আদানিকাণ্ডের তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের উপরই ভরসা রাখছেন পওয়ার। ফাইল চিত্র ।
আদানিকাণ্ডে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি)-র তদন্তের দাবিতে তিনি জোটসঙ্গী কংগ্রেসের সঙ্গে একমত নন। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের সমালোচনা করে এবং আদানি গোষ্ঠীর সমর্থনে কথা বলে শুক্রবার এমনটাই জানালেন মহারাষ্ট্রের বর্ষীয়ান নেতা শরদ পওয়ার।
‘এনডিটিভি’কে এক সাক্ষাৎকারে ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) প্রধান বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাথা ঘামানো হয়েছে। আদানিদের নিয়ে রিপোর্ট পেশ করার নেপথ্যে কি কোনও উদ্দেশ্য ছিল? হিন্ডেনবার্গের ব্যাপারে কখনও শুনিনি। ওদের বিশ্বাসযোগ্যাতা কী? একটি রিপোর্টের কারণে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনীতির উপর প্রভাব পড়েছে। আমরা এই বিষয়গুলিকে উপেক্ষা করতে পারি না। মনে হচ্ছে, দেশের একটি স্বতন্ত্র শিল্পগোষ্ঠীকে খারাপ করার চেষ্টা হয়েছে। তবে ওরা (আদানি গোষ্ঠী) যদি কোনও ভুল করে থাকে, তা হলে তার তদন্ত হওয়া উচিত। সংসদে জেপিসি তদন্তের দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন।’’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘অনেক বিষয়ে জেপিসি তদন্ত হয়েছিল। আমার মনে আছে একটি পানীয় নিয়ে এক বার জেপিসি নিয়োগ হয়েছিল এবং আমি ওই জেপিসির চেয়ারম্যান ছিলাম। এমন নয় যে, আগে কখনও জেপিসি গঠন করে তদন্ত হয়নি। জেপিসির দাবি ভুল নয়। তবে কেন জেপিসির দাবি জানানো হচ্ছে, তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা ভাল।’’
একই সঙ্গে পওয়ার এ-ও স্পষ্ট করেছেন যে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ‘আদানি-অম্বানী’ বলে বার বার সরকারকে ‘আক্রমণ’ করাকেও তিনি সমর্থন করেন না। এই আক্রমণ অর্থহীন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। পওয়ারের কথায়, ‘‘এ দেশে বহু বছর ধরে এমনটা হয়ে আসছে। আমরা যখন রাজনীতিতে আসি, তখন সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে টাটা-বিড়লার বিরুদ্ধে কথা বলতাম। কিন্তু পরে বুঝলাম, ভারতে টাটাদের অবদান অনস্বীকার্য। এখন ভাবি, কেন ওই ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে কেন আক্রমণ করতাম! কাউকে আক্রমণ করার মতো ছিল না বলেই টাটা-বিড়লাদের আক্রমণ করা হত। এখন টাটা-বিড়লার জায়গায় আদানি-অম্বানী এসেছে। তাই এখন সরকারকে আক্রমণ করতে হলে অম্বানী, আদানির নাম নেওয়া হয়। আদানি-অম্বানীরাও দেশের জন্য অনেক করেছে। কেউ যদি ভুল করেন, তা হলে গণতন্ত্রে তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার আছে। কিন্তু কোনও কারণ ছাড়া আক্রমণের মানে হয় না।’’
এনসিপি প্রধান আরও বলেন, ‘‘বিরোধীরা চেয়েছিল একটি সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত হোক। সংসদীয় কমিটি গঠন হলেও তার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সরকারের হাতেই থাকবে। তদন্তের জন্য নিযুক্ত কমিটিতে ক্ষমতাসীনদের প্রতিনিধি বেশি থাকবে। সে ক্ষেত্রে সত্যি যে প্রকাশ্যে আসবে এর কোনও মানে নেই।’’ তাই বিরোধীদের জেপিসি গঠন করে তদন্তের দাবিকে অযৌক্তিক বলেই মনে করছেন পওয়ার।
পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্ট এই ঘটনার সত্যাসত্য খুঁজে বার করতে এক জন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, এক জন বিশেষজ্ঞ, এক জন প্রশাসক এবং এক জন অর্থনীতিবিদকে নিয়ে কমিটি নিয়োগের যে নির্দেশ দিয়েছে, তাকে তিনি স্বাগত জানাচ্ছেন বলেও জানান পওয়ার। তাঁর কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্টকে কেউ প্রভাবিত করতে পারে না। যদি তারা তদন্ত পরিচালনা করে, তবে সত্য প্রকাশের সম্ভাবনা আরও বেশি। তাই, সুপ্রিম কোর্ট তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলার পরেও বিরোধীদের জেপিসি গঠনের দাবির কোনও গুরুত্ব নেই।’’
তা হলে কেন কংগ্রেস-সহ বাকি বিরোধীরা জেপিসি গঠন করে তদন্তের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন? এই সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি তোলার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের অভিপ্রায় কী? উত্তরে এনসিপি নেতা বলেন, ‘‘অভিপ্রায় কী ছিল, তা আমি বলতে পারি না। তবে আমি জানি যে, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারা নিযুক্ত কমিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক বার জেপিসি শুরু হলে, এর কার্যক্রম প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হবে। হয়তো কেউ চাইত যে, বিষয়টি দু’-চার মাস ধরে চলুক। তাই হয়তো এমন দাবি তোলা হয়েছিল। কিন্তু এতে কখনই সত্যি বেরিয়ে আসত না।’’
পওয়ার জানান, শুধু কংগ্রেস নয়, আদানিকাণ্ডে বাকি বিরোধীদেরও করা পদক্ষেপ সঠিক ছিল না। সরকার এবং বিরোধী দল— উভয় পক্ষ থেকেই এই সমস্যা সমাধানের সঠিক প্রচেষ্টা করা হয়নি বলেও মন্তব্য করেন বর্ষীয়ান নেতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy