ছবি: সংগৃহীত।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুম্বই থেকে ফেরার পর শিবসেনা মুখপত্র ‘সামনা’র প্রতিবেদন বলছে, ‘কংগ্রেস ছাড়া বিজেপি-বিরোধী জোট সম্ভব নয়। জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসকে দূরে সরিয়ে রাখলে ফ্যাসিস্ট শাসক দলের হাতই শক্তিশালী করা হবে।’ একই সুর শোনা গিয়েছে এনসিপি নেতা নবাব মালিকের গলাতেও।
গত কয়েক মাস ধরে সংসদের ভিতরে ও বাইরে কংগ্রেসের সঙ্গে সংঘাতের সুর ক্রমশ চড়িয়েছে তৃণমূল। সম্প্রতি মুম্বই গিয়ে মমতা ইউপিএ জোটকে ‘অস্তিত্বহীন’ বলে উল্লেখ করায় পাল্টা আসরে নেমেছে কংগ্রেসও। রাজনৈতিক শিবির বলছে, এর ফলে আসলে হাত শক্ত হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরই। মুম্বই গিয়ে শিবসেনা প্রধান তথা মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের পুত্র আদিত্য ঠাকরের সঙ্গে দেখাও করেছেন মমতা। দলীয় সূত্রের মতে, একটি অকংগ্রেসি আঞ্চলিক জোট গড়ার জন্য ধীরে ধীরে উদ্যোগী হচ্ছেন তিনি। যার নেতৃত্বের রাশ তাঁর হাতেই থাকবে।
এই পরিস্থিতিতে শিবসেনার মুখপত্রের প্রতিবেদনটিকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, “বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঘিনির মতো লড়াই করে জয়ী হয়েছেন। তাঁর লড়াইকে দেশ কুর্নিশ জানিয়েছে। মমতা বাংলা থেকে কংগ্রেস, বাম, বিজেপিকে সাফ করে দিয়েছেন। মোদী বা বিজেপি কংগ্রেসমুক্ত ভারত তৈরির চেষ্টা করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মোদী-বিরোধিতায় যাঁরা লড়ছেন, তাঁরাও কংগ্রেসের ধ্বংস চাইলে, সেটা বিপজ্জনক। জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের স্থান নেওয়ার চেষ্টা ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত হবে।’’ তবে এর পাশাপাশি, শিবসেনা পরোক্ষ ভাবে এ-ও বুঝিয়ে দিয়েছে যে, কংগ্রেসকে বিরোধী জোটের স্বাভাবিক নেতৃত্ব হিসেবে ধরে নেওয়ার কারণ নেই। প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘বিরোধীদের ঐক্য প্রয়োজন সবার আগে। নেতৃত্বের প্রশ্নটি পরে ঠিক হবে।’
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরে যথেষ্ট সাড়া পড়ছে বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে। বিরোধীদের অনেকেরই বক্তব্য, বিজেপির সঙ্গে ১০০টিরও বেশি আসনে সরাসরি কংগ্রেসের লড়াই রয়েছে। কোনও আঞ্চলিক দলের সেখানে দাঁত ফোটানোর অবকাশ নেই। ফলে মেঘালয় বা গোয়ার মতো রাজ্যে গিয়ে কংগ্রেসকে হীনবল করার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে তৃণমূল, তাতে আখেরে সুবিধা পাচ্ছে বিজেপি। এমতাবস্থায় শিবসেনার এই ‘ঝেড়ে কাশা’ বিরোধী ঐক্যের জন্য জরুরি ছিল। একই সুরে এনসিপি নেতা নবাব মালিকও শনিবার বলেন, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কোনও বিরোধী জোট সম্ভব নয়। তবে সেই জোটে ইউপি-এর বাইরের দলগুলিকেও শামিল করা দরকার। তাঁর দাবি, শরদ পওয়ারও এমনই মনে করেন। ‘‘বিরোধী সব দলকে এক জায়গায় আনতে হবে। পওয়ার সেই ব্যাপারে উদ্যোগী হতে প্রস্তুত।’’
অন্য দিকে তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “শিবসেনার রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাদের কংগ্রেসের সঙ্গে মহারাষ্ট্রে সরকার চালাতে হয়। আর সেই জায়গা থেকেই এমন মন্তব্য। আমাদের সঙ্গে কারও কোনও নির্বাচনী জোট নেই।” সুদীপবাবুর ব্যাখ্যা, “কংগ্রেস গোটা ভারতে নিজেদের মুখ্য বিকল্প হিসাবে তুলে ধরতে চাইলে সেই চেষ্টা করুক না! আমাদের বাধায় কী আসে যায়! যে যার নিজের মতো করে লড়ুক বিজেপির বিরুদ্ধে। আর তা ছাড়া বিজেপি-বিরোধী বিষয়গুলি যখন সামনে আসছে, আমরা তো সংসদে আর পাঁচটা বিরোধী দলের পাশে দাঁড়িয়েই আন্দোলন করছি। কোনও সমস্যা তো নেই।” পাশাপাশি তৃণমূল সূত্রের দাবি, সংসদে ১২ জন রাজ্যসভার সাংসদকে সাসপেন্ড করার বিষয়টি নিয়ে প্রত্যেক দিন তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন শিবসেনা সাংসদ। তৃণমূল নির্দেশিত পথেই তাঁরা আন্দোলন পরিচালনা করছেন বলে দাবি মমতার দলের।
মহারাষ্ট্রে শিবসেনা, কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে চলার বার্তা দিলেও, উত্তরপ্রদেশের প্রধান বিরোধী দল এসপি-র ছবিটা অবশ্য বিপরীত। অখিলেশ যাদব শুক্রবার বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে একুশে বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুছে দিয়েছেন, সে ভাবেই বাইশে তাঁরাও উত্তরপ্রদেশের মাটি থেকে শাসক দলকে নিশ্চিহ্ন করবেন। আরও এক পা এগিয়ে অখিলেশের বক্তব্য, লোকসভার ভোটে লড়ার জন্য তৃণমূলের নেতৃত্বে একটি বিকল্প ফ্রন্টে যোগ দিতে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। সেই সঙ্গে কংগ্রেসকে উড়িয়ে দিয়ে অখিলেশ বলেছেন, “মানুষই কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করবে। আসন্ন নির্বাচনে (উত্তরপ্রদেশে) তারা একটিও আসন পাবে না।” সিপিএমের মুখপত্র ‘পিপলস ডেমোক্র্যাসি’ আবার তৃণমূল এবং কংগ্রেস, উভয়কেই খোঁচা দিয়ে বলেছে, বিরোধী জোটের নেতা হয়ে ওঠার যে প্রয়াস এই দুই দল নিয়েছে, তা সফল হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy