সাতসকালে চা নিয়ে হাজির রাসাতসকালে চা নিয়ে হাজির রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংহ (ডান দিকে)। সাসপেন্ড হওয়া সাংসদেরা কিন্তু সেই চা ফিরিয়ে বললেন, ‘‘সব লোকদেখানো। ধর্না চলবেই।’’ ছবি পিটিআই।জ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংহ (ডান দিকে)। সাসপেন্ড হওয়া সাংসদেরা কিন্তু সেই চা ফিরিয়ে বললেন, ‘‘সব লোকদেখানো। ধর্না চলবেই।’’ ছবি পিটিআই।
সবে সংসদ চত্বরের গাঁধী মূর্তির পাশে এক চিলতে সবুজে রোদ এসে পড়েছে। সাসপেন্ড হওয়া সাংসদেরা চাদর-বালিশ নিয়ে ঘাসের উপরেই বসে রয়েছেন। সাতসকালে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ এসে হাজির। হাতে নিজের বাড়ির তৈরি চা ভর্তি ফ্লাস্ক আর ব্যাগে জলখাবার। সঙ্গে রাজ্যসভা টিভি ও একটি বেসরকারি সংবাদ সংস্থার ক্যামেরা।
‘গাঁধীগিরি’ অবশ্য কাজে এল না। ডেরেক ও’ব্রায়েন, রাজীব সতাভ, সঞ্জয় সিংহেরা হরিবংশের সঙ্গে ‘চায়ে-পে-চর্চা’-য় রাজি হলেন না। হরিবংশ নিজেই এগিয়ে গিয়ে চাদরের উপরে বসে পড়লেন। সবাইকে ডাকলেন। খাবারের প্লেট বের করলেন। নিজেই কাপে চা ঢাললেন। চায়ের কাপ হাতে সবাইকে সাধাসাধিও করলেন। কিন্তু চিঁড়ে ভিজল না।
রবিবার রাজ্যসভায় বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও কৃষি বিল পাশ করাতে গিয়ে ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ ডেরেকদের তোপের মুখে পড়েছিলেন। জেডিইউ সাংসদ হরিবংশের উপরে ‘বিরোধীদের হামলা’-কে যে এনডিএ জোট বিহারের ভোটে অস্ত্র করতে চায়, তা সোমবারেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। আজ হরিবংশর ‘গাঁধীগিরি’-কে তুলে ধরেও বিহারি আবেগ উস্কে দিতে বিজেপি কোনও কসুর করেনি।
খোদ প্রধানমন্ত্রী টুইট করে বলেছেন, ‘‘শতকের পর শতক ধরে বিহার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ শিখিয়ে এসেছে। সেই ঐতিহ্য মেনেই মঙ্গলবার সকালে বিহারের সাংসদ, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশজির রাষ্ট্রনেতার মতো আচরণ যে কোনও গণতন্ত্রপ্রেমীকে গর্বিত করবে।’’ মোদীর মতে, ‘‘কয়েক দিন আগেই যাঁরা তাঁকে আক্রমণ করেছেন, অপমান করেছেন, ধর্নায় বসেছেন, তাঁদের নিজের চা দেওয়া প্রমাণ করে, হরিবংশজির হৃদয় কতখানি বড়।’’ উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডুও হরিবংশের প্রশংসা করেন।
হরিবংশর চায়ের আপ্যায়নের পিছনে আসলে যে ‘বিহারের রাজনীতি’ রয়েছে, তা বুঝেই ধর্নায় বসা সাংসদেরা তাঁর চায়ের কাপে চুমুক দিতে চাননি। ডেরেক বলেন, ‘‘গণতন্ত্রকে হত্যা করে এখন উনি চা খাওয়াতে এসেছেন। এর পিছনে বিহারের সস্তা রাজনীতি রয়েছে। আমাদের চা দেওয়ার আগে বরং ওঁরা চাষিদের ন্যায়বিচার দিন।’’ আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিংহ বলেন, ‘‘আমরা ওঁকে বলেছি, বিল পাশের সময়ে নিয়ম ভাঙা হয়েছে। সরকারের কাছে সংখ্যা ছিল না। উনি কিছুই করেননি।’’
চায়ে-পে-চর্চায় সাড়া না পেয়ে হরিবংশ বাড়িতে ফিরেই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে চিঠি লিখে জানান, ‘‘বিরোধীদের আক্রমণ আমাকে যন্ত্রণা দিয়েছে। রবিবারের ঘটনার পর থেকে দু’দিন ঘুমোতে পারিনি। আমার সম্পর্কে অসংসদীয় শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বারবারই সেই ঘটনার কথা মনে পড়ছে। ঘুমোতে পারছি না।’’ কবি দীনকরের জন্মদিনে মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত উপবাস করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলেও জানান হরিবংশ। উপবাস করলেও তিনি রাজ্যসভায় কাজ সামলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদী থেকে সরকারের অন্য মন্ত্রীরা হরিবংশকে বিহারের জয়প্রকাশ নারায়ণের গ্রামের মানুষ হিসেবে তুলে ধরে ‘বিহারি অস্মিতা’-র জয়গান গাইছিলেন। আজ হরিবংশ নিজেও তাঁর চিঠিতে এর উল্লেখ করে বলেছেন, ‘‘আমি জেপি আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। আমার রাজনৈতিক প্রেক্ষিত বিহারের, যেখানে বৈশালি গণতন্ত্রের জন্য পরিচিত ছিল।’’ হরিবংশের এই চিঠিতেও বিহারের রাজনীতিরই গন্ধ পাচ্ছেন বিরোধীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy