Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Rath Yatra 2020

‘রথযাত্রা হলে প্রভু জগন্নাথ ক্ষমা করবেন না’

রথযাত্রায় দূরত্ববিধি লঙ্ঘন হওয়ার আশঙ্কায় ওড়িশার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেছিল।

এ বছর দেখা যাবে না এই দৃশ্য।—ফাইল চিত্র।

এ বছর দেখা যাবে না এই দৃশ্য।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২০ ০৫:২৭
Share: Save:

২৮৪ বছর আগের ইতিহাসের ছায়া ২০২০র কোভিড-ধ্বস্ত জমানার শ্রীক্ষেত্রে।

পুরীতে বরাবরের মতো ১০-১২ লক্ষ লোকের ভিড়ের আশঙ্কায় এ বারের রথযাত্রা বন্ধের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডে বৃহস্পতিবার বললেন, ‘‘এ বার রথযাত্রা হলে প্রভু জগন্নাথ আমাদের ক্ষমা করবেন না। সতর্কতা বিধি মেনে এ বার রথযাত্রা বন্ধ হোক।’’ ২৩ জুন রথযাত্রার দিন নির্ধারিত।

এই পরিস্থিতিতে সব দিক রক্ষায় সন্ধ্যায় ভুবনেশ্বরে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক বসে। আজ, শুক্রবার শ্রী মন্দিরের প্রধান সেবায়েত পুরীর গজপতি মহারাজের পুরীর শঙ্করাচার্যের দ্বারস্থ হওয়ার কথা।

রথযাত্রায় দূরত্ববিধি লঙ্ঘন হওয়ার আশঙ্কায় ওড়িশার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেছিল। ভুবনেশ্বর বা অন্যত্র আগেই অন্য সব রথযাত্রা বাতিল করার নির্দেশ দেয় উৎকল প্রশাসন। কিন্তু পুরীর শ্রীমন্দিরের রথের পরম্পরা নিয়ে ভাবাবেগ মাথায় রেখে বিষয়টি নিয়ে হ্যাঁ কিংবা না-র পথে হাঁটেনি নবীন পট্টনায়কের প্রশাসন। বরং কোভিড-আবহে চন্দনযাত্রা, স্নানযাত্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ আচারঅনুষ্ঠান ভক্তশূন্য অবস্থায় হয়েছে। রথযাত্রাও একই ভাবে করা সম্ভব বলে আশা দানা বাঁধছিল।

কোভিড-আতঙ্কে সুপ্রিম কোর্ট রথযাত্রা বানচাল করার পরে মন্দিরের প্রবীণ সেবায়েত তথা বড়গ্রাহী জগন্নাথ দয়িতাপতি এ দিন বলেন, ‘‘ওড়িশার ইতিহাসে এটা কলঙ্কের দিন। শুধু সেবায়েতরা রথ টানলে, সমস্যা হত না। কোটি কোটি লোক টিভিতে দেখত। রথ না হলে ভক্তহৃদয় কষ্ট পাবে। ওড়িশা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।’’ সুপ্রিম কোর্টে রথযাত্রায় ভক্ত সমাগম হলে চরম বিপর্যয় হবে বলে যাঁরা দাবি করেন, সেই সংগঠনের কর্তা সুরেন্দ্র পাণিগ্রাহী কিন্তু বলেন, ‘‘বিগ্রহ রথে তোলার সময়ে পাহুন্ডি বিজে, গুন্ডিচা মন্দিরে ছেরা পহরা, পরে প্রভু মন্দিরে ফিরলে নীলাদ্রি বিজে কিংবা রথের ভিতরে সেবায়েতরা বসার সময়ে বা রথ টানার সময়ে দূরত্ব রাখা যেত না।’’

ভুবনেশ্বরে জগন্নাথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সভাপতি সুরেন্দ্রনাথ দাসও মনে করেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে নবীন সরকার তাদের অবস্থান খোলসা করেনি। সে জন্যই সর্বোচ্চ আদালত এই সিদ্ধান্ত নিল।’’

রথ বাতিল হওয়ার ক্ষোভে মন্দিরের কোনও কোনও সেবায়েত সামাজিক মাধ্যমে এ-ও বলেছেন, নবীন প্রশাসন ইচ্ছে করে রথযাত্রা বন্ধের শরিক। ওড়িশার বিরোধী শিবিরও বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। মন্দিরের সরকার-নিযুক্ত মুখ্য প্রশাসক কৃষ্ণ কুমার বলেন, ‘‘কী ভাবে মন্দিরের সব নীতি (আচার) অটুট থাকবে তা দেখা হচ্ছে।’’

শেষ বার পুরীর রথ বন্ধ ছিল, ১৭৩৩-৩৬ সালে। সে-বার মরাঠা আক্রমণের সময়ে জনৈক সুবেদারের আগ্রাসনে তখনকার রাজা জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে নিয়ে গঞ্জামে চলে যান। সেখানকার একটি গ্রামে উদ্বাস্তু অবস্থায় রথের আচার সংক্ষেপে সম্পন্ন হয়। তারও আগে রাজ্যজয়ের চাপান-উতোর বা শত্রুর আক্রমণে কখনও রথ হয়নি পুরীতে। তবে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে রথ বাতিল হওয়া এই প্রথম। মুখ্য বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ পুরী বা ওড়িশার কোথাও রথযাত্রা বা রথকেন্দ্রিক সামাজিক অনুষ্ঠান নিষেধ করেছে।

মন্দির প্রশাসনের তরফে সেবায়েতদের সংখ্যা কমিয়ে রথের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেবায়েতদের কোভিড-পরীক্ষা করিয়ে বাড়িতে আলাদা রাখা হচ্ছিল। আপাতত রথযাত্রা নিয়ে আদালতের নির্দেশে সকলেই অনিশ্চয়তায়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy