গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বাবার ধার মেটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার জেরে যে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হবে, তা হয়তো ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করেননি নাজ়ার নামে এক ব্যক্তি। টাকা মেটাতে কোল্লামের লুইস নামে এক ব্যক্তির খোঁজে স্থানীয় সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। তার পরেই গোলযোগের সূত্রপাত।
অবশ্য মূল ঘটনা প্রায় ৪০ বছর আগের। ১৯৮০ সালে দুবাইয়ে থাকাকালীন নাজ়ারের বাবা আবদুল্লা তাঁর রুমমেট লুইসের থেকে এক হাজার দিরহাম (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২২ হাজার টাকা) ধার নিয়েছিলেন। তিরুঅনন্তপুরমের বাসিন্দা আবদুল্লা বিদেশ-বিভুঁইয়ে এসে আতান্তরে পড়েছিলেন অর্থাভাবে। চাকরি খুঁজতে এবং দিন যাপনের জন্যই লুইসের থেকে ধার করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
বেশ কিছু দিন পরে মেলে চাকরি। কিন্তু ততদিনে লুইসের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ১৯৮৭ সালে দেশে ফেরেন আবদুল্লা। তার পরেও বন্ধুর উপকার ভুলতে পারেননি। এ বছরের ২৩ জানুয়ারি মৃত্যু হয় আবদুল্লার। মৃত্যুর বছরদুয়েক আগে ঋণ না মেটানোর আক্ষেপ জানিয়েছিলেন পরিবারকে। তার পরে লুইসের খোঁজ শুরু হলেও হদিশ মেলেনি।
তবে মৃত্যুর আগে ছেলে নাজ়ারের কাছে শেষ ইচ্ছাস্বরূপ আবদুল্লা বলেছিলেন, যে ভাবেই হোক লুইসের টাকা যেন পরিশোধের বন্দোবস্ত করা হয়। তা হলেই স্বস্তি মিলবে। দায়মুক্ত হবেন তিনি।
বাবার আবদার উপেক্ষা করতে পারেননি নাজ়ার। কিন্তু যাঁর সম্পর্কে বিন্দুবিসর্গও জানেন না, তাঁর টাকা মেটাবেন কী ভাবে? এই নিয়েই বেজায় সমস্যায় পড়েন নাজ়াররা। শুধুমাত্র জানতেন, লুইসের বাড়ি কোল্লামে এবং তাঁর ভাইয়ের নাম বেবি। এটুকু তথ্যের উপরে নির্ভর করে কী ভাবে খুঁজে পাবেন সেই ‘অচেনা’ ব্যক্তিকে! প্রাথমিক ভাবে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে লুইসকে খুঁজে বার করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সফল হননি। শেষ পর্যন্ত একটি মলয়ালম সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়ার বিষয়টি মনস্থ করেন নাজ়াররা। গত ৩১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশিতও হয়। সেখানে তিনি জানান, লুইস কিংবা তাঁর ছোট ভাই বেবি যেন অবশ্যই যোগাযোগ করেন। টাকা পরিশোধের বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
সেই বিজ্ঞাপন দেখে এখনও পর্যন্ত অনেকেই নিজেকে লুইস বলে দাবি করেছেন। নাজ়ারের কথায়, ‘‘শেষ দু’দিন তো ক্রমাগত ফোন বেজেই চলেছে।’’ এমনকি ফোনে এক ব্যক্তি নিজেকে লুইসের ছেলে বলে পরিচয় দিয়ে জানান, তাঁদের টাকার প্রতি কোনও আগ্রহ নেই। আবার এক ব্যক্তি জানান, লুইস তাঁরই বাবা। গোটা পরিবার আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত। তাই টাকাটা ভীষণ প্রয়োজন।
দুবাইয়ে আবদুল্লাদের সঙ্গে থাকতেন এমন এক ব্যক্তির সম্প্রতি খোঁজ পেয়েছেন নাজ়ার। তিরুঅনন্তপুরমের বাসিন্দা রশিদ নামে ওই ব্যক্তি চিনতেন লুইসকে। ফলে বাবার ইচ্ছেপূরণে রশিদই এখনও শেষ ভরসা নাজ়ারদের।
ইতিমধ্যেই লুইসের পরিজন হিসেবে দাবিদারদের ছবি নিয়ে দেখা করার বার্তা দিয়েছেন নাজ়ার। পাঁচ জনের থেকে ছবিও মিলেছে। রশিদ অবশ্য জানিয়েছেন, ছবির পাঁচ জনের কেউই সেই লুইস নন, যাঁকে তাঁরা খুঁজছেন। তবে এখনই হাল ছাড়তে নারাজ নাজ়ার। তাঁর কথায়, ‘‘এত বছর আগে বাবাকে ধার দিয়ে সাহায্য করেছিলেন উনি। বাবার শেষ ইচ্ছা মোতাবেক তাঁকে খুঁজে বার করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’’ আরও কত জন লুইসের সঙ্গে দেখা হবে জানা নেই, কিন্তু সন্ধান-পর্ব চলবেই বলে জানিয়েছেন আবদুল্লা-তনয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy