Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সংঘাতে নয়, যেন শিকড়ে ফিরছেন তথাগত

জনপথের একটি পাঁচতারা হোটেলে নৈশভোজ করছিলেন। তখনও জানতেন না, রাজ্যপাল হতে চলেছেন। জানলেন একটি ফোন আসায়। ফোনের ওপার থেকে জানানো হল, রাষ্ট্রপতি তাঁকে ত্রিপুরার রাজ্যপাল নিযুক্ত করেছেন। দীর্ঘদিন পর তথাগত রায়ের হাত ধরে ফের কোনও বাঙালি বসছেন রাজ্যপালের আসনে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের সুপারিশে তাঁকে ত্রিপুরায় পাঠানোর পর থেকেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

চিরশ্রী চক্রবর্তীর বাড়িতে তথাগত। বুধবার নয়াদিল্লিতে নিজস্ব চিত্র।

চিরশ্রী চক্রবর্তীর বাড়িতে তথাগত। বুধবার নয়াদিল্লিতে নিজস্ব চিত্র।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৫ ০৩:৪০
Share: Save:

জনপথের একটি পাঁচতারা হোটেলে নৈশভোজ করছিলেন। তখনও জানতেন না, রাজ্যপাল হতে চলেছেন। জানলেন একটি ফোন আসায়। ফোনের ওপার থেকে জানানো হল, রাষ্ট্রপতি তাঁকে ত্রিপুরার রাজ্যপাল নিযুক্ত করেছেন।

দীর্ঘদিন পর তথাগত রায়ের হাত ধরে ফের কোনও বাঙালি বসছেন রাজ্যপালের আসনে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের সুপারিশে তাঁকে ত্রিপুরায় পাঠানোর পর থেকেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বহু দিনের বাম শাসিত রাজ্য ত্রিপুরায় তথাগতবাবুর মতো কড়া বাম-বিরোধী ব্যক্তিত্বকে বেছে নেওয়ার পিছনে কি অন্য কোনও সমীকরণ রয়েছে? এখনই না হলেও দীর্ঘমেয়াদে ত্রিপুরার কমিউনিস্ট শাসনের অবসান ঘটানোর লক্ষ্য নিয়েই কি মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্ত? এ সব জল্পনা আজ দিল্লিতে বসেই উড়িয়ে দিলেন তথাগতবাবু। রাষ্ট্রপতি আজ রাজ্যপালের সনদপত্রটি ত্রিপুরা সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেখান থেকে চিফ প্রোটোকল অফিসার এসে সেটি তথাগতবাবুর হাতেও তুলে দেন। আজ তথাগতবাবু বললেন, ‘‘আমি ত্রিপুরার রাজ্যপাল হিসেবে যাচ্ছি। কিন্তু সে রাজ্যের সরকারের সঙ্গে সংঘাতে যাওয়া আমার লক্ষ্য নয়।’’

১৯৮৮ সালে ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী তাঁর টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সন্তোষমোহন দেবকে কংগ্রেসের প্রধান পযর্বেক্ষক করে পাঠিয়েছিলেন। সেই ভোটে দীর্ঘ বাম-শাসনের অবসান ঘটিয়ে রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে। নরেন্দ্র মোদী কি চাইছেন, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জীবনীকার, সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ তথাগতবাবু রাজ্যপাল হিসেব মানিক সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে কাজ করুন? তথাগতবাবুর স্পষ্ট বক্তব্য, আদৌ এমন কোনও পরিকল্পনা নেই কারও। এবং তেমন কোনও সম্ভাবনাও নেই।তথাগতবাবুর ব্যাখ্যা, তিনি একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব পেয়েছেন। সেই দায়িত্ব পালন করাই তাঁর উদ্দেশ্য। সেই সঙ্গে তথাগতবাবু এ-ও উল্লেখ করেন, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যথেষ্ট সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। আর কেন্দ্রীয় সরকারও এখন যুক্তরাষ্ট্রীয় ধর্ম মেনে রাজ্যগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে। ফলে অন্য কোনও জল্পনা-কল্পনার অবকাশই নেই বলে তাঁর দাবি।

দিল্লিতে এলে তথাগতবাবু প্রয়াত সাহিত্যিক প্রমথনাথ বিশীর কন্যা চিরশ্রীর বাড়িতেই থাকেন। তথাগতবাবুর বাবা দেবেশ রায়ের সঙ্গে প্রমথনাথবাবুর এতটাই ঘনিষ্ঠতা ছিল যে তথাগতবাবুর সঙ্গে বিশী-কন্যার ভাই-বোনের সম্পর্ক। চিরশ্রীর স্বামী সুধাংশু চক্রবর্তী কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেসের প্রধান। যখনই দিল্লিতে আসেন তথাগতবাবু, এঁদের বাড়িতেই থাকেন। আজ সেখানে বসেই তথাগতবাবু বললেন, ‘‘ত্রিপুরার সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগও আছে। দু’টি ত্রিপুরা রয়েছে। ব্রিটিশ জমানায় ত্রিপুরা বলে একটি জেলাও ছিল। পরে সেটি পাকিস্তানে চলে যায়। দেশ ভাগের পর যেটি এখন বাংলাদেশে। তথাগতবাবুর পূর্বজরাও সেখানকার। ত্রিপুরা রাজ্যে অবশ্য বার দুই গিয়েছেন। এ বারে নতুন সাংবিধানিক দায়িত্ব পাওয়াটা তথাগতবাবুর কাছে যেন শিকড়ে ফেরা।

সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে সরাসরি সাংবিধানিক দায়িত্বে চলে যেতেই কি চেয়েছিলেন তিনি? বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ যখন জানতে চেয়েছিলেন, সেই সময় তথাগতবাবু কিন্তু সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, রাজ্য বিজেপি সভাপতি রাহুল সিংহ যে ভাবে পরিশ্রম করে সংগঠন চালান, সেটি তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তবে মুখ্যমন্ত্রী পদে যদি প্রার্থী করা হয়, তাতে খুব বেশি অমত ছিল না তাঁর। কিন্তু রাজ্যপাল হবেন, তা ভাবেননি।

ক’দিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ তাঁকে ফোন করে ‘বায়োডেটা’ নেন। তখনও জানতেন না রাজ্যপাল হওয়ার ব্যাপারটা। রাজনাথকে জিজ্ঞাসাও করেছিলেন। কিন্তু রাজনাথ হেসে এড়িয়ে যান। কিন্তু একটি ধারণা ছিল, ‘বায়োডেটা’ যখন নিচ্ছেন, তখন হয় রাজ্যসভায় যাওয়া বা রাজ্যপাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কাল জানলেন ‘বায়োডেটা’ নেওয়ার আসল উদ্দেশ্যটি। তবে বিজেপির অনেকেই মনে করছেন, তথাগত রায় রাজ্যপাল হওয়ায় রাহুল সিংহের এক সম্ভাব্য প্রতিযোগী বাংলার রাজনীতির ময়দান থেকে সরে গেলেন।

ক’দিন আগে তৃণমূল নেতা সৌগত রায়ের কাছেও গিয়েছিলেন দেখা করতে। অনেক দিন পর দাদা-ভাইয়ের সাক্ষাৎ। গত কাল খবর পেয়ে কথাও হয় সৌগতর সঙ্গে। তিনিও খুশি। এখন দফায় দফায় ফোন আসছে অভিনন্দনের বার্তা নিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE