Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Crime

জামিয়ার বাইরে সিএএ-বিরোধী মিছিলে গুলি, দর্শক দিল্লি পুলিশ

ওই অবস্থার মধ্যেই সে গুলি ছুড়ল মিছিল লক্ষ্য করে। তার পর পিছোতে পিছোতে পুলিশের নাগালে পৌঁছলে তখন তাকে পাকড়াও করে পুলিশ।

আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে অভিযুক্ত। দর্শক পুলিশ। বৃহস্পতিবার জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাঁ দিকে)।  ডানদিকে উপরে, গুলিতে জখম জামিয়ার পড়ুয়া শাদাব ফারুখ। ডানদিকে নীচে, এ ভাবেই ব্যারিকেড টপকে হাসপাতালে যেতে হল আহতকে।—ছবি রয়টার্স ও পিটিআই।

আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে অভিযুক্ত। দর্শক পুলিশ। বৃহস্পতিবার জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাঁ দিকে)। ডানদিকে উপরে, গুলিতে জখম জামিয়ার পড়ুয়া শাদাব ফারুখ। ডানদিকে নীচে, এ ভাবেই ব্যারিকেড টপকে হাসপাতালে যেতে হল আহতকে।—ছবি রয়টার্স ও পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৫৬
Share: Save:

যানজট ঠেলে চল্লিশ মিনিটে মেরেকেটে শ’খানেক মিটার এগিয়েছিল দুপুর একটায় শুরু হওয়া মিছিল। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ৭ নম্বর গেট থেকে মিছিল যাওয়ার কথা ছিল রাজঘাটে। মহাত্মা গাঁধীর প্রয়াণ দিবসে সিএএ-এনআরসির প্রতিবাদে। কিন্তু সেই মিছিলের পথ আটকাতে ব্যারিকেড করে দাঁড়িয়েছিল পুলিশ। তখনই গুলি!

কিন্তু আচমকা নয়! সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দিল্লি পুলিশের দিকে পিঠ করে, হাতে দেশি পিস্তল নিয়ে মিনিট খানেক ধরে মিছিলকে শাসিয়ে গেল সাদা প্যান্ট আর কালো জ্যাকেটের এক কিশোর। কখনও তার গলায় স্লোগান— ‘জয় শ্রীরাম’, কখনও হুমকি— ‘আজাদি চাহিয়ে?...ইয়ে লো আজাদি’। সঙ্গে পিস্তল উঁচিয়ে নাগাড়ে শাসানি। গোটা সময়টা কার্যত ঠুঁটো হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশ।

ওই অবস্থার মধ্যেই সে গুলি ছুড়ল মিছিল লক্ষ্য করে। তার পর পিছোতে পিছোতে পুলিশের নাগালে পৌঁছলে তখন তাকে পাকড়াও করে পুলিশ। জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, গুলিতে বাঁ হাতে চোট পেয়েছেন তাদের স্নাতকোত্তরের পড়ুয়া শাদাব ফারুখ। তাঁকে গুলিবিদ্ধ হতে দেখেও অবশ্য ব্যারিকেড সরায়নি পুলিশ। ফলে রক্তাক্ত বাঁ হাত নিয়েই ব্যারিকেড ডিঙোতে হয়েছে শাদাবকে। সেখান থেকে এমসে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সন্ধ্যায় পুলিশের দাবি, হাতে লাগা গুলি বার করার পরে শাদাব আপাতত বিপন্মুক্ত। গুলি চালানো কিশোর পুলিশের জিম্মায়।

দুপুর ১টা ৪০ নাগাদ এই ঘটনার পরে রাত পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে রইল জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা। বার বার ভাঙার চেষ্টা হল পুলিশের ব্যারিকেড। তার উপরে চড়ে টানা স্লোগান দিলেন বহু তরুণী। জলকামান, লাঠি-সহ সিআরপিএফ, সশস্ত্র বাহিনী মজুত থাকলেও এ দিন আর বলপ্রয়োগের পথে হাঁটেনি দিল্লি পুলিশ। বরং কথা বলে পড়ুয়াদের শান্ত করার চেষ্টা করে তারা। তার মধ্যেই চার জনকে আটক করায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে তাদের ছেড়ে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

জেএনইউ থেকে জামিয়া— বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ক্ষোভ, ‘‘এই ঘটনা তো হওয়ারই ছিল! সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে যে কোনও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে দেশদ্রোহের তকমা দিচ্ছে মোদী সরকার। খোদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্লোগান দিচ্ছেন সেই প্রতিবাদীদের গুলি করতে। আজ ভরদুপুরে পুলিশের নাকের ডগায় সেটাই ঘটেছে।’’ উল্লেখ্য, সম্প্রতি দিল্লি ভোটের প্রচারে গিয়ে ‘দেশ কে গদ্দারো কো, গোলি মারো শালো কো’ স্লোগান তুলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। ৫ জানুয়ারি জেএনইউয়ে কাপড়ে মুখ ঢেকে দুষ্কৃতীরা চড়াও হওয়ার দিনেও এই স্লোগান শোনা গিয়েছিল সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র সমর্থকদের মুখে। আন্দোলনকারীদের প্রশ্ন, ‘‘দিল্লি ভোটে জেতার জন্য কি পড়ুয়াদের প্রাণেরও পরোয়া করে না বিজেপি?’’

এ দিন সব থেকে বেশি ক্ষোভের মুখে পড়েছে পুলিশই। বিকেলে ব্যারিকেডে বাঁধা দড়ি প্রতিবাদীরা পুড়িয়ে দেন। অনেকে বলছেন, ‘‘দিনের আলোয় মাঝ রাস্তায় খাস রাজধানীর বুকে পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দিচ্ছে এক দুষ্কৃতী। আর পিছনে দাঁড়িয়ে হাঁ করে তা দেখছে পুলিশ! নড়ার চেষ্টাটুকুও নেই!’’ দিনভর সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভাইরাল’ হয়েছে সেই ছবি। প্রশ্ন উঠেছে, কেন এমন পরিস্থিতি দেখেও বুকের কাছে জড়ো করা হাত দু’টিও নামাননি এক পুলিশ অফিসার? বাকিরাই বা কেন ছবির মতো স্থির? মিছিলের এক প্রতিবাদীর কথায়, ‘‘গুলি চলতেই অনেকে প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় হাত তুলে মুখ আড়াল করেন। তখনই শাদাবের হাতে গুলি লাগে। না হলে বুকেও লাগতে পারত।’’ জামিয়ার আর এক পড়ুয়ার কথায়, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণাধীন এই পুলিশই তাণ্ডব চালিয়েছিল আমাদের লাইব্রেরিতে।’’ অনেকে মনে করাচ্ছেন, ক’দিন আগেই শাহিন বাগের প্রতিবাদস্থলে বন্দুক নিয়ে চড়াও হয়েছিল এক দুষ্কৃতী। তার পরেও সতর্ক হয়নি পুলিশ।

দিল্লি পুলিশের ডিসিপি চিন্ময় বিশালের অবশ্য দাবি, ‘‘শাহিন বাগ এবং জামিয়ার প্রতিবাদকারীদের বেশ কিছু দিন ধরেই আমরা সাবধান করছি যে, তাঁদের ভিড়ে মিশেই অপকর্ম ঘটাতে পারে কোনও দুষ্কৃতী। এ দিন ওই কিশোর বন্দুক হাতে বেরিয়ে এসেছে মিছিল থেকেই। যত দ্রুত সম্ভব তাকে কব্জা করেছে পুলিশ।’’ যদিও ছবিতে দেখা গিয়েছে, প্রায় পুরো সময়টাই নিষ্ক্রিয় ছিল পুলিশ। অভিযুক্ত তাদের নাগালে যাওয়ার পরে তাকে পাকড়াও করে পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের টুইট, ‘‘এই ঘটনা সমর্থনযোগ্য নয়। এ নিয়ে দিল্লির পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথাও বলেছি।’’

একে ৩০ জানুয়ারি, মহাত্মার প্রয়াণ দিবস। তার উপরে যে কিশোর গুলি চালিয়েছে, তার ফেসবুক প্রোফাইলে কট্টর হিন্দুত্ব, আরএসএস, বজরং দলের প্রতি ভক্তির খোলাখুলি বিজ্ঞাপন। স্পষ্ট ‘রামভক্তি’ও। পিস্তল বের করার মিনিট কয়েক আগেও জামিয়ার জমায়েত থেকে ফেসবুকে ‘লাইভ’ ছিল সে। সেখানেই ইঙ্গিত দিয়েছিল, এ বার কী করতে চলেছে। সব মিলিয়ে, তাই মহাত্মার ঘাতক নাথুরাম গডসের কথা দিনভর ঘুরে এসেছে। অনেকে বলেছেন, সিএএ-এনআরসি যে হেতু সংবিধানের মূল আদর্শের বিরোধী, তাই এই গুলি আসলে চলেছে সংবিধানকে লক্ষ্য করে। কাঠগড়ায় ফের উগ্র হিন্দুত্ব। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি মহাত্মার শরীর লক্ষ্য করে গডসের গুলির পর থেকে যে অভিযোগ আজও তাড়া করে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলিকে।

১৯৪৮ সালের পরে গত ৭২ বছরে কোনও ৩০ জানুয়ারি রাজধানীতে কোনও বন্দুকবাজকে ঘিরে এত আলোড়ন তৈরি হয়নি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy