আদিত্য মালিক ও জয়দীপ ধর।
ধন্যি স্যারের অধ্যবসায়!
নিউজিল্যান্ডের ক্যান্টারবেরি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করতেন। তার আগে জার্মানি, জেরুজালেম, নিউজিল্যান্ডেরই নামজাদা নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান— দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্সের প্রাক্তনীর ঝুলিতে অভিজ্ঞতা কিছু কম ছিল না। কিন্তু যে-ই শুনলেন, নতুন করে দরজা খুলছে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের, বিদেশের মায়া কাটিয়ে ফেললেন অধ্যাপক আদিত্য মালিক। নালন্দার স্কুল অব হিস্টরিকাল স্টাডিজ-এর ডিন আদিত্য এখন বিহারেই থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নেই। পুরনো সরকারি বাড়ি মেরামত করেই বিশ্ববিদ্যালয় চলছে। শিক্ষক, ছাত্রদের থাকার জায়গা তো দূরের কথা। সেখানেও অস্থায়ী বন্দোবস্ত। মাঝেমধ্যেই লোডশেডিং। তখন ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ। কবে ক্যাম্পাস তৈরির কাজ শুরু হবে, তা-ই জানেন না। শুরু হলেও তিন বছর বা তার বেশি সময় লেগে যাবে। সবথেকে বড় কথা, যাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নালন্দায় আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেই অমর্ত্য সেনই নালন্দা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
তবু তাঁর বিভাগের ছাত্রদের নিয়েই মেতে রয়েছেন আদিত্য। ইতিহাসের ক্লাসে কবিতা শোনাচ্ছেন। ক্লাসে নিজে বক্তৃতা করছেন না। ছাত্রদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেতে উঠছেন। তুলে আনছেন নতুন নতুন চিন্তা-ভাবনা। বিদেশে নিজের যোগাযোগ কাজে লাগিয়েই ছাত্রদের পিএইচডি স্কলার বা ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ করে দিচ্ছেন।
আদিত্যর মতো দেশের এই রকম ১৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকেই রাষ্ট্রপতি ভবন ‘ইনস্পায়ার্ড টিচার’ হিসেব বেছে নিয়েছে। যাঁদের রাষ্ট্রপতি ভবনেই এক সপ্তাহ থাকার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি শুরু করে দেশের নীতি নির্ধারকরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও এই শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় দুঃখ করে বলেছেন, গবেষণার কাজে এ দেশে জিডিপি-র মাত্র ০.৮ শতাংশ অর্থ খরচ হয়। অথচ চিন-জাপান-আমেরিকার মতো দেশে এই হার অনেক বেশি।
রাজনীতিতে আসার আগে নিজে শিক্ষকতা করেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতি হয়ে তাঁর চেষ্টা ছিল, কী ভাবে শিক্ষার মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে তিনিও সামান্য অবদান রাখতে পারেন। তাই দেশের এই ধরনের ‘ইনস্পায়ার্ড টিচার’ বেছে নেওয়া হয়। যাঁরা শুধু নিজেরা শিক্ষকতায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন, তা-ই নয়। ছাত্রছাত্রীদেরও দেশের ও সমাজের জন্য কিছু করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন।
জলপাইগুড়ির চা-বাগানের ছেলে জয়দীপ ধর এমনই একজন। বর্তমানে গ্বালিয়রের অটল বিহারী বাজপেয়ী ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপকের ছাত্রছাত্রী দেশ-বিদেশ জুড়ে। জলন্ধরের পঞ্জাব টেকনিকাল ইউনিভার্সিটি ছেড়ে তিনি যখন গ্বালিয়রে চাকরি নিলেন, প্রতিটি স্টেশনে ট্রেনের দরজায় ছাত্রছাত্রীদের ভিড় জমেছিল। তাঁরা প্রিয় স্যারকে ছাড়তে রাজি নন। অঙ্কের এই অধ্যাপক বরাবরই বাস্তব সমস্যার সমাধানে অঙ্কের প্রয়োগে মন দিয়েছেন। কিন্তু সেখানেই থামেননি বিশ্বভারতীয় এই প্রাক্তনী। তাঁর আসল অবদান অন্যত্র। নিজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে গ্বালিয়রের ক্যাম্পাসেই খুলে ফেলেছেন ‘জ্ঞানধারা’। গরিব, সাধারণ পরিবারের জন্য সন্ধ্যাবেলায় বিনামূল্যে পড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। ক্লাস টু থেকে টুয়েলভ পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের শুধু নিজেই পড়াচ্ছেন না, সঙ্গে থাকছেন তাঁর ছাত্রছাত্রী, রিসার্চ স্কলাররাও। ওই সব ছেলেমেয়েদের মায়েরা আবদার করেছেন, তাঁরা কম্পিউটার জানেন না। নানা কাজে অসুবিধা হয়। তাই মায়েদের জন্যও মাসে দু’দিন কম্পিউটার শেখানোর ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ বিষয়ে আমি একদম শান্তিনিকেতনি। সারাদিনের কাজের পরেও সন্ধ্যাবেলা আড়াই ঘণ্টা ওদের নিয়ে মেতে থাকি।’’
মনে-প্রাণে শান্তিনিকেতনি হয়েও বাংলায় ফিরছেন না? জয়দীপের জবাব, ‘‘বড্ড রাজনীতির চাপ। ওই সব সামলাতে গিয়ে কাজ করতে পারব না। বাংলার বাইরে থাকলেও বাঙালি ছাত্রছাত্রীর তো অভাব নেই। তখনই ফিরব, যখন নিজেই সব সিদ্ধান্ত নিতে পারব। কেউ কিছু চাপিয়ে দিতে পারবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy