ছবি এপি।
করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনীতি শুরু হয়ে গিয়েছে। একাধিক দেশ আগে ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তিও করে রেখেছে। কোনও কোনও দেশ একইসঙ্গে চার-পাঁচটি সংস্থার সঙ্গেও চুক্তি করেছে। কিন্তু করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের একটি ডোজ়ই যথেষ্ট, না কি একাধিক ডোজ় লাগবে, সেই চর্চা শুরু হয়েছে গবেষক মহলে।
চর্চার কারণ, ভ্যাকসিনের ডোজ় দু’বার দিতে হলে বিশ্বের সব দেশকে তা দেওয়া যাবে কি না এ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত গবেষণায় জানা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস রুখতে দু’বার ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। প্রথম বার দেওয়ার নির্দিষ্ট সময় পরে আরও এক বার দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলি ভ্যাকসিন-সঙ্কটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনিতে একটি ডোজ় দিলেও সারা বিশ্বকে ভ্যাকসিন দেওয়া একটি বড় কাজ বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। সেখানে ‘টু-শট’ ভ্যাকসিন হলে পুরো ব্যবস্থাই আরও জটিল হবে। যার প্রভাব পড়বে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে। এক ইমিউনোলজিস্টের কথায়, ‘‘ভ্যাকসিন গবেষণায় যারা এগিয়ে, তাদের অনেকেই টু-শট ভ্যাকসিনের কথা ভাবছে। তবে তারা এও মনে করছে, এক বার ভ্যাকসিন দিলেই হয়তো সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের মধ্যে প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হতে পারে।’’ উৎপাদন ও সরবরাহের জটিলতার কথা ভেবে একাধিক সংস্থা আবার ‘সিঙ্গল ডোজ়’ তৈরির দিকে জোর দিচ্ছে। এক ভাইরোলজিস্টের কথায়, ‘‘কিন্তু করোনা সংক্রমণের ধরন দেখে মনে হচ্ছে একাধিক ডোজ় দিতে হতে পারে।’’
নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী পিটার সি ডোয়ার্টি এ বিষয়ে আনন্দবাজারকে জানাচ্ছেন, করোনাভাইরাস যদি থেকে যায় বা এর সংক্রমণ চলতে থাকে, তা হলে এমন পরিস্থিতি হতে পারে যে বার্ষিক ভ্যাকসিনের ‘বুস্টার শট’-এর (প্রতিরোধ শক্তিকে জোরদার করা) প্রয়োজন পড়ল। তাঁর কথায়, ‘‘প্যাথোজেনের সঙ্গে লড়ার দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধী ক্ষমতা কী ভাবে তৈরি করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। এমনও হতে পারে এক বার একটি ভ্যাকসিন দিয়ে এক মাস বা নির্দিষ্ট সময় পরে আরও একটি বুস্টার দিতে হল, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে।’’ এখন যে সব করোনা ভ্যাকসিন গবেষণার দিক থেকে প্রথম সারিতে রয়েছে, তাদের মধ্যে একাধিকই ‘প্রাইম বুস্ট’ (এক বার প্রাথমিক ভ্যাকসিন দিয়ে ফের কিছু দিন পরে একই যৌগ বা তার কাছাকাছি অন্য যৌগ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দিয়ে শরীরের প্রতিরোধী ক্ষমতা ‘বুস্ট’ করা) বলে জানাচ্ছেন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী। অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর সংক্রামক রোগ চিকিৎসক সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘প্রাইম বুস্টের ক্ষেত্রে দু’বার আলাদা আলাদা ইমিউনোজেন ব্যবহার করা যায়। ইয়েলো ফিভারে এক বারই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। বিসিজি-ও তাই। কিন্তু হেপাটাইটিস-বি-সহ একাধিক রোগে আবার প্রাইম বুস্ট লাগে।’’
আরও পড়ুন: মোদীর রবীন্দ্রভক্তির পিছনে কোন অঙ্ক, জল্পনা
তবে অনেকেরই মতে, ভ্যাকসিনের ডোজ় ক’বার দিতে হবে, সেটা আলোচ্য হলেও সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাল ভ্যাকসিন বাজারে আসাটা। শুধু তাই নয়, সব দেশ যাতে সেই ভ্যাকসিন পায়, তা-ও সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন। কারণ, ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিন নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে। নাগরিক পিছু আমেরিকা যেখানে ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ় বুক করেছে, সেখানে ইংল্যান্ড করেছে পাঁচটি ডোজ়! এক অর্থনীতিবিদের কথায়, ‘‘এক বার দিতে হলে তবু হয়তো উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশে ভ্যাকসিন পৌঁছবে। কিন্তু দু’বার করে দিতে হলে ভ্যাকসিন ভাঁড়ারে সঙ্কট শুরু হতে পারে। কারণ এর উৎপাদন নির্দিষ্ট।’’ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এর এমেরিটাস-বিজ্ঞানী নরেন্দ্র কে মেহরা বলছেন, ‘‘এক বার দিলেই হবে না ছ’মাস অন্তর আবার দিতে হবে, সেটা পরে দেখা যাবে। আগে ভাল ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে বাজারে আসুক! এই মুহূর্তে সেটাই বড় প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy