—প্রতীকী ছবি।
ভারতে থাকার শর্ত পূরণ করতে পারেননি। তাই আধার আইন, ২০১৬-র ২৮এ ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আধার নম্বর নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে— এই মর্মে নোটিস পাওয়ার দাবি করেছেন এ রাজ্যের অনেক বাসিন্দা। ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমে নোটিসের ছবি দিয়ে (যার সত্যতা আনন্দবাজার পত্রিকা যাচাই করেনি) উৎকণ্ঠাও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। যার জেরে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে জনমানসে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা সম্প্রতি ফের দেশে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) রূপায়ণের বার্তা দেওয়ায়, গোটা বিষয়টি ঘিরে আরও বেশি সংশয় দানা বাঁধছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। মাথা চাড়া দিচ্ছে এমন নোটিসের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ও জল্পনা।
তার উপর দীর্ঘ দিন আগে (অন্তত ১০ বছর) আধার করেছেন যাঁরা, তাঁদের আধার কর্তৃপক্ষ (ইউআইডিএআই) বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ, চোখের মণির ছবি)-সহ অন্যান্য তথ্য যাচাই বা ‘আপডেট’ করতে বলেছেন। যাতে সাম্প্রতিক তথ্য রাখা থাকে সেখানে। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে তথ্য সংশোধন করে নিতে বলা হয়েছে। ফলে ইউআইডিএআই-এর বার্তা অনুযায়ী আধার যাচাই না করলে আধার নম্বর নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে কি না, তা নিয়েও ছড়াচ্ছে সংশয়। সব মিলিয়ে আধার ঘিরে বাড়ছে উদ্বেগ আর ধোঁয়াশা।
সমাজমাধ্যমে ঘুরতে থাকা আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ার নোটিসের ‘লেটারহেড’ দেখে অবশ্য সোমবার প্রাথমিক ভাবে ইউআইডিএআই সূত্রের দাবি, সেটি ভুয়ো। সূত্রটির বক্তব্য, কারও ভারতে থাকার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও এ ভাবে আগেই আধার নম্বর নিষ্ক্রিয় করা হয় না। তিনি বিদেশি বলে অভিযোগ উঠলে, তাঁকে প্রথমে এ দেশে তাঁর নাগরিকত্বের দাবি প্রমাণের সুযোগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া আধার সংশোধন বাধ্যতামূলক নয়। ফলে তা না করা থাকলে সেটি নিষ্ক্রিয় করার কোনও নির্দেশ এখনও পর্যন্ত নেই।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো নোটিসে বলা হয়েছে, আধার নিষ্ক্রিয় করা নিয়ে অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইউআইডিএআইয়ের আঞ্চলিক দফতর কিংবা আধারের ওয়েবসাইটে তা জানাতে হবে। সংশ্লিষ্ট মহলের খবর, এমন নোটিসপ্রাপ্ত বেশ কয়েক জন আধার গ্রাহক কলকাতার টেলিফোন ভবনে ইউআইডিএআইয়ের শাখা দফতরে উপস্থিত হয়েছেন। অনেকে সেখানে ফোনও করছেন বলে জানা গিয়েছে। সেই সব গ্রাহকেরা এ নিয়ে সরকারি ভাবে অভিযোগ বা বক্তব্য জানানোর পরে রাঁচীর আঞ্চলিক দফতরে বিষয়টি জানানো হবে বলে ওই শাখা অফিস জানিয়েছে তাঁদের।
এ বিষয়ে বিভিন্ন মহলের বক্তব্য, গত কয়েক দিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে আধার নিষ্ক্রিয় হওয়া নিয়ে চর্চায় দুশ্চিন্তা বাড়ছে। এর কারণ শুধু ভর্তুকি পাওয়ার জন্য নয়, এখন নানা সরকারি পরিষেবায় আমজনতার কাছে আধার নম্বর চাওয়াটা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমনকি এটি দেশবাসীর বাধ্যতামূলক পরিচয়পত্র না হলেও, বহু বেসরকারি পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও তা দিতে হয়। ফলে সব মিলিয়ে আধার নম্বর আচমকা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে কার্যত জলে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে গ্রাহকদের মনে।
সোমবার অবশ্য এ নিয়ে ইউআইডিএআইয়ের তরফে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে তাদের সূত্রের খবর, যে ‘লেটারহেড’ বা বয়ান নোটিসে রয়েছে, তা প্রাথমিক ভাবে ভুয়ো বলেই মনে হয়েছে তাঁদের। এর কারণ আধার নাগরিকত্ব প্রমাণের পরিচয়পত্র নয়।
নিয়ম অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আওতাভুক্ত ‘ফরেন রেজিস্ট্রেশন অফিস’ কারও ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ না থাকার কথা জানালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আধারের আঞ্চলিক দফতরে (পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের ক্ষেত্রে যেমন রাঁচী)ডেকে নাগরিকত্বের প্রমাণ সংক্রান্ত নথি জমা দিতে বলা হয়। তা দিতে না পারলে তখন আধার নম্বর নিষ্ক্রিয় করার প্রশ্ন ওঠে।
সূত্রটির দাবি, অনেক সময় এ দেশে থাকলেও, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কেউ কেউ প্রয়োজনীয় নথি জমা দেন না। সে ক্ষেত্রেও এ ভাবে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।
অন্য দিকে আধার যাচাই নিয়ে সংশয় থাকলেও, ইউআইডিএআই সূত্রের খবর, এই কাজ বাধ্যতামূলক নয়। অনেকেরই বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আঙুলের ছাপ মলিন বা অস্পষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক সময় ঠিকানাও বদলে যায়। সেই সব তথ্য এখনকার সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সংশোধন করে নেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। যে কোনও আধার নথিভুক্তিকরণ কেন্দ্রে (এই কেন্দ্রগুলি হল, আধার সেবাকেন্দ্র, ডাকঘর বা গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র, ব্যাঙ্ক বা বিএসএনএলের শাখা ইত্যাদি) গিয়ে ইউআইডিএআই নির্ধারিত ফি বা মাসুল দিয়ে এই সব পরিবর্তন নথিভুক্ত করা যাবে।
পাশাপাশি, কেউ শারীরিক ভাবে চলাফেরায় অক্ষম বা অসুস্থ হলে (প্রবীণ নাগরিক-সহ), তার উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে বাড়িতেও সেই পরিষেবা পেতে পারেন ইউআইডিএআই নির্ধারিত নির্দিষ্ট মাসুল দিয়ে।
এ ছাড়া চাইলে অনলাইনেও ঠিকানা সংশোধন করা যাবে। সে ক্ষেত্রে আগামী ১৪ মার্চ পর্যন্ত ঠিকানা সংশোধন করা সম্ভব হবে নিখরচাতেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy