উচ্ছ্বাস: সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেই পথে সেবায়েতরা। মুখে নেই মাস্ক। সোমবার পুরীতে।
রীতিমাফিক জগন্নাথদেবের আজ্ঞামালা রথের কাছে চলে গিয়েছিল সোমবার সকালেই। তবু রথ টেনে শ্রীমন্দিরের সিংহদুয়ারে রাখতে দ্বিধা করছিলেন সেবায়েতরা। তখনও প্রতীক্ষা, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডে কী বলেন!
বিকেলে পুরীতে ঢোকার সব রাস্তা, স্টেশন, বিমানবন্দর, বাসস্ট্যান্ড উৎসব চলাকালীন বন্ধ রাখার শর্তে রথযাত্রায় সায় দিয়েছে বোবডের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ। রথের দিন এবং দরকারমাফিক উৎসবের অন্য দিনে প্রশাসন পুরীতে কার্ফু জারি করতে পারবে বলেও জানিয়েছে। প্রধান বিচারপতি বোবডে, বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী এবং বিচারপতি এ এস বোপান্নার নির্দেশে বলা হয়েছে, জমায়েতশূন্য ভাবে রথযাত্রা হলে সমস্যা নেই। সর্বাধিক ৫০০ জন সেবায়েত (যাঁদের কোভিড পরীক্ষা হয়েছে) দূরত্ব রেখে রথ টানতে পারবেন।
গত ১৮ জুনের নির্দেশে ১০-১২ লক্ষের ভিড়ের আশঙ্কায় রথযাত্রা বন্ধ করতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালত বলেছিল, ‘‘এ বছর রথযাত্রার অনুমতি দিলে প্রভু জগন্নাথই ক্ষমা করবেন না!’’ সেই আদেশ বদলানোর আর্জি নিয়ে জমা পড়া সব ক’টি আবেদনই এ দিন সর্বোচ্চ আদালত গ্রহণ করে। ভিডিয়ো কনফারেন্সে বেলা আড়াইটে নাগাদ শুনানি শুরু হয়। এ দিনও আদালতের পর্যবেক্ষণ, অতীতে জমায়েত থেকে পুরীতে মহামারির কথা শোনা যায়। বিপুল মানুষ জড়ো হলে কে কোথায় ভাইরাস ছড়ালেন বোঝাও যাবে না।
আরও পড়ুন: ‘জয় জগন্নাথ’ বলে জয়গান শাহ-মোদীরও
তবে শেষ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু দমনে ওড়িশার ভূমিকার প্রশংসা করে তাদের উপরে আস্থা রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। ক’জন রথযাত্রার অনুষ্ঠানে যুক্ত হলেন, তার নথি রাজ্যকে রাখতে বলা হয়েছে। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার আশ্বাসমাফিক দরকার হলে রাজ্য কেন্দ্রের সাহায্য নিতে পারে বলে জানায় সর্বোচ্চ আদালত। টিভি চ্যানেলে রথযাত্রা সম্প্রচারেও রাজ্যকে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। পরে মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে সবাইকে পরম্পরা ও সতর্কতা বিধির মধ্যে ভারসাম্য রেখে রথযাত্রা সম্পন্ন করতে অনুরোধ করেছেন।
আরও পড়ুন: সামনে এল দুই সেনার লড়াইয়ের ভিডিয়ো
নাগপুরে তাঁর বাসভবন থেকেই এ দিন দুপুরে ভিডিয়ো কনফারেন্সে শুনানি গ্রহণ করেন বোবডে। জগন্নাথ-ভক্তদের চাপে এ দিন সকালে প্রথমে সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে নিরাপদ রথযাত্রা সম্পন্ন করার বিষয়ে হলফনামা পেশ করেছিল ওড়িশা সরকার। সলিসিটর জেনারেল বোঝান, “রথযাত্রা না-হলে মন্দিরের রীতিমাফিক দোষ কাটাতে, ১২ বছর রথ বের করা যাবে না!” রাজ্যের হয়ে মামলা লড়েন হরিশ সালভে। পরে মামলাটি প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে সরে যায়। সেখানেও কেন্দ্র এবং রাজ্যের তরফে করোনা সতর্কতার পাশাপাশি জনমানসের বিশ্বাসকে মর্যাদা দেওয়ার কথা পেশ করা হয়। বিকেল সওয়া চারটেয় রায়ের খবর মেলে। “এ প্রভুর অলৌকিক মহিমা”, বলে তখন উদ্বেল জগন্নাথ দয়িতাপতি, রামচন্দ্র দয়িতাপতিরা। জগন্নাথ সংস্কৃতিবিদ সুরেন্দ্রনাথ দাসের কথায়, “উৎকলের এই জয় যোদ্ধাবেশী জগন্নাথ-বলভদ্রের কাঞ্চী অভিযানের মতোই মহান ও রোমাঞ্চকর।” এর পরই রীতিমাফিক জগন্নাথ, সুভদ্রা এবং বলভদ্রের রথ পর পর মন্দিরের সিংহদুয়ারে প্রস্তুত করা হয়।
মিজোরামের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল, জগন্নাথ-ভক্ত বিশ্বজিৎ দেব রায় শুনে বললেন, “ওড়িশা সরকার আগের শুনানিতে তাদের অবস্থান খোলসা করলে এত নাটকের দরকার হত না। সরকারের নীরবতার জন্যই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।” আপাতত রথযাত্রা সুসম্পন্ন করতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তিন জন মন্ত্রী শ্রীক্ষেত্রে শিবির করে সব কিছু দেখছেন। রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি পুরীতে। অন্তত ১৫ হাজার পুলিশ মাঠে নামতে তৈরি সেখানে। এ দিন রাত ন’টা থেকে কার্ফু শুরু হয়েছে পুরীতে। চলবে বুধবার দুপুর দু’টো পর্যন্ত। পুরীতে ঢোকার রাস্তাগুলি বন্ধ করা হচ্ছে।
তবে রথে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে সংশয় আছে। একটি সূত্র বলছে, সুপ্রিম কোর্টের টানাপড়েনের জেরে পুরীতে ক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন নবীন। সেবায়েত ও পুলিশ ছাড়া রথে কারও থাকার কথা নয়, এই যুক্তি দেখিয়েও তিনি পুরীমুখী না-ও হতে পারেন। তবে নবীনের আর্জি, “বিশ্ব আমাদের দেখছে। আসুন, কোভিড-পরিস্থিতিতে শৃঙ্খলা এবং সতর্কতার দৃষ্টান্ত তৈরি করি।” আজ, মঙ্গলবার রথারূঢ় জগন্নাথদেবকে টিভিতে অন্তত দেখতে প্রহর গুনছেন কাছে-দূরের ভক্তেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy