কিশোরীর বুকে হাত দিলে বা তার পাজামার দড়ি খোলার চেষ্টা করলে তা ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা নয় বলে রায় দিয়েছিল ইলাহাবাদ হাই কোর্ট। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ বার সেই মামলার রায়ের উপর স্থগিতাদেশ জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি বিআর গবই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চ জানিয়েছে, ইলাহাবাদ হাই কোর্টের রায়ে তারা ব্যথিত। এতে ‘সম্পূর্ণ ভাবে সংবেদশীলতার অভাব’ রয়েছে। কেন্দ্র এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে এই বিষয়ে জবাব তলব করেছে শীর্ষ আদালত।
সুপ্রিম কোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলে, ‘‘আমরা দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, ওই রায়ে সংবেদনশীলতার অভাব প্রকাশ পেয়েছে। এই রায় তাৎক্ষণিক ভাবে নেওয়া হয়নি। অন্তত চার মাস পরে রায় প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা আপাতত ওই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিচ্ছি।’’ সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘কিছু রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।’’ বিচারপতি গবই তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘‘এটি খুবই গুরুতর বিষয়। বিচারপতি এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অসংবেদনশীলতার কাজ করেছেন। বিচারপতি সম্পর্কে এ ধরনের কঠোর শব্দ ব্যবহার করার জন্যও আমরা দুঃখিত।’’
উল্লেখ্য, ১১ বছরের এক কিশোরীকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল পবন এবং আকাশ নামে দু’জনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তাঁরা নির্জন কালভার্টে কিশোরীর বুকে হাত দিয়েছিলেন। তার পাজামার দড়ি খোলার চেষ্টা করেছিলেন। সেই মামলার শুনানিতে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি রামমনোহর নারায়ণ মিশ্রের বেঞ্চ জানায়, দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তাতে ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার মামলা খাটে না। তবে এটি অবশ্যই যৌন হেনস্থার ঘটনা। ধর্ষণের চেষ্টার মামলা দায়ের করতে গেলে সরকারি আইনজীবীকে প্রমাণ করতে হবে যে, ঘটনাটি ধর্ষণের দিকেই এগোচ্ছিল। অপরাধ ঘটানোর প্রস্তুতি এবং প্রকৃত প্রচেষ্টার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। নির্দেশ দেওয়ার সময় বিচারপতি মিশ্রের পর্যবেক্ষণ, কোনও কিশোরীর বুকে বা তার পাজামার দড়ি খোলার চেষ্টা করলেই সেটা ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা নয়। হাই কোর্টের এই রায়কে কেন্দ্র করে বিতর্ক দানা বাঁধে।
আরও পড়ুন:
‘উই দ্য উইমেন অফ ইন্ডিয়া’ নামে একটি সংগঠন হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করার পরই সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলার শুনানি করে। নির্যাতিতার মা-ও হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। মূল মামলার সঙ্গে সেটি যুক্ত করা হয়েছে।