জঙ্গি সাজানোর চেষ্টায় ছিল কমান্ডোরা?
নাগাল্যান্ডের মন জেলার ঘটনা নিয়ে সেনাবাহিনী ইতিমধ্যেই এক মেজর জেনারেলের নেতৃত্বে তদন্ত শুরু করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছেন, ওটিং গ্রামে নাগা গ্রামবাসীদের হত্যার ঘটনায় জড়িত প্যারা কমান্ডোরা সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা)-এ সুরক্ষা পাবেন না।
মন জেলার ঘটনায় আফস্পাকে ঢাল করে সেনারা ছাড় পেয়ে যেতে পারে বলে গত কালই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর। কিন্তু আজ সংসদে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করার পরে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, “নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন অমিত শাহ। জানিয়েছেন, অভিযুক্ত সেনাদের আফস্পা-র সুরক্ষা দেওয়া হবে না।” ওই বৈঠকে তাঁরা নিহত গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণ ও বিতর্কিত আফস্পা আইন পর্যালোচনা করে দেখার আবেদন জানিয়েছেন।
এ দিকে গত শনিবারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও সেনার গুলিতে জখম দুই ব্যক্তির পরিবারের লোকজন যে সব তথ্য সামনে এনেছেন, তাতে সে দিনের অভিযানের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে নাগাদের মনে। তাদের প্রভাবশালী সংগঠন কন্যাকের প্রশ্ন, ঘরমুখো খনি শ্রমিকদের মেরে তাদের দেহ অসমে নিয়ে গিয়ে কি জঙ্গি সাজানোর চেষ্টায় ছিল কমান্ডোরা?
নাগা জনজাতি কনিয়াকদের সংগঠনের দাবি, প্যারা কমান্ডোরা নিহত গ্রামবাসীদের পোশাক বদলানোর চেষ্টা করেছিল। দেহগুলি প্লাস্টিক ও বস্তা দিয়ে ঢেকে লুকিয়ে অসমে নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা হয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শী কিপওয়াং কোনিয়াক জানান, গুলির শব্দ শুনে তাঁরা কয়েক জন গ্রাম থেকে ছুটে যান ঘটনাস্থলে। গিয়ে দেখেন, সেনা জওয়ানেরা কয়েক জন নিহতের পোশাক বদলে ফেলেছে। দেহগুলি গাড়িতে বস্তা, প্লাস্টিকে ঢাকা দেওয়া। সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালানো এনএসসিএন আইএম দাবি করেছে, গ্রামবাসীদের মারার পরে নগ্ন করে জংলা পোশাক পরিয়ে জঙ্গি সাজানোর চেষ্টা করেছিল কমান্ডোরা। হাতেনাতে ধরে ফেলেন গ্রামের মানুষ। তাই তাদেরও গুলি করা হয়। কনিয়াকদেরও অভিযোগ, অসমে নিয়ে গ্রামের নিহত যুবকদের পোশাক পাল্টে দিয়ে, হাতে অস্ত্র গুঁজে দিয়ে জঙ্গি সাজিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল কমান্ডোদের। হয়তো মণিপুরের জঙ্গি হানায় জড়িত জঙ্গি হিসেবে নাগা যুবকদের ছবি দেখিয়ে পুরস্কারও পেয়ে যেত তারা। তাই কমান্ডোদের ব্যবহার করা গাড়িতে মণিপুরের ভুয়ো নম্বরপ্লেট লাগানো ছিল। কিন্তু গুলি চলার খবর পেয়ে গ্রামের মানুষ যে এত জলদি ঘটনাস্থলে হাজির হবেন, তা কমান্ডোরা ভাবেননি। তাই বাধা দেওয়ার চেষ্টা হয়। যে গাড়িতে আক্রমণ চালানো হয়েছিল, সেই গাড়ির কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করলে ফের কমান্ডোরা গুলি চালান। ফলে আরও সাত গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়।
কমান্ডোরা যে দুই গ্রামবাসীকে সঙ্গে করে অসমে পালান, তাঁদের ডিব্রুগড় মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক। সেইওয়াং এবং ইয়েইওয়াং নামে ২৩ ও ৩০ বছরের দুই যুবকের পরিবারের লোকজনের কথার সঙ্গে সেনার দাবি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের সংসদে বলা তথ্য মিলছে না। জখম দু’জনের আত্মীয়েরা জানাচ্ছেন, শনিবার যে সময় ঘটনাটি ঘটে, তখন বিকেল সাড়ে তিনটে। সূর্য ডোবেনি। ভালই আলো ছিল। ফলে গাড়িতে নিরস্ত্র গ্রামবাসীরা আসছে না সশস্ত্র জঙ্গিবাহিনী, তা বুঝতে না পারার কারণ নেই। তিরু ব্রিজ পার করে একটি নালার পাশে আসতেই একেবারে দিনের আলোয়, চার দিক থেকে ঘিরে ধরে সেইওয়াং-ইয়েইওয়াংদের গাড়ি ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। সেইওয়াং জানান, প্রায় ৩ মিনিট ধরে গুলি চালিয়েছিল কমান্ডোরা। সেই সঙ্গে রাইফেল গ্রেনেডও ছোড়ে। গাড়ির মধ্যে অন্যদের মৃতদেহের সঙ্গেই পড়ে থাকা জখম সেইওয়াং ও ইয়েইওয়াংকে টেনে মাটিতে ফেলে কমান্ডোরা। সেইওয়াং চোখের সামনে ভাই থাকওয়াংয়ের মৃতদেহ দেখে জ্ঞান হারান।
মণিপুরের নাগা অধ্যুষিত উখরুলের প্রাক্তন বিধায়ক স্যামুয়েল রাইসম সংসদকে মিথ্যা তথ্য দেওয়া ও দেশকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ এনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। নাগাল্যান্ডের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ও নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আজ দিল্লি থেকে মন জেলায় যাওয়ার চেষ্টা করে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জিতেন্দ্র সিংহের নেতৃত্বাধীন এআইসিসির প্রতিনিধি দল। কিন্তু যোরহাট বিমানবন্দর থেকে বেরোতেই দেওয়া হয়নি। তাঁরা বিমানবন্দরে ধর্নায় বসেন। রাহুল গাঁধী এর তীব্র নিন্দা করেন। জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, “মন জেলায় ১৪৪ ধারা জারি থাকলে নাগাল্যান্ড পুলিশ আমাদের আটকাতে পারত। কিন্তু অসম পুলিশ আমাদের যোরহাট বিমানবন্দর থেকেই বেরোতে দিচ্ছে না। নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেওয়ার কোনও যুক্তি নেই। হিমন্তবিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে বিজেপি উত্তর-পূর্বে গণতন্ত্র ধ্বংস করছে। বিজেপি প্রকৃত সত্য প্রকাশ করতে চায় না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy