ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকায় ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাস সে দেশে পড়াশোনা করা ভারতীয় পড়ুয়াদের দেশে ফেরার ‘পরামর্শ’ জারি করেছিল। সেই অনুযায়ী মঙ্গলবার গভীর রাতে এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ বিমানে ২৪২ জন ভারতীয় দিল্লিতে ফিরেছেন।
ইউক্রেন থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে ফিরলেন ভারতীয়েরা। বুধবার নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। পিটিআই
স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের কিভ থেকে দিল্লির বিমান ভাড়া ৩০ থেকে ৩৫ হাজারের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। এখন সেই ভাড়ায় পৌঁছে গিয়েছে ৬২ হাজারে। সরাসরি বিমান না পেলে ঘুরপথে ভাড়া লাগছে ১ লক্ষ টাকার বেশি।
ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকায় ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাস সে দেশে পড়াশোনা করা ভারতীয় পড়ুয়াদের দেশে ফেরার ‘পরামর্শ’ জারি করেছিল। সেই অনুযায়ী মঙ্গলবার গভীর রাতে এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ বিমানে ২৪২ জন ভারতীয় দিল্লিতে ফিরেছেন। অধিকাংশই পড়ুয়া। মূলত ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়ছেন। দেশে ফিরলেও দ্বিগুণ বিমান ভাড়া গুণতে হওয়ায় পড়ুয়াদের বাবা-মায়েদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রের ছাত্রী রিয়া সাইনি নভেম্বরে ইউক্রেনের খারকিভ ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে এমবিবিএস পড়তে ভর্তি হয়েছেন। মঙ্গলবার গভীর রাতে রিয়াও দিল্লি ফিরেছেন। রিয়ার বাবা হরমেশ সাইনি বলেন, “এতটা বিমান ভাড়া গুণতে হচ্ছে। সরকারের একটু নজর দেওয়া উচিত।’’
রিয়ার বক্তব্য, ইউনিভার্সিটি বা খারকিভ শহরে তাঁরা কিছুই টের পাননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেও কোনও রকম উদ্বেগ ছিল না। হস্টেল থেকে মেট্রো রেলে চেপেই তাঁরা নিয়ম মাফিক
ক্যাম্পাসে পৌঁছে যেতেন। রাস্তাঘাটেও কোনও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি নজরে আসেনি। রিয়ার বক্তব্য, “বাড়ি থেকে বাবা-মা ফোন করলেই বরং বেশি উত্তেজনার আঁচ পাওয়া যেত। বাবা ফোন করলেই বলতেন, টিভিতে এই দেখাচ্ছে, ওই দেখাচ্ছে। কিন্তু আমরা ইউক্রেনে থেকে কিছুই
বুঝতে পারিনি।”
গুজরাতের সুরেন্দ্রনগরের প্রিয়াংশ কুমারও রিয়ার মতোই নভেম্বরে ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হন। তবে খারকিভে নয়। কিভ থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরের চের্নিভতসি-র বুকোভিনিয়ান স্টেট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে। বুধবার সুরেন্দ্রনগরের ট্রেন ধরার আগে প্রিয়াংশ বলেন, ‘‘আমাদের চিন্তা ছিল, ইউক্রেন থেকে ফিরে এলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে। তবে অনলাইন ক্লাস চালু হয়ে গিয়েছে। এটাই নিশ্চিন্ত।’’ প্রিয়াংশ, রিয়াদের বক্তব্য, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ থাকলেও ভাষার সমস্যার জন্য তা তাঁরা টের পাননি।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, পড়াশোনার ক্ষতি হবে ভেবেই অধিকাংশ পড়ুয়া ইউক্রেন থেকে ফিরতে রাজি ছিল না। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার দেরি না করে সাময়িক ভাবে পড়ুয়াদের ফিরে আসতে বলে। কারণ ২০১৪ সালেও একই ভাবে ইউক্রেনের বাহিনীর সঙ্গে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। তখন আপদকালীন পরিস্থিতিতে বিশেষ বিমান পাঠিয়ে পড়ুয়াদের উদ্ধার করতে হয়েছিল। এবার আগেভাগেই দূতাবাসের তরফে সমস্ত পড়ুয়াদের নাম, ফোন নম্বর, ই-মেল আইডি জোগাড় করে রাখা হয়েছিল।
ভারতীয় দূতাবাস সাময়িক ভাবে ইউক্রেন ছাড়ার পরামর্শ জারি করার পরে রিয়া ও তাঁর ভারতীয় সহপাঠীরা সোমবার রাতে বাসে চেপে ইউক্রেনের রাজধানী কিভের জন্য রওয়ানা হন। প্রায় সাত-আট ঘণ্টার বাসযাত্রার পরে কিভ পৌঁছন। তার পরে মঙ্গলবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যায় কিভ থেকে দিল্লির বিমান ধরেন। প্রিয়াংশ বলেন, “একেবারেই কোনও আতঙ্কের পরিবেশ ছিল না। শুধুমাত্র দূতাবাসের তরফে আপাতত দেশে ফেরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলেই আমরা ফিরে এলাম।”
দিল্লি ফেরা পড়ুয়ারা সকলেরই চিন্তা একটাই। তা হল, অনলাইন ক্লাস চালু হলেও প্র্যাকটিকাল ক্লাস ছাড়া এমবিবিএস-এর পড়াশোনায় ক্ষতি হবে। ফলে বেশিদিন এই পরিস্থিতি চললে মুশকিল। কেন এ দেশ থেকে এত পড়ুয়া ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে যাচ্ছেন? অভিভাবকদের ব্যাখ্যা, ভারতে বেসরকারি কলেজে ডাক্তারি পড়তে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা খরচ। সেখানে ইউক্রেনে ছয় বছরের কোর্সে একেবারে এমডি ডিগ্রি মেলে। খরচ পড়ে ৪০-৪৫ লক্ষ টাকা। পুরো পড়াশোনাই ইংরেজিতে। সে কারণেই স্বচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরা ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে যান। তবে এ দেশে ডাক্তারি করতে হলে ফের তাঁদের একটা পরীক্ষায় বসতে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy