মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক।
নতুন শিক্ষা নীতি চালু করে দেশ জুড়ে হিন্দি ভাষা চাপানোর অভিযোগে গোড়াতেই নিশানার মুখে পড়ল নরেন্দ্র মোদী সরকার। শুক্রবারই মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক। তার পরেই তাঁর হাতে নতুন শিক্ষা নীতির খসড়া জমা পড়েছে। তাতে স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর এ নিয়েই প্রতিবাদে সরব দক্ষিণের রাজ্যগুলি।
এনডিএ-র শরিক এডিএমকে এবং পিএমকে জানিয়েছে, অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলির উপর জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া হলে দেশের বহুত্ববাদী চিন্তাধারায় আঘাত লাগবে। তামিলনাড়ুর এডিএমকে সরকারের শিক্ষামন্ত্রী কেএ সেঙ্গোত্তাইয়ান জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা কেন্দ্রের এই নীতি মানবেন না। কেন্দ্রের শিক্ষা নীতির খসড়ায় স্কুলে তিনটি ভাষা শেখানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেঙ্গোত্তাইয়ান বলছেন, ‘‘তামিলনাড়ু দু’টি ভাষার নীতি নিয়েই চলবে। শুধু তামিল ও ইংরেজিই শেখানো হবে।’’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ই পলানিস্বামী নিজে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখছেন। ডিএমকে নেতা এমকে স্ট্যালিন বিজেপিকে বিপর্যয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এমডিএমকে নেতা ভাইকো-র হুমকি, ফের ভাষাযুদ্ধ শুরু হবে। কমল হাসনের বক্তব্য, ‘‘আমি নিজে হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেছি। কিন্তু হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।’’ টুইটারে #StopHindiImposition আন্দোলনও শুরু হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, শিক্ষায় গৈরিকীকরণের লক্ষ্যে সঙ্ঘ পরিবারের বরাবরের কৌশল— ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান’। নয়া শিক্ষা নীতির খসড়ায় তার প্রতিফলন।
কী রয়েছে নতুন শিক্ষা নীতি বা ‘নিউ এডুকেশন পলিসি’-র খসড়ায়?
প্রাক্তন ইসরো চেয়ারম্যান কে কস্তুরীরঙ্গন কমিটির তৈরি খসড়া অনুযায়ী, স্কুল শিক্ষায় তিনটি ভাষা শেখানো প্রয়োজন। হিন্দিভাষী রাজ্যে হিন্দি, ইংরেজির পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীরা যে কোনও ভাষা বেছে নিতে পারে। অ-হিন্দিভাষী রাজ্যে হিন্দি, ইংরেজির সঙ্গে ছাত্রছাত্রীরা একটি আঞ্চলিক ভাষা শিখতে পারে। যার অর্থ, তামিলনাড়ু, অন্ধ্র, কেরলের মতো রাজ্যেও হিন্দি শেখা বাধ্যতামূলক।
তামিলনাড়ুতে স্বাধীনতার আগেও হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে। স্বাধীনতার পরেও তা থামেনি। ১৯৬৫-তে হিন্দি-বিরোধী আন্দোলন সংঘর্ষের চেহারা নেয়। এর রেশ ছড়ায় আরও তিন দক্ষিণী রাজ্য তৎকালীন অন্ধ্রপ্রদেশ, মাইশোর এবং কেরলে। ১৯৮৬-তে শিক্ষা নীতি তৈরি হয়, যা সংশোধন হয় ১৯৯২-এ। বিজেপি ২০১৪-র ইস্তাহারেই নতুন শিক্ষা নীতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দ্বিতীয় বার সরকারে এসে প্রথম একশো দিনের মধ্যেই নতুন শিক্ষা নীতি চূড়ান্ত করতে চাইছে সরকার।
নতুন শিক্ষা নীতির খসড়া
• স্কুলের আগে তিন বছরের প্রাক্-স্কুল শিক্ষা
• ১০+২ স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার বদলে ৫+৩+৩+৪ ব্যবস্থা
• প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি ও তার আগের তিন বছর মিলে পাঁচ বছরে ভিত তৈরি
• তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি প্রস্তুতি পর্ব
• ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি মাঝারি পর্বের শিক্ষা
• নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি মাধ্যমিক শিক্ষা, প্রতি বছর ভাগ করা হবে দু’টি সেমেস্টারে
• উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বলে কিছু থাকবে না
• অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দি বাধ্যতামূলক
• পাঠ্যক্রমে সামগ্রিক শিক্ষা, যুক্তিবাদী ভাবনা, সৃজনশীলতা, দলগত ভাবে কাজ, সামাজিক দায়বদ্ধতা, একাধিক ভাষা শিক্ষা ও ডিজিটাল শিক্ষায় জোর
• তিন বছরের বদলে চার বছরের অনার্সের স্নাতক স্তর
• দু’বছর পরে ডিপ্লোমা, তিন বছর পরে অনার্স ছাড়া ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ
• শিক্ষার অধিকার আইনে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নিখরচায় বাধ্যতামূলক শিক্ষা
জানুয়ারিতেই শোনা গিয়েছিল, নয়া শিক্ষা নীতিতে এমন সুপারিশই থাকবে। কিন্তু তখনকার মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর তা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। এ বার খসড়া নীতি প্রকাশ হতে দেখা যাচ্ছে, সেটাই বাস্তব। যদিও বর্তমান মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী নিশঙ্ক এবং জাভড়েকর আজ বলেন, এটা শুধুই খসড়া। মোদী সরকারের বরাবরের অবস্থান, সব ভারতীয় ভাষার বিকাশ। তাই হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা ঠিক নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy