নয়াদিল্লি, ২০ মার্চ: দীর্ঘদিন পরে রাজ্যসভার দলনেতা তথা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের সংসদীয় দফতরে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীও। সূত্রের খবর, কফি পানের পাশাপাশি প্রায় আধঘণ্টা ধরে বিরোধী রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে দু’পক্ষের। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, মূলত আলোচনা হয়েছে গতকাল রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ সাকেত গোখলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের তথা তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর তুমুল বাকবিতন্ডা নিয়ে।
সনিয়া গতকাল অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি কংগ্রেস এবং তৃণমূল সাংসদের কাছে বুঝতে চান বিষয়টি ঠিক কী হয়েছিল। কংগ্রেসের প্রমোদ তিওয়ারি এবং রজনী পাটিল তাঁকে গোটা বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন। ছিলেন কংগ্রেসের আর এক সাংসদ দিগ্বিজয় সিংহও। এই আলোচনার সময় ডেরেকও ছিলেন আগাগোড়া। তিনিও আলোচনায় যোগ দেন। এই কথাবার্তা চলাকালীনই ঘরে ঢোকেন খড়্গে। তবে তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, এটি কোনও রুটিন বিরোধী সমন্বয় বৈঠক নয়। বিষয়ভিত্তিক আলোচনা। যেহেতু সাকেতের বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে রাজ্যসভাতেই, তাই রাজ্যসভার দলনেতা হিসেবেই খড়্গের ঘরে যান ডেরেক। এর সঙ্গে রাজ্যস্তরে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে বোঝাপড়ার কোনও সম্পর্ক নেই।
সাকেত অভিযোগ করেছিলেন, শাহের নির্দেশে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জমিদারের মতো দেশ চালাচ্ছে। আর রাজ্যসভায় পাল্টা আক্রমণে বাংলার রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে সরব হন অমিত শাহ। শুধু অমিত শাহই নন, যে ভাবে কিরেণ রিজেজু ও জে পি নড্ডা উঠে দাঁড়িয়ে সাকেতকে আক্রমণ করেছেন এবং যে ভাষা ব্যবহার করেছেন— তা নিয়ে সনিয়াকে জানানো হয়। পাশাপাশি কথা হয় সংসদের কৌশল নিয়েও।
গতকাল সাকেত তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘‘আমিও পরিশ্রম করে এসেছি। উনিও এসেছেন। উনিও সবরমতী জেলে ছিলেন। আমিও ছিলাম।’’ অমিত শাহের জেলে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলতেই উঠে দাঁড়িয়ে ওই মন্তব্যের আপত্তি জানান রাজ্যসভার দলনেতা জে পি নড্ডা। তিনি সাকেতকে মন্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলেন। একই পরামর্শ দেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ও। সাকেত জানান, শাহের নেতৃত্বে তানাশাহি (স্বৈরতান্ত্রিক শাসন) চলছে দেশে। তিনি কোনও ভাবেই ক্ষমা চাইবেন না। পরে চেয়ারম্যানের নির্দেশে রাজ্যসভার কার্যবিবরণী থেকে বিতর্কিত অংশগুলি বাদ দেওয়া হয়।
আজ বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতারা সাকেতকে তাঁর বক্তৃতার জন্য অভিনন্দন জানান। তালিকায় রয়েছেন শিবসেনার সঞ্জয় রাউত, আপ-এর সঞ্জয় সিংহ, কংগ্রেসের বিভিন্ন সাংসদরা। আজ ডিএমকে-র প্রতিবাদের জেরে রাজ্যসভা মুলতুবি হয়ে যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্মপদ্ধতি নিয়ে বিতর্কের উত্তর দিতে পারেননি শাহ। দোলা সেন কিছুটা ব্যঙ্গ করে বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সংক্রান্ত আলোচনায় দলের তরফ থেকে নির্ধারিত বক্তৃতাটি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু মাননীয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মনে হয় একটু বিরতি বা অবসরের প্রয়োজন ছিল! তবে যা বলার ঠিকই বলা হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)