Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Fuel Price Hike

Russia-Ukraine war: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে তেলের দর ঊর্ধ্বমুখী উদ্বেগ শুরু ভারত-সহ বহু দেশের

ইউক্রেনের উপরে হামলার ‘জবাবে’ রাশিয়াকে আর্থিক ভাবে আরও কোণঠাসা করতে মঙ্গলবারই ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ থেকে তেল আমদানির উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২২ ০৬:১৫
Share: Save:

পাঁচ রাজ্যে নাকি শুধু ভোট মেটার অপেক্ষা! দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, তার পরেই বিশ্ব বাজারে হুড়মুড়িয়ে বাড়তে থাকা অশোধিত তেলের দরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ দেশেও লাফিয়ে বাড়বে পেট্রল, ডিজ়েল, এমনকি রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম। ভোট শেষের পরে গত কাল তা হয়নি। সূত্রের খবর, আজও (বুধবার) দাম অপরিবর্তিত রেখেছে তেল সংস্থাগুলি। কিন্তু জ্বালানি রফতানি বন্ধ করতে রাশিয়ার হুমকি আর তার পাল্টা হিসেবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিষেধাজ্ঞা চাপানো আরও আশঙ্কার মুখে ঠেলে দিয়েছে ভারত-সহ সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে।

ইউক্রেনের উপরে হামলার ‘জবাবে’ রাশিয়াকে আর্থিক ভাবে আরও কোণঠাসা করতে মঙ্গলবারই ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ থেকে তেল আমদানির উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণা, ‘‘রাশিয়ার যুদ্ধের জন্য (তেল কিনে) ভর্তুকি জোগাবে না আমেরিকা।’’ এতে আমেরিকান মুলুকেও তেল-গ্যাসের দাম বাড়বে। কিন্তু ‘স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে’ এই মাসুলটুকু গোনার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এর আগে ইউরোপে তেল রফতানি বন্ধের হুমকি দিয়েছিল পুতিনের রাশিয়াও।

এ দিন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মেনে নিয়েছেন যে, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর যেখানে পৌঁছেছে এবং যে ভাবে প্রায় প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে এই খাতে বাজেটে তুলে রাখা টাকা কম পড়তে বাধ্য। ফলে কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে, তা মোদী সরকারের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এর (অশোধিত তেলের বাড়তে থাকা দাম) বোঝা বইতে হবে। বাজেটে এর জন্য কিছু সংস্থান করেছি। কিন্তু তা তেলের সম্ভাব্য গড় দামের ভিত্তিতে। কিন্তু এখন তা-ও পেরিয়ে গিয়েছে। কাজেই, দেখতে হবে, কী করে এর সমাধান করা যায়।’’

তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীর অবশ্য আশ্বাস, সরকার নাগরিকদের স্বার্থের কথা ভেবেই সিদ্ধান্ত নেবে এবং দেশে তেলের জোগানের সমস্যা হবে না। কিন্তু সেখানেও প্রশ্ন উঠছে, তেল-গ্যাসের দাম বাড়বে না, এমন আশ্বাস মোদী সরকার দিচ্ছে কোথায়? নিদেন পক্ষে আমজনতাকে খানিকটা রেহাই দিতে ফের এক দফা উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাইয়ের কথাও তাদের মুখে শোনা যায়নি এখনও।

ইউক্রেনের উপরে রুশ আগ্রাসনের প্রতিবাদে আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলি রাশিয়ার উপরে কড়া আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে। তার পাল্টা হিসেবে মঙ্গলবার ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল রফতানি বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে রাশিয়া। এর পরেই রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির কথা ঘোষণা করেন বাইডেন।

বিভিন্ন সূত্রের খবর, রাশিয়া-ইউক্রেন লড়াই এ ভাবে জ্বালানি-যুদ্ধের দিকে মোড় নেওয়ায়, আক্ষরিক অর্থেই আকাশ ছুঁতে পারে অশোধিত তেলের দাম। রাশিয়ার হুঁশিয়ারি, অশোধিত তেলের দর ব্যারেল প্রতি ৩০০ ডলারে পর্যন্ত যেতে পারে!

এই অবস্থায় পেট্রল, ডিজ়েল, রান্নার গ্যাসে দামের ছেঁকা এড়ানো নিয়ে চিন্তিত এ দেশের সাধারণ মানুষ। কিন্তু অন্তত এ দিন পর্যন্ত দাম না বাড়ার আপাত স্বস্তির পাশাপাশি তাদের প্রাপ্তি শুধু হরদীপের ‘শুকনো’ আশ্বাস। যা আবার পরে অনেকটাই ঢাকা পড়ে গিয়েছে নির্মলার উদ্বেগে।

পুরী বলেছেন, তেল সংস্থাগুলিই তেলের দর স্থির করবে। কিন্তু সেই সঙ্গে তেলের দর নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিশ্ব বাজার এবং যুদ্ধের পরিস্থিতির কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

দীপাবলির পরে থেকে এ দিন পর্যন্ত টানা ১২৪ দিন স্থির পেট্রল-ডিজ়েলের দাম। তবে এ দিন সন্ধ্যায় বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের (ব্রেন্ট ক্রুড) দাম ব্যারেল প্রতি ১৩২ ডলার ছাড়ায়। স্বাভাবিক ভাবেই দেশেও চড়ছে সংশয়ের পারদ। দেশে তেলের দাম স্থির থাকলেও, দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম এ দিন থেকে কেজি প্রতি ৫০ পয়সা বেড়ে গিয়েছে।

এই প্রসঙ্গে পুরী ও তেল প্রতিমন্ত্রী রামেশ্বর তেলি এ দিন সংবাদ মাধ্যমে মুখ খোলেন। তেলি জানান, তেলের দর নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এখনও বৈঠক করেনি সংস্থাগুলি। আর বিরোধীরা ঘুরপথে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আঙুল তুললেও, পুরী এ দিন দাবি করেন, ভোটের কথা ভেবে তাঁরা তেলের শুল্ক ছাঁটাই করেননি। দর স্থির করে সংস্থাগুলিই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, রাশিয়া ভারতকে কিছুটা সস্তায় (প্রায় ২৭ শতাংশ ছাড়ে) তেল রফতানির প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতের মোট আমদানির ১ শতাংশের সূত্র রাশিয়া। এই ছাড়ের প্রস্তাবে দিল্লি কী করবে, তা অবশ্য স্পষ্ট নয় এখনও। রাশিয়ার তেল রফতানি ঘিরেও আশঙ্কা ছড়াচ্ছে বিশ্বে। তারা কোন দেশকে তেল রফতানি করবে, সেটা তাদের বিষয় বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। আবার ইউরোপীয় কমিশনের বক্তব্য, যে দেশ হুঁশিয়ারি দেয়, তাদের উপরে তারা ভরসা করতে পারে না। বহুজাতিক তেল সংস্থা শেল ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, তারা রাশিয়া থেকে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি বন্ধ করেছে। এর উপরে আবার আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা।

এই আবহে অশোধিত তেল এবং সেই সূত্রে দেশেও জ্বালানির দর কোথায় পৌঁছবে, সেই আশঙ্কা গাঢ় হচ্ছে ক্রমশ। কারণ, জ্বালানির দর বাড়লে, তা ঠেলে তুলবে মূল্যবৃদ্ধির হারকেও। সে ক্ষেত্রে করোনার ধাক্কা সামলে সবে মুখ তুলতে শুরু করা ভারতীয় অর্থনীতির ফের গভীর সমস্যার মুখে পড়ার আশঙ্কা।

অন্য বিষয়গুলি:

Fuel Price Hike Russia Ukraine War
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy