Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Social Awareness

স্ক্রিনিং, ভ্রূণের পরীক্ষাই এসএমএ প্রতিরোধের অস্ত্র

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এসএমএন ওয়ান (সারভাইভাল মোটর নিউরন ওয়ান) জিনের ত্রুটিই এসএমএন প্রোটিন তৈরির বাধা। এই প্রোটিন দেহের মাংসপেশির সঞ্চালনকে নিয়ন্ত্রণ করে।

সম্মেলনে উপস্থিত এসএমএ আক্রান্তদের সঙ্গে আয়োজক এবং বক্তারা।

সম্মেলনে উপস্থিত এসএমএ আক্রান্তদের সঙ্গে আয়োজক এবং বক্তারা। —নিজস্ব চিত্র।

জয়তী রাহা
গুরুগ্রাম শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:২৭
Share: Save:

জিনঘটিত বিরল রোগ স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি (এসএমএ) আক্রান্তের সরকারি কোনও পরিসংখ্যান এ দেশে নেই। তবে সমীক্ষার তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, প্রতি দশ হাজার শিশুর এক জন এসএমএ আক্রান্ত। চিকিৎসকদের মতে, এই রোগ চিহ্নিতকরণের মূলত দু’টিই পদ্ধতি। এক, দম্পতির স্ক্রিনিং। তাঁরা দু’জনেই বাহক চিহ্নিত হলে মায়ের ভ্রূণ পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া, সে এসএমএ আক্রান্ত কি না। দুই, এসএমএ সন্দেহ করা হচ্ছে যে শিশুর, তার ডিএনএ পরীক্ষা করে রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। বিদেশে প্রস্তুত বহুমূল্য ওষুধ এখনও এ দেশের রোগীদের নাগালের বাইরে। এসএমএ-র স্ক্রিনিং হয় এসএসকেএম হাসপাতাল ছাড়াও বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। বেসরকারি ভাবে এর খরচ ৬-৭ হাজার টাকা বলে জানা যাচ্ছে।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এসএমএন ওয়ান (সারভাইভাল মোটর নিউরন ওয়ান) জিনের ত্রুটিই এসএমএন প্রোটিন তৈরির বাধা। এই প্রোটিন দেহের মাংসপেশির সঞ্চালনকে নিয়ন্ত্রণ করে। মানবদেহে প্রতিটি জিনের দু’টি কপি থাকে। কারও একটি এসএমএন কপির প্রোটিন উৎপাদনে ত্রুটি থাকলে এবং ওই জিনের অন্য কপিটি ঠিক থাকলে তিনি বাহক (ক্যারিয়ার) হিসেবে পরিচিত হন। জন্মগত এই ত্রুটি হয় আক্রান্তের বাবা এবং মা দু’জনেই এসএমএ বাহক হলে এবং তাঁদের দু’জনের থেকে এসএমএন-ওয়ানের দু’টি জিনই সে খারাপ পেলে।

এই রোগ নিয়ে সচেতনতার ধারা বজায় রাখা ও রোগের সাম্প্রতিক গবেষণা নিয়ে আলোচনায় সম্প্রতি গুরুগ্রামে আয়োজন হয়েছিল দু’দিন ব্যাপী জাতীয় সম্মেলন। রোগীর পরিবার, বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের নিয়ে আয়োজিত সম্মেলনের যৌথ আয়োজক এসএমএ রোগীদের সংগঠন ‘কিয়োর এসএমএ ইন্ডিয়া’ এবং ‘টাটা ইনস্টিটিউট ফর জেনেটিক্স অ্যান্ড সোসাইটি’। সেখানেই উঠে এল রোগ প্রতিরোধের উপায় এবং আক্রান্তের শিক্ষার অধিকারের মতো বিষয়।

‘সঞ্জয় গান্ধী পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর মেডিক্যাল জেনেটিক্সের শিক্ষক ও শিশুরোগের চিকিৎসক কৌশিক মণ্ডল জানাচ্ছেন, এসএমএ স্ক্রিনিংয়ে মলিকিউলার বা জেনেটিক পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। ওই পরীক্ষায় দম্পতির এক জন বাহক হলে দ্বিতীয় জনের পরীক্ষা আবশ্যিক। আর দু’জনেই বাহক হলে তাঁদের আসন্ন সন্তানের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে ২৫ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে ভ্রূণের ১২ সপ্তাহে প্লাসেন্টার অংশ নিয়ে কোরিয়োনিক ভিলাস স্যাম্পেলিং (সিভিএস) পরীক্ষা হয় বা ১৬ সপ্তাহে অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড পরীক্ষা করে এসএমএ আক্রান্ত কি না, জানা যায়।

তবে ডিএনএ ভিত্তিক এই পরীক্ষায় সিভিএস করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ভ্রূণের এসএমএ আছে জানা গেলে গর্ভপাত করার কথা বলছেন তাঁরা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দম্পতির একটি সন্তানের এসএমএ চিহ্নিত হলে পরবর্তী সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভ্রূণের পরীক্ষা করে নিতে হয়।

জন্মের আগে এসএমএ চিহ্নিত করে রোগ প্রতিরোধ করা না গেলে সেই শিশুটির শিক্ষার পূর্ণ অধিকারের দায়িত্ব রাষ্ট্র ও সমাজকে পালন করতে হবে। সম্মেলনে সেই প্রসঙ্গে উঠে এল ‘ইনক্লুসিভ এডুকেশন প্রোগ্রাম’ নিয়ে আলোচনা। যাতে অংশ নেন কলকাতার ইন্দাস ভ্যালি ওয়ার্ল্ড স্কুলের প্রিন্সিপাল রেশমা ভট্টাচার্য, সাউথ সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রিন্সিপাল শতাব্দী ভট্টাচার্য, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট অনিন্দিতা চট্টোপাধ্যায়-সহ অনেকে।

বক্তাদের পরামর্শ, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আছে, এমন বা অসুস্থ পড়ুয়াদের কখনওই বিশেষ নাম বা তকমা দিয়ে যেন চিহ্নিত করা না হয়। র‌্যাম্প, হুইলচেয়ার ব্যবহারযোগ্য শৌচাগার, যথেষ্ট আলো, উপযুক্ত ইনডোর গেমের পরিকাঠামোই শুধু ‘ইনক্লুসিভ এডুকেশন প্রোগ্রামে’র পক্ষে যথেষ্ট নয়। সংবেদনশীলতাও জরুরি। সেই সঙ্গে ‘সিমপ্যাথি’ নয়, ‘এমপ্যাথি’ অর্থাৎ সহমর্মিতা থাকুক পড়ুয়াদের প্রতি। কারণ, সহমর্মিতা আসে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে। ‘ইনক্লুসিভ এডুকেশন’ প্রোগ্রামের আওতায় শিক্ষক নিয়োগে নীতিগত পরিবর্তন আনার প্রস্তাবও ওঠে। এ জন্য হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন একাধিক বক্তা। তাঁদের মতে, এমন হলে পড়ুয়াদেরও মনে হবে, পড়াশোনার শেষে সম্মানের সঙ্গে কর্মনিয়োগও সম্ভব।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy