সনিয়া গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা-বিধানসভায় মহিলাদের জন্য এক তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের বিল পাশ করানোর জন্য গত ছ’বছরে দু’বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছেন তিনি। সেই সনিয়া গান্ধীই এ বার লোকসভায় মহিলা বিল নিয়ে বিরোধীদের তরফে বিতর্কের সূচনা করতে পারেন বলে মঙ্গলবার কংগ্রেসের একটি সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।
লোকসভা এবং বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভায় এক তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের জন্য মঙ্গলবার পুরোদস্তুর নতুন বিল এনেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। যার পোশাকি নাম, ‘নারী শক্তি বন্ধন’ অধিনিয়ম। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল ১২৮তম সংবিধান সংশোধনী বিল হিসাবে তা লোকসভায় পেশ করেন। কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে তাঁর বক্তৃতায় মহিলা বিল পেশের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘২০১০ সালে মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মহিলা সংরক্ষণ বিল সংসদের এই কক্ষে পাশ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এরা (মোদী সরকার) আমাদের কৃতিত্ব দিতে চায় না।’’
অন্য দিকে, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বিল পেশের সময় জানান, ১৩ বছর আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের আমলেই মহিলা বিল সংসদের উচ্চকক্ষে পাশ হয়ে গিয়েছিল। ‘জবাবে’ মোদী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘‘সেই সরকারের আর অস্তিত্ব নেই। বিলটির মেয়াদও শেষ হয়ে গিয়েছে।’’ এই চাপানউতরের আবহে, বুধবার থেকে লোকসভায় মহিলা বিল নিয়ে বিতর্ক শুরু হতে পারে। সেখানে রায়বরেলীর কংগ্রেস সাংসদ সনিয়াকে সামনে রেখেই কংগ্রেস শিবির ‘মোদীর কৃতিত্বে ভাগ বসানোর’ চেষ্টা করতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা।
প্রসঙ্গত, সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগের দিন রবিবার প্রথামাফিক ডাকা সর্বদল বৈঠকে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে কোনও কথা জানায়নি কেন্দ্র। এমনকি, মঙ্গলবারের আলোচ্যসূচিতেও প্রথমে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অধিবেশন শুরুর পরে ‘সাপ্লিমেন্টরি লিস্ট অফ বিজনেস’-এ ১২৮তম সংবিধান সংশোধনী বিল হিসাবে মহিলা সংরক্ষণের বিলটি পেশ করার কথা জানানো হয়। যদিও বিল পেশের সময় প্রথামাফিক খসড়া প্রতিলিপি সাংসদদের দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
মঙ্গলবার বিল পেশের আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘‘অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলেই মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সংসদের প্রয়োজনীয় সংখ্যা না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। ঈশ্বর সেই পবিত্র কর্তব্য পালনের জন্য আমাকে বেছে নিয়েছেন।’’
২০২৭ সালের আদমসুমারি প্রক্রিয়া শেষের পরেই বিল কার্যকরের কথা বিলের প্রস্তাব রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিল ২০২৯ সালের আগে কার্যকরের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই ধারণা সংবিধান বিশেষজ্ঞদের একাংশের। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ মঙ্গলবার বলেন, ‘‘এই বিল মোদী সরকারের নির্বাচনী চমক ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে জনসুমারি বা আসন পুনর্বিন্যাস, কোনওটাই হবে না।’’ আইনমন্ত্রীর পেশ করা বিলে বলা হয়েছে, ২০৪৭ সালের মধ্যে অর্থাৎ স্বাধীনতার শতবর্ষের আগে ভারতকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য অর্জনের জন্য মহিলাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। সেই লক্ষ্যে ১৫ বছরের জন্য মহিলাদের জন্য লোকসভা, রাজ্যসভায় আসন সংরক্ষণের ‘সীমাবদ্ধ অনুশীলন’ চালু হচ্ছে। বিল অনুযায়ী, প্রতিটি নিবার্চনে লোকসভা এবং বিধানসভাগুলির এক তৃতীয়াংশ আসন ‘মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত’ করা হবে।
তবে তফসিলি-জাতি-জনজাতির মধ্যে স্থায়ী ভাবে মহিলাদের জন্য কোনও লোকসভা-বিধানসভা আসন চিহ্নিত হবে না। বরং পুরসভা এবং পঞ্চায়েত ভোটের ধাঁচেই প্রতি নির্বাচনে পর্যায়ক্রমে এক তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হবে। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যেই। সংসদের ইতিহাস বলছে, প্রবল রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে গত আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে আটকে রয়েছে মহিলা সংরক্ষণ বিল। ১৯৯৬ সালে সিপিআই সাংসদ গীতা মুখোপাধ্যায় ‘প্রাইভেট মেম্বারস বিল’ হিসাবে মহিলা সংরক্ষণ সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। সে বছরই প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার সরকার প্রথম সংসদে বিলটি পেশ করতে উদ্যোগী হয়েছিল।
পরবর্তী কালে প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণে উদ্যোগী হয় কেন্দ্র। কিন্তু সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, জেডিইউ-র মতো দল মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত এক তৃতীয়াংশ আসনের মধ্যেই আলাদা ভাবে তফসিলি জাতি-জনজাতি এবং ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণ চালুর দাবি জানায়। সে সময় রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাবে বিল সংসদে পাশ করা যায়নি। ২০০৬ সালে ইউপিএ জমানায় নতুন করে বিল সংসদে পেশ করা হয়। কিন্তু সরকারের সমর্থক এবং বিরোধীদের একাংশের আপত্তির জেরে পাশ করা যায়নি। বস্তুত, ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়ার উদ্যোগে ২০১০ সালে বিলটি রাজ্যসভায় পাশের সময়েও সংসদের উচ্চকক্ষ রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy