Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

দরপত্র-বিতর্কে ট্রেন তৈরি বন্ধ, লাভের স্বপ্নে হোঁচট

মূলত যাত্রী-ভাড়া খাতে ক্ষতির বোঝা কমিয়ে আয় বাড়াতেই বিভিন্ন রুটে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের ধাঁচে ‘ট্রেনসেট’ চালু করার পরিকল্পনা করেছিল রেল।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

ফিরোজ ইসলাম
শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৯ ০২:৩৫
Share: Save:

ক্রমবর্ধমান লোকসান সামাল দিতে ‘ট্রেন-১৮’ প্রকল্পে নতুন অন্তত ৪০টি ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করেছিল রেল। তার মধ্যে প্রথম দফায় ১০টি ট্রেন চালু করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মাত্র একটি ট্রেন (বন্দে ভারত এক্সপ্রেস) চালিয়েই টেন্ডার বা দরপত্র-বিতর্কের দরুন সেই প্রকল্প অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অথচ গত আর্থিক বছরে যাত্রী-ভাড়া খাতে রেলের লোকসানের অঙ্ক ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে!

মূলত যাত্রী-ভাড়া খাতে ক্ষতির বোঝা কমিয়ে আয় বাড়াতেই বিভিন্ন রুটে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের ধাঁচে ‘ট্রেনসেট’ চালু করার পরিকল্পনা করেছিল রেল। চলতি আর্থিক বছরেই সারা দেশে অন্তত ১০টি রুটে ওই ট্রেন চালু করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু দরপত্র-বিতর্কে ‘ট্রেন-১৮’ প্রকল্পে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে সেই লক্ষ্যমাত্রা বড় ধাক্কা খেতে পারে বলে রেলের খবর। ইতিমধ্যে রাজধানী, শতাব্দী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনের জায়গায় বন্দে ভারত ধাঁচে আরও আধুনিক প্রযুক্তির ট্রেন-২০ তৈরির পরিকল্পনাও বাতিল হতে বসেছে। ওই সব ট্রেনের জন্য অ্যালুমিনিয়ামের কোচ তৈরির পরিকল্পনা ছিল।

রেল সূত্রের খবর, হাওড়া-বারাণসী রুটে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু হয় গত ফেব্রুয়ারিতে। তার পরে চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরির (আইসিএফ) তৈরি দ্বিতীয় রেকটিকে এখন দিল্লি ও কাটরার মধ্যে পরীক্ষামূলক ভাবে চালানো হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি ওই ট্রেন চালু হওয়ার কথা। তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ওই ট্রেন চালু হলেও চলতি অর্থবর্ষের বাকি সময়ে অন্য ট্রেনগুলি চালু করার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলেই আশঙ্কা করছেন রেলকর্তারা।

প্রায় ৪০ শতাংশ সময় সাশ্রয় করে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। তাই তার টিকিটের চাহিদা যথেষ্ট। আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে ওই ট্রেন লাভের মুখ দেখতে পারে বলে রেলকর্তাদের একাংশের দাবি। দিল্লি থেকে জম্মুর কাটরা পর্যন্ত নতুন রুটেও যাত্রার সময় ১১ ঘণ্টা থেকে আট ঘণ্টায় নেমে আসবে। ফলে ওই রুটেও ট্রেনটিতে আসনের ভাল রকম চাহিদা থাকবে বলে রেলকর্তাদের আশা।

তা হলে প্রকল্পের বাকি ট্রেন তৈরি বন্ধ হল কেন? রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্দে ভারত-সহ ‘ট্রেন-১৮’ প্রকল্পের প্রথম দু’টি রেক তৈরির পরে তৃতীয় রেকের নির্মাণকাজ চলার সময় যন্ত্রাংশ কেনার দরপত্র প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ ওঠে। আগ্রহী দেশি-বিদেশি সব সংস্থাকে যন্ত্রাংশ সরবরাহ করার টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যোগদানের সুযোগ না-দিয়ে দেশের একটি সংস্থাকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। ওই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে দেশি-বিদেশি সংস্থা মিলিয়ে কমবেশি ২৫টি অভিযোগ জমা পড়ে। তার পরেই নড়েচড়ে বসে রেল। শুরু হয় ভিজিল্যান্স তদন্ত। মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন উৎপাদন।

তার মধ্যেই ট্রেন-১৮ প্রকল্পে যন্ত্রাংশ সরবরাহের পুরনো বরাত বাতিল করে দেয় রেল। নতুন করে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার বরাত দেওয়ার কথা। তবে এখনও সেটা হয়ে ওঠেনি। রেল সূত্রের খবর, সব সংস্থাকে সমান সুযোগ দিতে দরপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা তিন সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে তিন মাস করা হয়েছে।

আগামী তিন বছরেরে মধ্যে ট্রেন-১৮ প্রকল্পে ৪০টি ট্রেনসেট সরবরাহের বরাত দেওয়া হয়েছিল আইসিএফ-কে। তার মধ্যে চলতি আর্থিক বছরে ১০টি এবং পরের দু’বছরে ১৫টি করে ট্রেন তৈরি করার কথা ছিল।

কিন্তু ওই লক্ষ্যমাত্রা আদৌ নির্দিষ্ট সময়ে পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রেল জানিয়ে দিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেনসেট এবং ইএমইউ লোকাল সরবরাহ করতে না-পারলে বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে ট্রেন কিনবে রেল।

অন্য বিষয়গুলি:

Controversy Indian Railways Train 18
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy