ফাইল চিত্র।
অযোধ্যার দেওয়ালে রামায়ণের ছবি। আর রামমন্দিরের ত্রিমাত্রিক ছবি নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে!
রামমন্দিরের শিলান্যাস ঘিরে এখন সাজ সাজ রব। প্রস্তুতিতে ফাঁক নেই এক চুলও। কিন্তু তার মধ্যেই কাঁটার মতো বিঁধছে সেই কোভিড।
রামলালার মন্দিরের সহকারী পুরোহিত প্রদীপ দাসের করোনা ধরা পড়ায় এমনিতেই রক্তচাপ বেড়েছে অযোধ্যা প্রশাসনের। কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়েছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অন্তত ১৫ জন পুলিশকর্মীর করোনা সংক্রমণ। সেই দুশ্চিন্তার মেঘ আরও গভীর করে গত ২৪ ঘণ্টায় অযোধ্যা জেলায় নতুন করে করোনা ধরা পড়েছে ১৪২ জনের। এখনও পর্যন্ত এক দিনে যা সর্বাধিক। ফলে মন্দির নিয়ে প্রচারের কাড়া-নাকড়ার মধ্যে মৃদু হলেও প্রশ্ন উঠছে, এই পরিস্থিতিতে ভূমিপূজার অনুষ্ঠান কেন? বিশেষত যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী-সহ বহু বয়স্ক ভিভিআইপি আমন্ত্রিত, সেখানে বিষয়টা ঝুঁকির হয়ে যাচ্ছে না কি?
করোনা-সঙ্কটের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধিকে ‘বুড়ো আঙুল দেখিয়ে’ প্রধানমন্ত্রী কেন শিলান্যাস অনুষ্ঠানে যাবেন, তা নিয়ে হাওয়া গরম হলেও আবার হিন্দুত্বের দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে নারাজ অধিকাংশ দলই। রামমন্দিরকে ভারতবাসীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা বলে আখ্যা দিয়ে তার শিলান্যাসকে স্বাগত জানিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ। শিবসেনা সুপ্রিমো উদ্ধব ঠাকরে ভূমিপূজায় আসতে চান। কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদের মতে, সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো উচিত অনুষ্ঠানে। আবার বিএসপি নেতা মায়াবতীর দাবি, অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো উচিত ছিল এক দলিত ধর্মগুরুকেও।
সুতরাং করোনার দাপট কাঁটা হলেও তা ম্লান করতে পারেনি মন্দির ঘিরে উদ্দীপনাকে। তিন দশক আগে মন্দিরের নকশা তৈরির দায়িত্ব বর্তেছিল যাঁর উপরে, সেই সোমপুরা এখন ৭৭ বছরের। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের কাছে তাঁর দাবি, শুরুতে যা পরিকল্পনা ছিল, শেষমেশ আড়ে-বহরে মন্দির হবে তার প্রায় দ্বিগুণ। তিনের বদলে চূড়া হবে ৫টি। আর মূল গর্ভগৃহের উপরে থাকবে শিখর। বাড়বে উচ্চতা। তিনি জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পরেই নকশা বদলের এই সিদ্ধান্ত।
আরও পড়ুন: রাফালে গাত্রদাহ দুই পড়শি দেশের
বংশানুক্রমে মন্দির নির্মাণের কাজই করে এসেছে সোমপুরার পরিবার। প্রায় দু’শো মন্দিরের নকশা করার কৃতিত্ব তাঁদের। তবে ‘রাম-জন্মভূমিতে’ মন্দিরের নকশা তৈরির দায়িত্ব পেয়ে তিনি আপ্লুত। ছেলে আশিসের সঙ্গে মিলে পণ করেছেন, নজরকাড়া মন্দির গড়ার। নকশায় সাম্প্রতিক বদল সেই কারণেই।
স্মৃতির ভেলায় ভেসে সোমপুরা বলছেন, ১৯৯০ সাল নাগাদ তাঁকে মন্দিরের নকশা করার কথা প্রথম বলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অধুনা প্রয়াত নেতা অশোক সিঙ্ঘল। তখন নিরাপত্তার কড়াকড়িতে রামলালার অস্থায়ী মন্দিরে কিছু সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জো ছিল না। ফলে যাবতীয় মাপজোক হাঁটার সময়ে পা গুনে। মন্দিরের প্রাথমিক নকশা তার উপরে ভিত্তি করেই। কিন্তু এখন জায়গার কমতি নেই। তার উপরে বেড়েছে সম্ভাব্য পুণ্যার্থীর সংখ্যা। সেই কারণেই নকশা বদলের সিদ্ধান্ত।
রাজস্থান থেকে আনা পাথর কেটে মন্দিরের স্তম্ভ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অংশ আজ বহু বছর ধরে তৈরি হয়েছে অযোধ্যায়। রাসায়নিক দিয়ে সেগুলি পরিস্কার করার কাজ শুরু হয়েছে অনেক আগেই। এখন অযোধ্যা জুড়ে নতুন রংয়ের পোঁচ। সরযূ নদীর তীরে রাম-কি-প্যারী ঘাটের পুরনো মন্দিরগুলি ফের উজ্জ্বল হয়ে উঠছে নতুন হলুদ রংয়ের প্রলেপে। ৫ অগস্ট হেলিকপ্টার থেকে নেমে যে কিলোমিটার তিনেক রাস্তা প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে যাওয়ার কথা, তার দু’পাশের সমস্ত বাড়ির দেওয়ালে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে রামায়ণের ছবি। কোনও দেওয়ালে সীতার স্বয়ংবরের ছবি, তো কোথাও হনুমানের।
সারা দেশের বিভিন্ন মন্দির আর তীর্থক্ষেত্র থেকে মাটি আসছে। রাস্তা ধরে ক্ষণে ক্ষণে সাইরেন বাজিয়ে ছুটছে পুলিশের গাড়ি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘুম ছুটেছে তাদের। এক স্থানীয় পুলিশকর্তা বলছিলেন, “এখন থেকে সারা বছরই নিরাপত্তার চাদরে মোড়া থাকবে এই তল্লাট। বিশেষত করে মন্দিরের আশেপাশে।”
রামমন্দির ঘিরে উদ্দীপনার আঁচ পৌঁছেছে ভিন্ দেশেও। অনাবাসী ভারতীয়দের একাংশের উদ্যোগে ৫ তারিখ নিউ ইয়র্কের বিখ্যাত টাইমস স্কোয়ারের বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ডে ভেসে উঠবেন ‘ধনুকধারী ভগবান রাম’। ত্রিমাত্রিক ছবি দেখা যাবে মন্দিরের প্রস্তাবিত নকশারও। তাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক দিকে উৎফুল্ল ভক্তকুল। অন্য দিকে কটাক্ষ, ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশে করোনা সব থেকে জোরালো কামড় তো বসিয়েছে নিউ ইয়র্কেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy