কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে রাওয়ের ভূমিকা নিয়ে তাঁর জন্মশতবর্ষেও নীরব রইলেন সনিয়া গাঁধী। —ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পি ভি নরসিংহ রাওয়ের অবদানের কথা স্মরণ করলেন ঠিকই। কিন্তু কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে রাওয়ের ভূমিকা নিয়ে তাঁর জন্মশতবর্ষেও নীরব রইলেন সনিয়া গাঁধী। একই পথে হেঁটে রাহুল গাঁধীও প্রধানমন্ত্রী রাওয়ের ‘সাহসী আর্থিক সংস্কারের’ প্রসঙ্গ টানলেও কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে তাঁর ভূমিকা নিয়ে চুপ থেকেছেন।
কংগ্রেসে সনিয়া গাঁধীর জমানায় বরাবরই কংগ্রেসের সভাপতি বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাওয়ের ভূমিকা ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ ছিল। সনিয়া নিজে কোনও দিনই প্রকাশ্যে রাওয়ের ভূমিকা নিয়ে বিশেষ মুখ খোলেননি। আজ তেলঙ্গানা প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির আয়োজনে রাওয়ের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে সনিয়া তাঁর বার্তায় আর্থিক সংস্কারের পুরোধা হিসেবে রাওকে শ্রদ্ধা জানান। ১৯৯১-এর ২৪ জুলাই রাও সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিংহ আর্থিক সংস্কারের বাজেট পেশ করেছিলেন। এ দিন থেকেই তাই এক বছর ব্যাপী রাওয়ের শতবর্ষ পালন কর্মসূচি শুরু করেছে তেলঙ্গানা কংগ্রেস।
কংগ্রেস নেতাদের মতে, এই প্রথম সনিয়া জনসমক্ষে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাওয়ের ভূমিকা স্বীকার করে তাঁর প্রশংসা করলেন। বিজেপি যেমন জাতীয় স্তরে সর্দার বল্লভভাই পটেলকে গাঁধী পরিবারেরর কাছে ব্রাত্য হিসেবে তুলে ধরে নিজেদের আইকন করে তুলে চাইছে, তেমনই তেলঙ্গানায় মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও নরসিংহ রাওকে আইকন হিসেবে কংগ্রেসের থেকে কেড়ে নিতে উদ্যোগী। তিনি রাওকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়ার জন্য মোদী সরকারকে চিঠিও লিখেছেন। রাও পৃথক তেলঙ্গানা সমর্থন করেননি। সনিয়া পৃথক তেলঙ্গানার পথে হাঁটলেও তাতে রাজ্যে কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাভ হয়নি। এখন তাই বাধ্য হয়েই রাওকে আঁকড়ে ধরতে হচ্ছে কংগ্রেসকে।
কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে রাওয়ের ভূমিকা নিয়ে সনিয়া-রাহুল নীরব থাকলেও আজ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় রাওকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, কংগ্রেস সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী, দুই দায়িত্বই তিনি কুশলতার সঙ্গে সামলেছিলেন। প্রণব মনে করিয়ে দিয়েছেন, শুধু আর্থিক সংস্কার নয়, চিনের সঙ্গে সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার সমঝোতাও রাওয়ের আমলেই হয়েছিল। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীরা সেই ব্যবস্থাই অনুসরণ করেছেন। নরসিংহ রাওই এ পি জে আবদুল কালামকে পরমাণু পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করতে বলেছিলেন।
এ দিনের অনুষ্ঠানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বলেন, রাওকে আক্ষরিক অর্থেই ‘আর্থিক সংস্কারের জনক’ বলা চলে। এ দিন সনিয়ার মতো রাহুলও রাওয়ের আর্থিক সংস্কারের কথা মনে করিয়েছেন। কিন্তু রাজীব গাঁধীর মৃত্যুর পরে রাও যে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬- টানা পাঁচ বছর কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন, তার কোনও উল্লেখ সনিয়া-রাহুলের বার্তায় ছিল না।
কেন চাঁদ সদাগরের বাঁ হাতে মনসা-পুজোর মতো সনিয়া-রাহুলের রাও-প্রশংসা? কংগ্রেস নেতারা বলছেন, ১৯৯১-এ আর্থিক সংস্কার হলেও রাওয়ের আমলেই ১৯৯২-এ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রে আঘাত হেনেছিল। কারণ বাবরি কাণ্ডের সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাওয়ের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। সীতারাম কেশরীর দু’বছরের মেয়াদ বাদ দিলে ইন্দিরার মৃত্যুর পরে রাও-ই একমাত্র গাঁধী পরিবারের বাইরের ব্যক্তি, যিনি দীর্ঘ দিন কংগ্রেস সভাপতি থেকেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাঁচ বছরের মেয়াদ সম্পূর্ণ করেছেন। কিন্তু সনিয়া-ঘনিষ্ঠ শিবিরের মতে, রাওয়ের জমানায় কংগ্রেসের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও মাথাচাড়া দিয়েছিল। প্রণব অবশ্য আজ যুক্তি দিয়েছেন, রাজীব-হত্যার পরে রাও কঠিন সময়ে কংগ্রেসকে এককাট্টা রাখতে সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু দশ জনপথ ১৯৯৬-এর লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের হারের জন্যও রাওকেই দায়ী করে। এআইসিসি-র এক নেতা বলেন, “সে কারণেই এআইসিসি থেকে রাওয়ের জন্মশতবর্ষ পালন না করে তেলঙ্গানা প্রদেশ কংগ্রেসকে তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy