Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

২ হাজার টাকা প্রতি লিটার! গাধার দুধেই ব্যবসা কোটির

সেই ঝোঁক বাড়ছে ভারতেও। একাধিক সংস্থা গাধার দুধের প্রসাধনী তৈরি করছে। প্রয়োজনেই তারা গাধাপালকদের (যাঁদের অধিকাংশই যাযাবর) ছোট-ছোট গোষ্ঠী গড়েছে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৯ ০১:৫৮
Share: Save:

গাধা পিটিয়ে ঘোড়া তৈরির আর বোধহয় প্রয়োজন নেই।

ভারতে গত কয়েক বছরে চমকে দেওয়ার মতো বাজার তৈরি হয়েছে গাধার দুধের! লিটারে যা ২,০০০ টাকা। গবেষণায় জানা গিয়েছে, গাধার দুধে ফ্যাট কম। রয়েছে ভিটামিন, খনিজ। মানুষের দুধের সঙ্গে অনেক মিল। তাই ওষুধ ও প্রসাধনী তৈরির কাঁচামাল হিসেবে চাহিদা তৈরি হয়েছে এর। যে কারণে আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্য ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে এই দুধ কিনতে হুড়োহুড়ি পড়ে।

সেই ঝোঁক বাড়ছে ভারতেও। একাধিক সংস্থা গাধার দুধের প্রসাধনী তৈরি করছে। প্রয়োজনেই তারা গাধাপালকদের (যাঁদের অধিকাংশই যাযাবর) ছোট-ছোট গোষ্ঠী গড়েছে।

কেরলের এর্নাকুলামের অ্যাবি বেবি যেমন। মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট পড়েছিলেন। এমন ব্যবসায় নামতে চেয়েছিলেন যেখানে বেশি প্রতিযোগিতা নেই। নেট-বইপত্র ঘেঁটে গাধার দুধের ব্যাপারটা মনে ধরে। শেষে শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে রামমঙ্গলমে গাধার খামার করলেন। গড়লেন ছোট কারখানাও। ২০১৭-তে শুরু ব্যবসা। গাধার দুধ থেকে তৈরি ক্রিম ও শ্যাম্পু দিয়ে। আর্থারাইটিসের ক্রিমের দাম ৪,৮৪০ টাকা, এগজিমার ক্রিম ৬,১৩৬। ২০০ মিলিলিটারের মেডিকেটেড শ্যাম্পুও ২,৪০০ টাকার। তাঁর দাবি, গত অর্থবর্ষে সেই ব্যবসার অঙ্ক ছুঁয়েছে প্রায় ১.১৫ কোটি টাকা। আগের অর্থবর্ষের থেকে ৭০% বেশি।

ইতিহাসে
• মেডিসিনের জনক গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস প্রথম গাধার দুধের ওষধি গুণ সম্পর্কে লিখেছিলেন। রোমান সাম্রাজ্যে ওষুধ হিসাবে এর বহুল ব্যবহার ছিল। রোমান সম্রাট নিরোর স্ত্রী পপিয়া সাবাইনা ত্বকের যত্নে গাধার দুধ ব্যবহার করতেন। এই দুধে স্নান করতেন মিশরের রানি ক্লিওপেট্রা। গাধার দুধ মুখে মাখতেন নেপোলিয়ন বোনাপার্টের বোন পোলিন।
• দুধে আছে: ভিটামিন এ, বি-১, বি-২, বি-৬, ডি, সি, ই। ওমেগা-৬।
ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক

অ্যাবি ফোনে বলেন, ‘‘আমার জিনিস মূলত বিদেশে অনলাইনে বিক্রি হয়। ওষুধ ও প্রসাধন শিল্পে ব্যাপক চাহিদা। গোটা দেশে ব্যবসা ছড়াতে চাইছি। লগ্নিকারীও দরকার। আমার কাছে ফ্রান্স থেকে আনা ২১টি ‘পউট্যু’ জাতের গাধা রয়েছে। দশাসই চেহারা। দুধও বেশি দেয়। আমার ফার্ম থেকে প্রতি লিটার ৪,৭০০ টাকাতেও বেচেছি।’’ টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্স থেকে গত বছর স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন দিল্লির পূজা কল। সেই বছর অক্টোবরেই কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে একটি সংস্থা খুলে গাধার দুধের সাবান তৈরি শুরু করেন। বিক্রি করেন অনলাইনে। মূলত ১৪টি যাযাবর পরিবারকে নিয়ে গাজিয়াবাদের দাসনা এলাকায় তাঁরা সমবায়ের মতো গড়েছেন। ৪২টি গাধা রয়েছে। প্রতিদিন সেখান থেকে দিল্লিতে পূজাদের কারখানায় ৫-১৫ লিটারের মতো দুধ এনে ঘণ্টা চারেকের মধ্যে ‘প্রসেস’ করতে হয়।

পূজার দাবি, ‘‘এখনও খুব কম লোক গাধার দুধের বিষয় জানে। কিন্তু ব্যবসার দুরন্ত ক্ষেত্র এটা। বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শনীতে ও অনলাইনে দারুণ সাড়া পাচ্ছি। মাসে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার জিনিস বিক্রি হচ্ছে। লাভ ২০-২৫ শতাংশ। দুধটাকে পাউডার করার যন্ত্রপাতি থাকলে দ্বিগুণ আয় হত। বিদেশে রফতানি করতে পারতাম।’’ রাজস্থানের জয়পুরের বিএসসি পড়ুয়া সময় সিংহ গুজ্জরও বছর দু’য়েক আগে ধার করে শহর থেকে প্রায় ৩০ কিমি দূরে ৪০টি গাধার খামার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ভিলওয়াড়ায় বড় রফতানিকারী আছেন। তাঁর লোকেরা প্রতি দিন ৫-৬ লিটার দুধ নিয়ে যান। দিনে আয় ২,৫০০-৩,০০০ টাকার মতো।’’ পুণের রমেশ যাদবের ৫-৬ টি গাধা। তিনি ১০০ মিলিলিটার দুধ ৭০০ টাকায় বেচেন। একেবারে ক্রেতার বাড়িতে গাধা নিয়ে গিয়ে টাটকা দুধ দুইয়ে।

দক্ষিণ ভারতে ওষুধ হিসাবে গাধার দুধের চাহিদা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন পূজারা। ১ চামচ দুধ বিক্রি হয় ৫০-১৫০ টাকায়!

অন্য বিষয়গুলি:

Donkey Milk Health Medicine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy