Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
National News

শ্মশানে একা রাত কাটিয়ে বিধায়ক প্রমাণ করলেন ভূত নেই

যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। রাতে সটান চলে গেলেন শ্মশানে। সঙ্গী একটি খাটিয়া আর গায়ে চড়ানোর একটি চাদর। শ্মশানেই রাতের খাবার খেয়ে নির্মীয়মাণ ভবনেই শুয়ে পড়লেন খাটিয়ায়। সারা রাত দিব্যি ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলেন।

বিধায়ক নির্মল রাম নায়জু। ইনিই শ্মশানে একা রাত কাটিয়েছেন। ছবি: সংগৃহূীত

বিধায়ক নির্মল রাম নায়জু। ইনিই শ্মশানে একা রাত কাটিয়েছেন। ছবি: সংগৃহূীত

সংবাদ সংস্থা
হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৮ ২২:৩৭
Share: Save:

একটা খাটিয়া। দু’টো চাদর। এ নিয়েই একা শ্মশানে অবলীলায় ঘুমিয়ে রাত কাটিয়ে দিলেন বিধায়ক! প্রমাণ করলেন, শ্মশানে ভূত-প্রেত বলে কিছু নেই। অন্ধ্রপ্রদেশের পশ্চিম গোদাবরী জেলার পালাকোলের বিধায়ক নির্মল রাম নায়ডুর এই দাওয়াই কাজ করেছে এক্কেবারে টনিকের মতো। ভূতের ভয়ে যে শ্রমিকরা শ্মশানের সংস্কারের কাজ ছেড়ে পালিয়েছিলেন, পরের দিন থেকেই তাঁরা ফের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। বিধায়কের এই সাহসী পদক্ষেপ প্রশংসা কুড়িয়েছে সব মহলে। আর সকালে বিধায়ককে জিজ্ঞাসা করতেই সরস জবাব, ‘‘পরের বার মশারি নিয়ে যাব। কারণ মশার কামড় আর দুর্গন্ধ ছাড়া আর কিছুতেই কোনও সমস্যা হয়নি।’’

ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য হঠাৎ করে হয়নি। দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল হয়ে পড়ে ছিল পালাকোলের এই শ্মশান। দেহ সৎকার করতে আসা লোকজনের জন্য নূন্যতম সুযোগ-সুবিধার বালাই নেই। পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি নামলে গোটা এলাকা ভরে যায় জল-কাদায়।আবার পাশেই জঞ্জাল ফেলার ভ্যাট থাকায় গোটা শ্মশানে দুর্গন্ধে ভরে যায়। নিজের এলাকার এই সব সমস্যা মেটাতে বহু জায়গায় দরবার করেছেন বিধায়ক। কিন্তু অধিকাংশ জায়গাতেই হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত শ্মশানের পরিকাঠামো ঢেলে সাজতে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ হয়।

এতদিনের লড়াইয়ের পর যখন টাকা বরাদ্দ হল, তখন দেখা দেয় অন্য বিপত্তি। শ্মশানের সংস্কারের জন্য টেন্ডার ডাকা হলেও তাতে কোনও ঠিকাদার দরপত্রই দিতে চায়নি। কারণ, ভূতের ভয়। এলাকাবাসীর বিশ্বাস, ওই শ্মশানে যেহেতু এত মৃতদেহ পোড়ানো হয়, তাই নিশ্চয়ই ভূত আছে। তাই কোনও ঠিকাদারও ‘উটকো ঝামেলা’য় জড়াতে চাননি।

আরও পড়ুন: রবীন হুড! মালিকের টাকা চুরি করে গরিবের মধ্যে বিলিয়ে দেন

তবে শেষ পর্যন্ত দেবদূতের ভূমিকায় এগিয়ে আসেন এক ঠিকাদার। ভূত-ভীতি উপেক্ষা করে দরপত্র জমা দিয়ে কাজের বরাতও পেয়ে যান তিনি। কয়েক দিনের মধ্যেই কাজও শুরু হয়।

বিধায়ক যখন সবে ‘যুদ্ধ’ জয়ের আনন্দের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ঠিক তখনই ফের বাধা। এ বার কাজ করতে আপত্তি শ্রমিকদের। শুধু আপত্তি নয়, এক প্রকার কাজ ফেলেই চলে যান শ্রমিকরা। বিধায়ক পড়লেন মহা ফাঁপড়ে। কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র নন নির্মল রাম নায়ডুও। ভূত বলে কিছু নেই এবং ওই শ্মশানেও নেই, এটা প্রমাণ করতে প্রাণ বাজি রাখতেও প্রস্তুত তিনি। ‘আপনি আচরি ধর্ম, অপরে শিখাও’—এই আপ্তবাক্য শিরোধার্য করে সিদ্ধান্ত নিলেন, একাই ওই শ্মশানে রাত কাটাবেন। যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। রাতে সটান চলে গেলেন শ্মশানে। সঙ্গী একটি খাটিয়া আর গায়ে চড়ানোর একটি চাদর। শ্মশানেই রাতের খাবার খেয়ে নির্মীয়মাণ ভবনেই শুয়ে পড়লেন খাটিয়ায়। সারা রাত দিব্যি ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলেন। সকালে জানালেন, ভূত দূরে থাক, কোনও কিছু রহস্যজনক বলেও মনে হয়নি তাঁর। শুধু মশার কামড় আর দুর্গন্ধেই যা একটু ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেছে।

আরও পড়ুন: খাবারের প্লেট নেই কেন? বিয়েবাড়িতে হাতাহাতিতে যুবকের মৃত্যু

তেলুগু দেশম পার্টির প্রথম বারের বিধায়ক নির্মল রাম নায়ডুর এই ‘নৈশ অভিযান’-এর খবর রটতে সময় লাগেনি। আর তার পরই কাজ ছেড়ে চলে যাওয়া ৫০ জন শ্রমিক ফের কাজ করতে শুরু করেন। বিধায়ক আশাবাদী, এবার অন্তত কাজ শেষ হবে। সার্থক হবে তাঁর এত দিনের লড়াই। তাঁর এই অভিনব পদক্ষেপ যে কোনও রাজনৈতিক ‘স্টান্ট’ নয়, সে কথা জানিয়ে বিধায়ক বলেন, ‘‘ভোটে জিতে বিধায়ক বা সাংসদ হওয়া, আর সাধারণ মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়া এক নয়। রাজনৈতিক নেতাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত দ্বিতীয়টাই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Ghost Crematory Andhra Pradesh Telugu Desam Party
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE