‘টিম মাজুলি’। একেবারে ডান দিকে জিহান। —নিজস্ব চিত্র।
গর্বের সেই নদী-দ্বীপ ছাড়া আর কোনও মানানসই নাম মনেই আসেনি অসমের ছেলে জিহানের। এ তো ছেলেমেয়ের নাম রাখা নয়। আস্ত একটা ঘোড়সওয়ার দলের নামকরণ। সেখানে শুধু অসমের জিহানই নয়, দুই অস্ট্রেলীয় আর একজন ফরাসিও রয়েছেন। নামকরণের ক্ষেত্রে তাই অনেক কিছুর সঙ্গেই লড়াই ছিল। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়লেও নামকরণের যুদ্ধে অবশ্য শেষ হাসি ‘মাজুলি’ই হেসেছে।
২০১১ সালে ২১ বছরের এক অসমিয় যুবক কেতাদুরস্ত পোশাকে হায়দরাবাদের গুগল দফতরে ইন্টার্ন হওয়ার জন্য ইন্টারভিউ দিতে ঢুকেছিল। প্রথমেই তাকে বলা হয়, কোট-প্যান্ট না পরেও কাজে ‘সিরিয়াস’ হওয়া যায়। পরের বছর আর সেই ভুল করেননি জিহান আহমেদ। গুগলের দফতরে ইন্টারভিউ দিতে ঢুকেছিলেন হাফপ্যান্ট পরে! জিহান মনে করেন, গুগলের কর্মসংস্কৃতিই তাঁকে ব্যতিক্রমী হতে শিখিয়েছে। সেখানে সব কর্মীর কোনও না কোনও ‘প্যাশন’ থাকা বাধ্যতামূলক। সেই তাগিদেই জিহান বেছে নেন ঘোড়সওয়ারি আর পোলো।
সিডনি থেকে জিহান জানান, বাড়ি গুয়াহাটিতে হলেও বাবা-মায়ের কর্মসূত্রে তাঁর ছোটবেলা কেটেছে ডিগবয়ে। ডিব্রুগড়ে ঘোড়দৌড়ের আসর বসত। তখন থেকেই ঘোড়ার প্রতি তাঁর আকর্ষণ। ‘ইকোয়েস্ট্রিয়ান ফেডারেশন অফ অসম’ ছোটদের ঘোড়সওয়ারিতে উৎসাহ দিত। সেখানে যোগ দিয়ে জিহান হয়ে ওঠে ‘শো-জাম্পার’। কিন্তু হায়দরাবাদে তার চল ছিল না। শেষ পর্যন্ত নবাব পরিবারের এক সদস্যের হাত ধরে নিজামের দেশে তাঁর চেনা হবির সন্ধান পান তিনি।
গুগলই তাঁকে ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় বদলি করে। দেশ বদল হলেও ঘোড়ার নেশা বদলায়নি। ২০১৭ সালে সিডনিতে বিশ্ব পোলো চ্যাম্পিয়নশিপে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বাছাই দলগুলি আসে। জিহান সেখানেই হান্টার ভ্যালি থেকে আসা, ইংল্যান্ডের হয়ে পোলো বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া একটি ঘোড়া কিনে ফেলেন। নাম দেন ‘জেফায়ার’ (মনোরম হাওয়া)। গত বছর দ্বিতীয় ঘোড়া ‘জোয়ি’কে কেনার পরেই তিনি বন্ধুদের কাছে নিজেদের দল গড়ার প্রস্তাব দেন। দুই অস্ট্রেলিয় ও এক ফরাসি বন্ধু সঙ্গে সঙ্গে রাজি। তৈরি হয় দল। নাম রাখা হয় ‘মাজুলি’।
কেন এমন নাম!
এক সময় বিশ্বের বৃহত্তম নদী-দ্বীপ ছিল মাজুলি। আয়তন ছিল ৮৮০ বর্গ কিলোমিটার। কিন্তু ক্রমাগত ক্ষয়ের ফলে তার বর্তমান আয়তন ৩৫০ বর্গ কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। জিহানের মতে, মাজুলি প্রতি বছর তার একটু করে অংশ হারায়, অন্য দিকে ফের জেগে ওঠে চড়া। ভাঙাগড়ার খেলার মধ্যেই মাজুলি অসমের ঐতিহ্য, গর্ব বুকে বয়ে নিয়ে এগিয়ে চলেছে। তাঁদের নভিশ পোলো দলও তেমনই। প্রতিটি হার থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের খেলার জন্য নিজেদের তৈরি করে। তাই দলের নাম দ্বীপের নাম একাকার হয়ে যায়। ইতিমধ্যেই কিলার্নি অটাম টুর্নামেন্ট জিতেছে ‘মাজুলি’। আর নামমাহাত্মে বিদেশিদের কাছেও পরিচিতি পাচ্ছে অসমের গর্ব, মাজুলি।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy