মণিপুরের শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা শিশুর আঁকা ছবিতে লড়াইয়ের চিত্র। —নিজস্ব চিত্র।
পিছনের সবুজ পাহাড়ের মাথায় সূর্য ঝলকাচ্ছে আগের মতোই। কিন্তু সামনের দিকে পরিচিত ধানখেত, গরু, জমিতে লাঙল দেওয়া কৃষক, কুঁড়ে ঘরের সারি নেই। হারানো শৈশবের পেনসিলে ফুটে উঠেছে যুদ্ধের ছবি। মধ্যে দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার বুকে ব্যারিকেড। ও পারে গুলি চালিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে এ পারের বাসিন্দাদের। কোনও ছবিতে গ্রামরক্ষীদের সঙ্গে হামলাকারীদের হাতাহাতি। কোথাও বাঙ্কারের ছবি, কোথাও বন্দুকের।এমনকি শরণার্থী শিবিরে শিশুর তিন বছরের জন্মদিনে কেক কেটে সব বাচ্চা হাততালি দিয়ে গাইছে ‘বুলেট বুলেট বুলেট’!
মণিপুরের চূড়াচাঁদপুরের ঘরছাড়া শিশুদের আঁকা ছবিগুলোই বলে দিচ্ছে তাদের মনে কীভাবে বাসা বেঁধেছে আতঙ্ক। রাজ্য সমাজ কল্যাণ দফতরের হিসেবে এখন অন্তত ১২,৬৯৪ জন শিশু ত্রাণ শিবিরে দিন কাটাচ্ছে। সমাজ কল্যাণ দফতরের অধিকর্তা এন উত্তম সিংহ জানান, শিশুরা হয়তো তাৎক্ষণিক ভাবে বা দৃশ্যত আতঙ্কগ্রস্ত হয় না, কিন্তু ওদের মনের গভীরে সেই আতঙ্কের ছবি বাসা বাঁধে। শিশু মনোবিদ জিনা হেইগ্রুজাম জানান, ‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসর্ডার’ দীর্ঘায়িত হলে বাচ্চাদের মনে হতাশা ও উদ্বেগ বাসা বাঁধে। তাই তাদের মনেরবিভিন্ন স্তরে পৌঁছে কাটাতে হবে আতঙ্কের স্মৃতি। অঙ্কন ও নৃত্যের মাধ্যমেমন-বদলের চিকিৎসা সবচেয়ে ভাল কাজ দেয়।
লামডিং ত্রাণ শিবিরে ১১ বছরের এক কিশোর বন্দুক হাতে এক ব্যক্তির ছবি আঁকে। জানায়, এ হল শত্রু। ওই ছবি দেওয়ালে লাগিয়ে পেনসিল দিয়ে তাছিঁড়েখুঁড়ে ফেললে তবেই মন একটু শান্ত হবে। শিবিরে ৩ বছরের এক শিশুরজন্মদিনে সরকারের তরফেই কেক, টুপি, মোমবাতির আয়োজন করা হয়েছিল। কেক কাটার পরে আনন্দে তাল মিলিয়ে বাচ্চারা ছড়ার গান নয়, গাইল স্থানীয় ভাষায় যুদ্ধও প্রতিশোধের গান “বুলেট বুলেট বুলেট, নোংমাই বুলেট, নাংনা এইহাক্কি।”
এ দিকে মণিপুরে কুকি বিশিষ্ট জন ও নেতাদের হয়ে মামলা লড়া আইনজীবীদের মেইতেইদের তরফে ব্যাপক হেনস্থা করা হচ্ছে বলে দাবি করল কুকিদের যৌথ মঞ্চআইটিএলএফ। অভিযোগ, অধ্যাপক খাম খান সুয়ান হাউসিংয়ের আইনজীবী সোরাইসাম চিত্তরঞ্জনের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। তাঁর দুই জুনিয়র টিজিংগো ও সি ভিক্টরও নাগাড়ে হুমকি পাচ্ছেন। ফলে তাঁরা হাই কোর্টে আবেদন জানালেন আর হাউসিংয়ের হয়ে মামলা লড়বেন না। কুকিরা বলে, এ ভাবে আইনি সাহায্য পাওয়ার মৌলিক অধিকারও কেড়ে নিচ্ছে মেইতেইরা।
পশ্চিম ইম্ফল ও কাংপোকপির সীমানায় শনিবারও গুলির লড়াই হয়। তবে হতাহতের খবর আসেনি। ইম্ফলের নিউ লম্বুলেনে এখনও ২৪ জন কুকি থাকছিলেন। গত রাতে হঠাৎ করেই বাহিনী হানা দেয় সেখানে। বাসিন্দাদের নিজেদের সামগ্রী নেওয়ার সময়-সুযোগ না দিয়ে সোজা ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, জোর করে অপহরণের মতোই তাঁদের ঘরছাড়া করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy