন, খুবই অপরাধপ্রবণ এলাকা। খুনখারাপি লেগেই আছে। ধর্ষণ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এক দিকে উন্নাও শিল্প তালুক। চামড়ার কাজ, রাসায়নিকের কাজ, মশারি তৈরির কারখানা। সেই গঞ্জ ছাড়িয়ে আরও বেশ কিছু দূর এগোলে বাঁ হাতে মাখি। থানা পেরিয়ে গ্রামে ঢোকার রাস্তা। স্থানীয় লোকজন বলেন, যে জমির উপরে থানা, সেটাও নাকি কুলদীপের। কথাটা সত্যি হতে পারে, নাও পারে। কিন্তু কুলদীপ বা কুলদীপের মতো লোকেদের প্রতাপ ওই এলাকায় কতটা, বুঝতে অসুবিধা হয় না। এলাকার লোকে অহোরাত্র দেখছেন, যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় আসার পরে ঠাকুররা আবার ‘ফণা তুলেছে’। তারা ধরে নিয়েছে, কেউ কিছু বলবে না।
গ্রামটা চিনিয়ে দেওয়ার জন্য মাঝপথ থেকে এক গ্রামবাসীর সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। তিনি সটান বলে দিয়েছিলেন, গ্রামটা দেখিয়ে দেবেন, কিন্তু গ্রামে ঢুকবেন না। গ্রামের মধ্যে প্রথম যে পরিবারটির কাছে নির্যাতিতার বাড়ির রাস্তা জিজ্ঞেস করি, তাঁরা রাস্তা বলে দেন ঠিকই। কিন্তু কুলদীপকে নিয়ে কোনও কথা বলতে চান না। বলেন, ‘‘আমরা ছোট জাত! ঠাকুরদের ব্যাপার কী বা বুঝি! কুলদীপের কাছেই আমাদের কাজ করতে হয়। কুলদীপ খুব ভাল লোক!’’ মাঝবয়সি মানুষটির সারা গায়ে মারধরের দাগ। কুলদীপ জেলে থাকলেও তার শাগরেদরা তো বাইরেই। নির্যাতিতার মা বলেছিলেন পড়শি শশী সিংহের কথা। বলেছিলেন, ‘‘এলাকা থেকে প্রায়ই নিখোঁজ হয়ে যায় মেয়েরা। শশী নিয়ে গিয়ে বেচে দেয়, কুলদীপ সেই টাকার বখরা পায়। ভয়ে কেউ পুলিশের কাছে যায় না। আমরা গিয়েছিলাম, তাই আমাদের শেষ করে দিতে চায়। আমাদের ঠিক মেরে ফেলবে, দিদি!’’
কথাটা যে কতখানি সত্য ছিল, পরের কয়েক মাসের ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে। উন্নাওয়ে ধর্ষণ, খুন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বাস্তবিকই। যেমন বিচ্ছিন্ন নয় মাখি বা সিন্দুপুর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy