এক টাকা হাতে: রায় ঘোষণার পরে নিজের এই ছবিটি টুইট করেন প্রশান্ত ভূষণ।
নিজের বক্তব্যে অটল থেকে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। সুপ্রিম কোর্ট জরিমানা ঘোষণা করল এক টাকা। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যা অনাদায়ী থাকলে হতে পারে তিন মাসের জেল। এবং তার সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তাঁর প্র্যাকটিস করা তিন বছর পর্যন্ত নিষিদ্ধ হতে পারে।
সুপ্রিম কোর্ট আজ এই রায় দেওয়ার পরেই সাংবাদিক বৈঠকে একটি এক টাকার মুদ্রা হাতে ধরে ছবি তোলেন প্রশান্ত। সঙ্গে জানান, “রায়কে সম্মান জানিয়ে আমি তা পালন করব।” তবে তার সঙ্গে এ-ও উল্লেখ করেন যে, রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানোর অধিকার তিনি নিজের কাছেই রাখছেন। এক টাকা হাতে হাসিমুখে তোলা দু’টি ছবি টুইটও করেন প্রশান্ত। সঙ্গে লেখেন, “রায় ঘোষণার পরেই আমার সিনিয়র সহকর্মী ও আমার আইনজীবী রাজীব ধবন এই টাকাটি আমাকে দিয়েছেন। কৃতজ্ঞ চিত্তে আমি তা গ্রহণ করেছি।” বিভিন্ন মহল থেকে যাঁরা তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন, তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জানান প্রবীণ এই আইনজীবী।
সুপ্রিম কোর্ট এবং প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডের সমালোচনা করে একাধিক টুইট করেছিলেন প্রশান্ত। এতে আদালতের অবমাননার মামলা হলেও তিনি তাঁর বক্তব্যে অনড় থাকেন। আদালত তাঁকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নিয়ে অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু তাতেও রাজি না-হয়ে জানিয়ে দেন, তিনি বরং আদালতের দেওয়া শাস্তিই মেনে নেবেন।
আজ রায়দানের পরে প্রশান্ত বিবৃতিতে বলেন, “আমি বরাবর বিশ্বাস করে এসেছি, সুপ্রিম কোর্টই দুর্বল ও নিপীড়িতের আশার শেষ দুর্গ। আমি টুইটগুলিতে আদৌ বিচারব্যবস্থাকে আঘাত করতে চাইনি। সেই উজ্জ্বল ঐতিহ্য থেকে তার বিচ্যুতি দেখে নিজের ক্ষোভটা জানিয়েছি। আদালত যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাতে দেশ দুর্বল হয়। ক্ষতি হয় মানুষের।”
শীর্ষ আদালতের চার জন বিচারপতিও ২০১৮-র ১২ জানুয়ারি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে প্রকাশ্যে তাঁদের ক্ষোভ জানিয়েছিলেন। সমালোচনা করেছিলেন তৎকালীন বিচার সংক্রান্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থার। এই প্রসঙ্গও শুনানিতে তোলা হয়েছিল প্রশান্তর তরফে। এই প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, “আমরা আশা করব বিচারপতিরা সংবাদমাধ্যমের দ্বারস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে সেটাই প্রথম ও শেষ নজির থাকবে। বিচারপতিদের যদি কোনও সমস্যা থাকেও, তবে প্রকাশ্যে এনে তার সমাধান সম্ভব নয়। বিচারের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থার মর্যাদা রক্ষায় ঈশ্বর সকলকে সুবুদ্ধি দিন।”
মামলার শেষ শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল শীর্ষ আদালতে আর্জি জানিয়েছিলেন, প্রশান্ত ভূষণকে ক্ষমা করা হোক। কারণ টুইটগুলিতে তিনি বিচার প্রয়োগের ব্যবস্থার উন্নতিই চেয়েছেন। মত প্রকাশের স্বাধীনতা অটুট রেখেই এগিয়ে চলুক গণতন্ত্র।” প্রশান্তর আইনজীবী রাজীব ধবন সওয়ালে বলেন, ক্ষমা চাইতে বলাটা আসলে জবরদস্তি। টুইটের জন্য প্রশান্তকে শহিদ না-বানিয়ে বিচার বিভাগ রাষ্ট্রীয় বোধের পরিচয় দিক।
সুপ্রিম কোর্ট এ দিনের রায়ে বেণুগোপালের বক্তব্য অনুসারে মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতাকে মর্যাদা দেওয়ারই কথা বলেছে। মামলার সারবত্তার দিকে না-গিয়ে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢার মন্তব্য, “আদালত বিচক্ষণতারই পরিচয় দিয়েছে। তবে সবচেয়ে ভাল হত, যদি আদালত তাঁকে সতর্ক করে দিয়েই ছেড়ে দিত। এ ক্ষেত্রে আদালত হয় তো এই বার্তা দিতে চেয়েছে যে, আইনই শেষ কথা। দোষ করলে শাস্তি পেতেই হবে। এক টাকা জরিমানাটা একটা প্রতীকী শাস্তি।”
বিজেপির লোকজন বলছেন, এটা আদালতের বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ, প্রশান্ত ভূষণ যে দোষী, সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছে। তবে এই এক টাকার প্রতীকী শাস্তিতে উভয় পক্ষেরই মর্যাদা রক্ষিত হল বলে মনে করছেন আইনজ্ঞদের একাংশ। অনেকে মনে করছেন, এই এক টাকা জরিমানাই বিচারব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে নতুন আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। আপ-এ এক সময়ে প্রশান্তর সঙ্গে কাজ করেছেন ‘স্বরাজ ইন্ডিয়া’র প্রধান যোগেন্দ্র যাদব। তিনি টুইট করেছেন, “জাতীয় আন্দোলন হয়ে উঠুক এই ১ টাকা।” পি চিদম্বরমের সাংসদ-পুত্র কার্তি চিদম্বরম ও আরও অনেকেই জরিমানার ১ টাকা দিতে চেয়ে টুইট করেছেন আজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy