বিজেপিতে সদর দফতরে যোগ দেওয়ার পরে শোভন-বৈশাখী।— নিজস্ব চিত্র।
ঘাসফুল শুকিয়ে এসেছিল আগেই। কাননে পদ্মের চাষ শুরু হবে বলে জল্পনা চলছিল বেশ কয়েক মাস ধরে। বুধবার সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ফুটে উঠল পদ্মফুল। বিজেপির সর্বভারতীয় সদর দফতরে গিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক সেরে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। যোগ দিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শোভনদের স্বাগত জানিয়ে মুকুল রায় বললেন, কলকাতা পুরসভা তৃণমূলের হাতছাড়া হওয়া নিশ্চিত হয়ে গেল আজ। আর ছেড়ে আসা দলকে তীব্র আক্রমণ করে শোভন বললেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনেই গণতন্ত্রের হত্যা ঘটিয়ে দেওয়া হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে।
শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য না করলেও, এ দিন বেহালার একটি অনুষ্ঠানে তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের পাশেই দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘পার্থদাকে বলব রত্নাকে বেশি করে কাজে লাগাতে। তুমি দুঃখ পেয়ো না রত্না। তোমার শ্বশুরবাড়ি, বাপেরবাড়ি, তৃণমূল পরিবার—সকলেই তোমার পাশে আছে। যারা রাজনীতি করে, তাদের দায়বদ্ধতা থাকা উচিত। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা না থাকলে রাজনীতি করা শোভা পায় না। কখনও কেউ মুখোশ পরে থাকে। অনৈতিক কাজ করা কখনওই উচিত নয়।’’
যে সাংবাদিক সম্মেলনে এ দিন শোভনকে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাগত জানানো হয়েছে, সেখানে কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের ভূয়সী প্রশংসা করেন দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায়। শোভনের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন এবং তাঁর নানা সাফল্যের কথা তুলে ধরেন মুকুল। শোভন বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় কলকাতা পুরসভা তৃণমূলের হাতছাড়া হওয়া নিশ্চিত হল বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আর শোভন বলেন যে, তৃণমূল এখন নেতিবাচক রাজনীতি করছে। তাই তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপির হাত ধরেছেন। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বের প্রতি আস্থাও ব্যক্ত করেন বেহালা পূর্বের বিধায়ক। তৃণমূলের রাজনীতির নিন্দা করে শোভন এ দিন পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। যে ভাবে পঞ্চায়েত ভোট হয়েছিল, দলের মধ্যেই তিনি তার প্রতিবাদ করেছিলেন বলে শোভন জানান।
যোগদান পর্ব শেষে মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে ফের পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রসঙ্গে মুখ খোলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। ‘যাঁর ইঙ্গিত ছাড়া তৃণমূলে কোনও কিছুই হয় না’, তাঁকেই তিনি জানিয়েছিলেন যে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের এবং প্রশাসনের ভূমিকা মোটেই সন্তোষজনক নয়— বলেন শোভন। তাঁর কথায় কেউ কান দেননি বলেও শোভন অভিযোগ করেন।
এ দিন বিকেল ৪টে নাগাদ সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তাঁদের আনুষ্ঠানিক ভাবে দলে স্বাগত জানানো হবে বলে প্রথমে জানা গিয়েছিল। সেই অনুযায়ী ৩টে ২০ মিনিট নাগাদ নিজেদের হোটেল থেকে বেরিয়ে বিজেপি সদর দফতরের দিকে রওনা দেন শোভন ও বৈশাখী। সাড়ে ৩টের মধ্যেই তাঁরা বিজেপি সদর দফতরে পৌঁছন। দলের সর্বভারতীয় কার্যকরী সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন, দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায় সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন। এক দফা বৈঠকের পরে শোভন ও বৈশাখীকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে হাজির হন।
মঙ্গলবার বিকেল নাগাদ কলকাতা থেকে রওনা হন শোভন-বৈশাখী। রাজধানীতে পৌঁছে গিয়েছিলেন গভীর রাতেই। রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের তরফ থেকে মুকুল রায়ও শোভন-বৈশাখাীর যোগদান উপলক্ষে দিল্লি পৌঁছেছেন। মুকুলের এ দিন দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল না। শোভনদের যোগদান উপলক্ষেই তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে খবর।
আরও পড়ুন: রাতের উড়ানে দিল্লি গেলেন শোভন-বৈশাখী, আজ যোগদান বিজেপিতে
লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছিলেন। শোভন-বৈশাখীকে দলে স্বাগত জানিয়েছেন বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব দিলীপ ঘোষ।
মঙ্গলবার রাতেই জানা গিয়েছিল শোভন-বৈশাখীর যোগদানের খবর। এদিন আচমকা দেবশ্রী রায়ও পৌঁছে যান। তিনিও বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন কিনা, তাই নিয়ে জল্পনা চলছে।
এদিন মুকুল রায় সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘‘শোভন চট্টোপাধ্যায় ৩৪ বছর ধরে জনপ্রতিনিধি ছিলেন গুরুদায়িত্ব সামলে আসছেন। তিনটে দফতর সামলাতেন। এখনও তিনি বিধায়ক রয়েছেন। মমতার দলের ভিত শক্ত করেন তিনি, যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা স্বীকার করেন না। শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপিতে আসার ফলে বিজেপির সুবিধে হল। কলকাতা কর্পোরেশনের ভোট বিজেপি অক্লেশে জিতবে।’’
শোভন চট্টোপাধ্যায় এদিন বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের সময় থেকেই ভোটে বিরোধীদের বাধা দেওয়া হয়েছে। আমি তখনই বলেছিলাম, এটা ঠিক হচ্ছে না। এই মুহূর্তে আমি ইতিবাচক শক্তির হাত ধরতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy