Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

‘ভারত বাঁচাও’ না ‘রাহুল ফেরাও’

দিল্লির বুকে প্রায় তিরিশ ফুটের এত বড় কাট-আউট শেষ কোন নেতার কবে দেখেছেন, মনে পড়ছে না কংগ্রেসেরই নেতাদের।

দিল্লির রামলীলা ময়দানে আজ, শনিবার কংগ্রেসের ভারত বাঁচাও জনসভা। তারই প্রস্তুতি। —নিজস্ব চিত্র

দিল্লির রামলীলা ময়দানে আজ, শনিবার কংগ্রেসের ভারত বাঁচাও জনসভা। তারই প্রস্তুতি। —নিজস্ব চিত্র

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৫৪
Share: Save:

বৃষ্টিভেজা দুপুরে আকাশ ছুঁতে চাইছে রাহুল গাঁধীর কাট-আউট।

দিল্লির বুকে প্রায় তিরিশ ফুটের এত বড় কাট-আউট শেষ কোন নেতার কবে দেখেছেন, মনে পড়ছে না কংগ্রেসেরই নেতাদের। রামলীলা ময়দানের অন্য প্রান্তে গাঁধী পরিবারের তিন সদস্য সনিয়া গাঁধী, রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার বড় কাট-আউটও আছে। কিন্তু মঞ্চের ঠিক ডান দিকে একা রাহুলের পেল্লায় কাট-আউট কংগ্রেস নেতাদের যেন জানিয়ে দিচ্ছে, ফের সভাপতি পদে ফিরছেন সনিয়া-পুত্র। আগামিকালের ‘ভারত-বাঁচাও’ জনসভা তারই প্রস্তুতি।

গত কয়েক দিন ধরেই কংগ্রেস শিবিরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে রাহুলকে ফেরানোর তোড়জোড়ের কথা। কিছু ঘনিষ্ঠ নেতাকে সনিয়া জানিয়ে দিয়েছেন, রাহুলের ইস্তফার পর দলের অনুরোধে তিনি অন্তর্বর্তী সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। এ বারে পাকাপাকি সভাপতি প্রয়োজন। নেতারা সনিয়াকে বলেছেন, গাঁধী পরিবারেরই কাউকে দায়িত্বে থাকতে হবে। দলের অনেকেই মনে করেন, রাহুল যখন আগ্রহী নন, প্রিয়ঙ্কাই সে দায়িত্ব নিতে পারেন। কিন্তু সনিয়া সে প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন। দলের নেতাদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি, সনিয়া ফের রাহুলকেই চাইছেন। রামলীলা ময়দানে রাহুলের কাঁধের উচ্চতা বাড়িয়ে কি সেই বার্তাই দিতে চাইছেন সনিয়া!

আরও পড়ুন: রাহুলের বিরুদ্ধে সরব স্মৃতি-ব্রিগেড

রাহুল জমানায় দলের যে সব নেতা সামনের সারিতে এসেছেন, ইশারা বুঝে গত কয়েক দিন ধরেই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তাঁরা। ‘রাহুল ফিরে আসুন’ প্রচার শুরু হয়েছে। জেলে থাকা কালে গাঁধী পরিবার বরাবর পাশে থেকেছে পি চিদম্বরমের। তিহাড়ে গিয়ে দেখাও করেছিলেন রাহুল-প্রিয়ঙ্কা। চিদম্বরম আজ এক সক্ষাৎকারে বলেন, দলের ভার নেওয়া উচিত রাহুলে। কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীরাও বলছেন এ কথা। ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেলের পরে রাজস্থানের অশোক গহলৌতও বলেছেন, ‘‘একমাত্র রাহুল গাঁধীই নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের টক্কর নিতে সক্ষম। মোদীর বিকল্প রাহুলই।’’

আজই ছিল সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিন। লোকসভা ও রাজ্যসভায় গোটা বিজেপি নেতৃত্ব ঝাঁপালেন রাহুলের বিরুদ্ধে। কখনও মোদীকে ‘মোদীজি’ ছাড়া সম্বোধন করেন না রাহুল। আজ টুইটে ‘জি’ সম্বোধনটিও তুলে দিলেন রাহুল।

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র বদলে ‘রেপ ইন ইন্ডিয়া’ মন্তব্য নিয়ে গোটা বিজেপি শিবির আজ যখন রাহুলকে ক্ষমা চাইতে বলছে, কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি টুইটে লিখলেন, ‘‘মোদীর ক্ষমা চাওয়া উচিত। উত্তর-পূর্বে আগুন

জ্বালানোর জন্য, অর্থনীতি ধ্বংসের জন্য, আর এই বক্তৃতার জন্য...।’’ টুইটের সঙ্গে মোদীর একটি পুরনো ভিডিয়ো জুড়ে দেন রাহুল। যে ভিডিয়োতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে মোদীকে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘দিল্লি এখন ধর্ষণের রাজধানী হয়ে গিয়েছে।’’

আসলে আগামিকালের সভার আগে রাহুল আজ স্পষ্ট করে দিলেন, মোদী-শাহ যতই মেরুকরণের দিকে আলোচনা মুখ ঘোরাতে চান, বেহাল অর্থনীতি, হিংসা-বিভাজন, নারী-সুরক্ষার মতো মৌলিক বিষয়ের প্রচারেই অটল থাকবেন তিনি। তাই গোটা লোকসভা নির্বাচনে যে বিজেপি ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’ স্লোগান তুলে বাজি মারল, সেটিকেই পাল্টে নিয়ে আগামিকাল কংগ্রেসের স্লোগান হবে, ‘মোদী হ্যায় তো মন্দী হ্যায়’। অর্থাৎ, মোদী বলেই মন্দা।

কিন্তু যে রাহুল ক’দিন আগেই কাউকে না-জানিয়ে বিদেশে এক মাসের ছুটি কাটিয়ে এসেছেন, লোকসভার পর দায়িত্ব ছেড়ে পালিয়েছেন, তাঁকে নিয়ে এত মাতামাতিতে কংগ্রেসেরই অনেকে খুশি নন। দলের এক নেতা বলেন, ‘‘পুত্রমোহে সনিয়া হয়তো রাহুলকে ফের ক্ষমতার কেন্দ্রে আনতে চান, কিন্তু রাহুল নিজে কি রাজি? পদে বসলেও পাকাপাকি দায়িত্ব সামলাবেন কি?’’ কংগ্রেসের অনেকের মত, রাহুলকে প্রতিপক্ষের নেতা হিসেবে চান খোদ মোদীই। তাতে বিজেপিরই লাভ। সে কারণে আজ সংসদের শেষ দিনেও রাহুলকে নিশানা করে তাঁকেই প্রতিপক্ষের মুখ করে তুলল বিজেপি।

অন্য বিষয়গুলি:

Rahul Gandhi Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy