ফাইল চিত্র।
সর্বভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা পরীক্ষা (জেইই-মেন) এবং ডাক্তারি প্রবেশিকা (এনইইটি-ইউজি বা নিট-ইউজি) পিছোনোর আর্জি আজ খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। একই দিনে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীরও স্পষ্ট ইঙ্গিত, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে চূড়ান্ত বর্ষ ও সিমেস্টারের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটবে না বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। যদিও প্রতিবাদী পড়ুয়াদের প্রশ্ন, ঝড়ের গতিতে সংক্রমণ ছড়ানোর এই সময়ে পরীক্ষায় বসতে বাধ্য হওয়া যদি বহু পড়ুয়ার বিপদ ডেকে আনে, তার দায় সরকার নেবে তো? এর পরেও পরীক্ষার্থীদের উদ্বেগের কথা জানাতে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েছে ছাত্র সংগঠন এআইএসএ।
করোনার কারণে পিছিয়ে যাওয়া জেইই-মেন এবং নিট-ইউজি সেপ্টেম্বরে নেওয়া হবে বলে ৩ জুলাই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল পরীক্ষার আয়োজক ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ)। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, জেইই-মেন হওয়ার কথা ১ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর। আর নিট-ইউজি ওই মাসেরই ১৩ তারিখে। কিন্তু পরীক্ষার্থীদের অনেকের প্রশ্ন ছিল, যেখানে সারা দেশে করোনা-সংক্রমণ এমন আগুনের মতো ছড়াচ্ছে, থেকে-থেকেই স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন করতে বাধ্য হচ্ছে বিভিন্ন রাজ্য, সেখানে এমন সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় তাঁরা বসবেন কী ভাবে? এতে তাঁদের নিজেদের ও পরিবারের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে না? কী ভাবেই বা পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছবেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের পরীক্ষার্থীরা? এই সমস্ত আপত্তির কথা জানিয়েই পরীক্ষা আপাতত পিছিয়ে দিতে সুপ্রিম কোর্টে গিযেছিলেন ১১টি রাজ্যের ১১ পড়ুয়া।
সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ স্পষ্ট বলেছে, করোনার কঠিন সময়েও জীবন থমকে থাকতে পারে না। তা চলতে থাকা জরুরি। পরীক্ষাও প্রয়োজন। বিচারপতিদের পাল্টা প্রশ্ন, “পরীক্ষা না-হলে, তা দেশের ক্ষতি নয়? এতে এক বছর নষ্ট হবে না পড়ুয়াদের?” তাঁদের মতে, “পরীক্ষায় বসতে না-পারলে, তার অনেক বড় মূল্য চোকাতে হবে পড়ুয়াদের। বিপদের মুখে পড়বে তাঁদেরই ভবিষ্যৎ।” সে কথা মাথায় রেখেই এই দুই পরীক্ষা পিছোনোর আর্জি খরিজ করে দিয়েছেন তাঁরা। পরিস্থিতি কঠিন হলেও, পড়ুয়াদের স্বার্থ মাথায় রেখে জেইই-মেন আর নিট-ইউজি পরীক্ষা হওয়া উচিত বলে এর আগে জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্কও।
আরও পড়ুন: শিক্ষানীতির দ্রুত প্রয়োগ চায় কেন্দ্র
আবেদনকারী পড়ুয়াদের উকিল অলখ অলোক শ্রীবাস্তবের বক্তব্য ছিল, “আমরা অনির্দিষ্ট কালের জন্য পরীক্ষা পিছোনোর কথা বলছি না। কিন্তু যেহেতু প্রতিষেধক আসার কথা শোনা যাচ্ছে, খোদ প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে বক্তৃতায় সে কথা বলেছেন, তাই অন্তত (পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হওয়া পর্যন্ত) কিছু দিনের জন্য পরীক্ষা পিছোনোর আর্জি জানাচ্ছি।”
বেঞ্চের প্রশ্ন, পরীক্ষার আয়োজক সংস্থা যে বলছে, পড়ুয়াদের সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেবে, সে বিষয়ে আবেদনকারীরা আস্থা রাখছেন না কেন? এত দিন অনলাইনে শুনানির পরে এখন বিভিন্ন সাবধানতা অবলম্বন করে এজলাসে শুনানির প্রস্তুতি চলছে সুপ্রিম কোর্টে। সে কথা উল্লেখ করে আইনজীবীকে বেঞ্চের প্রশ্ন, “আপনারাই তো চান যে, আদালত খুলুক। আমরা তার জন্য তৈরিও হচ্ছি। তা হলে পরীক্ষা হবে না কেন?”
করোনা-কালে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে চূড়ান্ত বর্ষ ও সিমেস্টারের পরীক্ষা বাতিলের আর্জি জানিয়েও সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েছেন পড়ুয়াদের একাংশ। মঙ্গলবার তার শুনানি হওয়ার কথা। কিন্তু সোমবার সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত শোনার পরে জল্পনা, তবে কি খারিজ হবে ওই সব পরীক্ষা বাতিলের আর্জিও? জল্পনা উস্কে শুনানির ঠিক আগের দিন দেশের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের উদ্দেশে ভিডিয়ো-বক্তৃতায় নিশঙ্কের দাবি, চূড়ান্ত বর্ষ ও সিমেস্টারের পরীক্ষা না-নিলে, ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়বেন পড়ুয়ারা। করোনা-বছরে পরীক্ষা না-দিয়েই পাশ করা ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে দেগে দেওয়া হবে তাঁদের। অসুবিধা হবে উচ্চশিক্ষায়, কাজের জগতে। তাঁর কথায়, “খাতায়-কলমে, অনলাইনে, যে ভাবে সুবিধা, তাতেই পরীক্ষা নিক কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। কিন্তু পরীক্ষা হওয়া জরুরি।” প্রায় সমস্ত রাজ্যের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় তাতে রাজি, দাবি তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy