Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
National

শোচনীয় হারে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে শর্মিলা চানু

এত দিনের ‘দেবী’কে কার্যত মাটিতে আছড়ে ফেললেন মণিপুরের মানুষ। অনশন ভাঙার পর থেকেই রাজনীতিতে নাম লেখানো ইরম শর্মিলার বিপক্ষে চলে গিয়েছিল মণিপুরের একটা বড় অংশ। বিশেষ করে এত দিনের সঙ্গী ‘ইমা’রা (মা) ও ‘মেইরা পইবি’ (মহিলা সংগঠন)।

ইরম শর্মিলা চানু।

ইরম শর্মিলা চানু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৭ ১৯:২৪
Share: Save:

এত দিনের ‘দেবী’কে কার্যত মাটিতে আছড়ে ফেললেন মণিপুরের মানুষ। অনশন ভাঙার পর থেকেই রাজনীতিতে নাম লেখানো ইরম শর্মিলার বিপক্ষে চলে গিয়েছিল মণিপুরের একটা বড় অংশ। বিশেষ করে এত দিনের সঙ্গী ‘ইমা’রা (মা) ও ‘মেইরা পইবি’ (মহিলা সংগঠন)। এ দিন ভোটের ফল দেখাল, থৌবালের মানুষ শর্মিলাকে ভোট দেওয়ার থেকে ‘নোটা’র বোতাম টেপাই বেশি শ্রেয় মনে করেছেন। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়তে নেমে শর্মিলা মাত্র ৯০টি ভোট পেলেন! সেখানে মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহ জিতলেন সবচেয়ে বেশি ১০,৪৭০ ভোটের ব্যবধানে।

১৬ বছরের অনশন ভাঙার পরে শর্মিলার সাইকেলে প্রচার, হুইসল মিছিল, অনলাইনে টাকা জোগাড় নিয়ে যত আগ্রহ ছিল, ভোটের ফল নিয়ে তার কণামাত্র ছিল না। কারণ সকলেই জানত, শর্মিলার পক্ষে তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী, দুঁদে বিধায়ক ইবোবিকে হারানো সম্ভব ছিল না।

শর্মিলার এত দিনের অনুগামীরা ও তাঁর পরিবার বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, রাজনীতির বাইরে থেকে সমাজ বদলের লড়াই লড়ে গেলে শর্মিলার জনসমর্থন অটুট থাকবে। কিন্তু অনশন ভাঙার কথা ঘোষণার পরে ইম্ফল জেলা আদালতে বসেই শর্মিলা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভোটে লড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সিদ্ধান্ত থেকে সরেননি। আগের শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে। পাশে পান নতুন সহযোদ্ধা মানবাধিকার কর্মী নাজিমা বিবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন কর্মী ইরেন্দ্র লেইচম্বামকে। কিন্তু শর্মিলার লড়াই জুড়ে ছিল শুধুই আবেগ। তাঁর ভোটযুদ্ধ নিয়ে মণিপুরের বাইরের মানুষ ও সংবাদমাধ্যম যতটা আগ্রহী ছিল, রাজ্যবাসীর মধ্যে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি।

কিন্তু তিনি যে মাত্র ৯০টি ভোট পাবেন, তা হয়তো কংগ্রেসও ভাবেনি। থৌবাল কেন্দ্রে জয়ী মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছেন ১৮,৬৪৯টি ভোট। নোটায় পড়েছে ১৪৩টি ভোট। এই ফলের জেরে শর্মিলার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

শর্মিলা আগে জানিয়েছিলেন, এই ভোটে হারলেও পরোয়া নেই। ২০১৯ সালের নির্বাচনের জন্য মানুষের চিন্তা-চেতনায় বদল আনার কাজ চালিয়ে যাবেন। কিন্তু এমন ফলে ভেঙে পড়ে তিনি এ দিন জানান, আর কখনও ভোটে লড়বেন না। বলেন, ‘‘এত অর্থবল ও পেশিশক্তির বিরুদ্ধে আমার লড়ার সামর্থ্য ছিল না। তবু চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আমি যে কাদের জন্য এত বছর লড়ছি, তাই জানি না। মানুষের যখন আগ্রহ নেই, তখন আর লড়ব না।’’

তাঁর আরও দুই সঙ্গী ইরেন্দ্র লেইচম্বাম ও নাজিমা বিবিও হেরেছেন। কবরের মাটি না মেলার ফতোয়া অগ্রাহ্য করে লড়া নাজিমা মাত্র ৯টি ভোট পেয়েছেন। তাঁর এখন দু’কুলই গেল। বাজেয়াপ্ত হবে জামানতও।

ভোটের আগে শর্মিলা জানিয়েছিলেন, হেরে গেলে প্রেমিক ডেসমন্ডকে বিয়ে করে বিদেশেই চলে যাবেন। কিন্তু সম্প্রতি ডেসমন্ড জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের আগে তিনি শর্মিলাকে বিয়ে করবেন না। তাই আজকের পরাজয়ের পরে রাজ্যে আরও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া শর্মিলার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ভবিষ্যতও অনিশ্চয়তায় ভরে গেল।

অন্য বিষয়গুলি:

Sharmila Chanu Manipur Assembly Elections, 2017
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE